সময়ের দোলাচলে বহমান গল্প

.
সাগর মল্লিক
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৫৩
যখন বাংলার আকাশে ব্রিটিশ শাসনের তেজ গ্রীষ্মের মধ্য দুপুরের মতো তাপদাহ সৃষ্টি করেছিল, তখন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে মানুষের যাপিত জীবনের গল্পগুলো কেমন ছিল? গারো পাহাড়ের নিচে অবস্থিত বান্ধবপুরের মানুষকে উত্তপ্ত করেছিল? আমরা জানি না কী ঘটেছিল সেই সময়, কিন্তু কল্পনায় ভর করে যদি বিশ শতকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতে পারতাম, তবে সেসব গল্পের কিছুটা আঁচ করতে পারতাম। সেই সময়ের গল্প জানার জন্য নিজের কল্পনা চক্ষুকে উন্মোচন করতে হুমায়ূন আহমেদের ‘মধ্যাহ্ন’ উপন্যাস পড়া যেতে পারে। কারণ আমরা যখন ‘মধ্যাহ্ন’ উপন্যাস পড়ব, তখন দেখব ঠিক বিশ শতকের দোরগোড়ায় উপন্যাসের শুরু। হিন্দু অধ্যুষিত একটি এলাকা থেকে একঘর পরিবারকে পৃথককরণ; যা ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গকে ইঙ্গিত করে। ১৯০৫ সালে সমাজচ্যুত হওয়া সেই হরিচরণ সাহার অবস্থা ১৯৪৭-এ এসে কী হয়েছিল? ৪২ বছরের দীর্ঘ সময়ের সমাজব্যবস্থা, আর্থসামাজিক পরিবেশ, কুসংস্কার, বৈষম্য, ধর্মীয় বিদ্বেষ উঠে এসেছে এই গল্পের পরতে পরতে।
তাহলে কি উপন্যাসের মূল বিষয় ইতিহাস? না। ‘মধ্যাহ্ন’ উপন্যাসের মূল সুর মানুষের জীবন। ধর্মের জন্য জীবন নাকি জীবনের জন্য ধর্ম? সেই ব্যাখ্যা পাঠকের ওপর ন্যস্ত করে আমি বলতে চাই, মধ্যাহ্ন সেই জীবনের গল্প, যেখানে সময় এবং মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এই গল্প মধ্য দুপুরের উত্তপ্ত তেজের আর অপরাহ্ণের বিষণ্নতার। এই গল্প হরিচরণ সাহার গৃহী থেকে সন্ন্যাসী হওয়ার, এই গল্প জুলেখা বেগমের বেশ্যা থেকে নামকরা গায়কি হওয়ার, এই গল্প এক সাধারণ স্কুলমাস্টারের শিক্ষক থেকে বিপ্লবী হওয়ার। এই গল্প আমার দেশের দশজন প্রাকৃত মানুষের।
‘মধ্যাহ্ন’র দুই খণ্ড একত্রে ২০০৮ সালের মে মাসে প্রকাশ করে ‘অন্যপ্রকাশ’। সময়ের সঙ্গে জীবনের যে ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস সেই গল্পের নাম ‘মধ্যাহ্ন’।
সুহৃদ ঢাকা