ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

সম্পর্ক কিংবা দ্বন্দ্বের ক্যানভাস

সম্পর্ক কিংবা দ্বন্দ্বের ক্যানভাস

.

নূর আঁখি

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৫৪

মধ্যাহ্নের সময় ১৯০৫ সাল, যখন ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন চলছে, ইংরেজ কর্তা তখন লর্ড কার্জন। ইংরেজি সাহিত্যে তখন আধুনিক যুগ। আইনস্টাইন তখন নোবেল পেতে যাচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও জার্মানির যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি। একদিকে বিজ্ঞান ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে সময়। অন্যদিকে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও যুদ্ধবিগ্রহে অস্থির বিশ্ব। এ রকম সময়ে ভারতবর্ষের একটি সমাজজীবনের তৎকালীন ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কূপমণ্ডূকতার বাস্তব চিত্র গভীরভাবে ফুটে উঠেছে হুমায়ূন আহমেদের ‘মধ্যাহ্ন’ রচনায়।
উপন্যাসের সব চরিত্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করে আছে দুই চরিত্র হরিচরণ সাহা ও মাওলানা ইদ্রিস। প্রৌঢ় হিন্দু ব্যবসায়ী হরিচরণ তাঁর পুকুরঘাটে বসে একটি বাচ্চা পানিতে ডুবে যাচ্ছে দেখে বাচ্চাটির জীবন বাঁচান। ঘটনাটি তাঁর স্বপ্নের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। বাচ্চাটিকে তিনি শ্রীকৃষ্ণের আরেক রূপ মনে করে গভীর মমতায় কোলে তুলে ঠাকুর ঘরে বসে প্রার্থনায়রত হন। মুসলিম বাচ্চাকে ঠাকুরঘরে প্রবেশ করানোর ফলে জমিদার শশাঙ্কের বৈঠকে হরিচরণকে সমাজচ্যুত করা হয়। অন্যদিকে, মাওলানা ইদ্রিস হরিচরণের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ায় ধনু শেখ তাঁকে একঘরে করে রাখলেও হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা রুখতে ইমাম নেয়ামতের আমন্ত্রণে মাওলানা জুমার পর কোরআনের আয়াত স্মরণ করেন, ‘পৃথিবীর সবাইকে একই পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করে বিভক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন জাতে ও গোত্রে...।’
শশাঙ্কের মৃত্যুতে মুখাগ্নি করতে কেউ রাজি না হলে মাওলানা এগিয়ে আসেন। ফতোয়া দেওয়া হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এদিকে লাবুস এর প্রতিবাদ জানায়। লাবুসের মুখে হুমায়ূন আহমেদ বলেন, ‘দুধের কোনো হিন্দু-মুসলমান নাই। হিন্দু-মুসলমান মানুষের চিন্তায়...।’ 
এ রচনায় হরিচরণ সাহা ও মাওলানা ইদ্রিসের আদলে লেখক মূলত বৃহত্তর প্রেক্ষাপট বিবেচনায় হিন্দু ও মুসলিম সম্পর্কের কিংবা দ্বন্দ্বের একটি বৃহৎ চিত্র এঁকেছেন। এখানে জীবনের জন্য ধর্ম নাকি ধর্মের জন্য জীবন? কিংবা মানব সেবাই কি উত্তম ধর্ম? এ প্রশ্নগুলোই গভীর হয়ে উঠেছে। 
সুহৃদ ঢাকা

আরও পড়ুন

×