ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

নিঃসঙ্গতা

গল্পগুলো জীবনের

নিঃসঙ্গতা

.

সাদিয়া সৌমিতা

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৬:৫৫ | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৫৫

অন্ধকার নেমে এসেছে শহরে। নিয়ন আলোয় আলোকিত হয়েছে রাস্তার মোড়ের দোকানগুলো। আকাশের গুম মেরে থাকা গুমট অবস্থা আর চারদিকের ভ্যাপসা গরম ইঙ্গিত দিচ্ছে– কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরজুড়ে বৃষ্টি নেমে এলোমেলো করে দেবে সাজানো সব নিয়ম। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এসব কথাই ভাবছে মাহিম। এরপর এলোমেলো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি নামল। যে যার মতো নিজ নীড়ে ফিরছে। মাহিমের ফেরার তাড়া নেই বলে আশপাশে তাকিয়ে মানুষের ছোটাছুটি দেখছে আর ফিরবেই বা কোথায়? এ শহরে তার একটা নীড় বলতে কিছু নেই। মানুষ কী অদ্ভুতভাবেই বাইরের প্রতিকূলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নীড়ে ফিরে যায়। যাদের সেই নীড় নেই তারা মাহিমের মতো সব প্রতিকূলতা গায়ে মাখায় কাকভেজা হয়ে ঘুরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে মাহিম বাসা ছেড়ে ঢাকায় এসেছে এই দুই মাস আগে; এরই মধ্যে শহরের যান্ত্রিকতায় হাঁপিয়ে উঠেছে সে। মাঝে মধ্যে দম বন্ধ অবস্থায় মাহিম ফিরে যেতে চায় তার ছেড়ে আসা জীবনে। যে জীবনটা ছিল রূপকথার মতো। বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ না দেখে মাহিম বৃষ্টির মধ্যেই হলে ফেরার জন্য উদ্যত হলো। তার গায়ে এসে বিঁধে যাচ্ছে শত সহস্র বৃষ্টির কণা। অথচ এই বৃষ্টি তার শরীর থেকে সব ক্লান্তি ধুয়ে দিচ্ছে না। এই বৃষ্টি তাকে আনন্দচ্ছল করে তুলছে না। এই বৃষ্টি তার বেদনারেখা প্রশমিত করতে পারছে না। এই বৃষ্টি শুধু শরীর ভেজায়। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার সক্ষমতা নেই। দু’মাস পরেও এই শহরটা মাহিমের কাছে যেমন আপন হতে পারেনি, শহরের মানুষগুলো যেমন কাছে হতে পারেনি, ঠিক তেমনি এ শহরের বৃষ্টি ও তাকে ছুঁয়ে যেতে পারেনি। হলে ফিরে মাহিম আপনজনহীন এই নিষ্ঠুর শহরে কোনোরকম নিঃশ্বাস চালিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ে। আগামীকাল আবার ক্লাস হচ্ছে, ক্লাস মানে আরেকটা ভয়ংকর অনুভূতি! গান কিংবা আড্ডার আসর কোনো জায়গায় নিজেকে মানানসই মনে হয় না তার। তাই ক্লাসে অন্য সহপাঠীর ভিড়ে কী ভয়ংকরভাবে একা হয়ে যায় সে! ক্লাস শুরু হওয়ার দু’মাস হলেও এখন কোনো বন্ধু বানাতে পারেনি অন্তর্মুখী স্বভাবের মাহিম। মানিয়ে নিতে পারেনি এই শহরের চালচলনের সঙ্গে। তাই সে কথা বলে ক্লাসের খালি পড়ে থাকা বেঞ্চের সঙ্গে, তাকে তার পরিবার এবং ফেলে আসা বন্ধুদের গল্প বলে। তার বিষণ্নতায় ভরা নিঃসঙ্গতার গল্প শোনায়; এ শহরের বৃষ্টিটাও কেমন পর পর লাগে– তার সেই অনুভূতির আখ্যান শোনায়। অদ্ভুতভাবে বেঞ্চটাও তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে; কারণ দিনশেষে তারা উভয়েই অবহেলিত, পরিত্যক্ত এবং নিঃসঙ্গ। এ শহরের কোনো মানুষ এখনও তার আপন হতে না পারলে কী হবে, ক্লাসের খালি বেঞ্চটা যে তার আপনজন হয়েছে সেটি ভেবেই মনে মনে হাসতে থাকে মাহিম। ভাবতে থাকে, হয়তো একদিন অন্যদের মতো এ শহরই আপন হবে; পরম আশ্রয় হয়ে উঠবে। 
সুহৃদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন