ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

সুহৃদ পাঠচক্র

জীবন বাস্তবতার অ্যাখান

জীবন বাস্তবতার অ্যাখান

সমকাল সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সুহৃদ পাঠচক্র শেষে আলোচক ও অতিথিদের সঙ্গে ঢাকার সুহৃদরা ছবি: মামুনুর রশিদ

শাকুর মাজিদ

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৫৫

সমকাল সুহৃদ সমাবেশ ঢাকা কেন্দ্রীয় কমিটি ২৫ নভেম্বর সমকাল সভাকক্ষে আয়োজন করে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস ‘মধ্যাহ্ন’। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন লেখক, স্থপতি, নির্মাতা ও চিত্রগ্রাহক শাকুর মজিদ। সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সমকালের উপ-সম্পাদক মাহবুব আজীজ, প্ল্যানিং এডিটর ফারুক ওয়াসিফ, সহযোগী সম্পাদক শেখ রোকন, হেড অব ইভেন্ট হাসান জাকির,  জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক হামিম কামাল প্রমুখ। সুহৃদ বিভাগীয় সম্পাদক আসাদুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পাঠপ্রতিক্রিয়ায় অংশ নেন ঢাকার সুহৃদরা। প্রধান আলোচকের লেখা ও সুহৃদদের পাঠপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আয়োজন
হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ার আগে আমাদের পড়াশোনার কেন্দ্রে ছিল ভারতীয় কিছু বই। আমার প্রিয় লেখক ছিল শংকর ও ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়। তাদের বই পড়ার পর হুমায়ূন আহমেদের বই যখন পড়া শুরু করি, তখন যে বইটা হাতে আসে সেটি হলো ‘শঙ্খনীল কারাগার’; যা পরার পর থেকেই আমি হুমায়ূন আহমেদের নিয়মিত পাঠক হই। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের পাঠক থাকি। নব্বই দশকের পর আমি হুমায়ূন আহমেদের লেখা থেকে কিছুটা বিমুখ হই। কারণ কিছু বই লেখার পরই তিনি ওই সময়ের প্রকাশকদের অনুরোধে এমন সব লেখা শুরু করলেন; যা আগে প্রকাশিত গল্পের প্রায় কাছাকাছি। তিনি হয়তো বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন এবং এরপর থেকে হুমায়ূন আহমেদ বৈচিত্র্যময় সুন্দর উপন্যাস তৈরিতে সচেষ্ট হন। তাঁর মাথায় আসে নতুন নতুন কিছু বিষয়। তিনি কাজ শুরু করেন। একটা বড় ক্যানভাস নিয়ে ও বড় আকারের সূচনা করেন, যার প্রত্যক্ষ উদাহরণ হচ্ছে ‘মধ্যাহ্ন’। ‘মধ্যাহ্ন’ ছিল ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত একটি উপন্যাস। হুমায়ূন আহমেদ নিজে কখনও এটিকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলেননি। তবে পাঠক এই সৃষ্টিকে ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করেছেন। হুমায়ূন আহমেদ কখনও জ্ঞান দেওয়ার জন্য লিখতেন না। মূলত একজন লেখকের কাজ হচ্ছে তাঁর কালটাকে বিস্তৃত করে উপস্থাপিত করা। তিনি তা-ই করেছেন। তিনি ১৭৭টি উপন্যাস রচনা করেছেন। আমাকে যদি বলা হয় উপন্যাসটির অবস্থান কোথায়– তাহলে ‘মধ্যাহ্ন’কে তাঁর রচিত এসব উপন্যাসের সেরা পাঁচের মধ্যেই রাখব।
এ উপন্যাসে মানুষ আছে। প্রকৃতি আছে। বৈচিত্র্যময় চরিত্র আছে। এখানে কাল আছে, অর্থাৎ ঘটনাটা কোন সময় ঘটে– শীতকাল, বর্ষাকাল না গ্রীষ্মকালে এবং কোনটার রূপ কেমন, মানুষের চরিত্র কেমন, পোশাক কেমন, মানুষরা কী খেত, মানুষ কত টাকায় চাল কিনত, হরেক রকম মানুষ আছে এতে, মানুষের শ্রেণিবিন্যাস আছে। এ বিষয়গুলো এখানে বিস্তৃতভাবে দেওয়া হয়েছে। অসাধারণ নৈপুণ্যে তিনি উপন্যাসের শুরুতেই শেষ দৃশ্যটা ফুটিয়ে তুলেছেন। এখানে কতগুলো সনাতন ধর্মের চরিত্র আছে, আছে মুসলমান চরিত্র, আছে কতগুলো ধনী লোকের চরিত্র। চরিত্রগুলো তিনি বৈচিত্র্যময় রূপে ফুটিয়ে তুলেছেন। ১৯০৫ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কিংবা তার চেয়েও বিস্তৃত সময়টাকে তিনি তুলে ধরেছেন। 
লেখক সেই সময়টাকে বর্ণনা এবং চরিত্রগুলোর মাধ্যমে তৎকালীন জীবন বাস্তবতার গল্পকে বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন। চরিত্রগুলোর প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে যত ধরনের সংঘাত সৃষ্টি করা প্রয়োজন তিনি করেছেন। তিনি জানেন পাঠকমনে কৌতূহল জাগ্রত না করতে পারলে আগ্রহ ধরে রাখা কঠিন।
উপন্যাসটির শেষের অংশে একটা কথা তিনি লিখেছেন, ‘হিন্দু বাড়িতে শাঁখ বাজে, ঘণ্টা বাজে বড়ই আনন্দময় সময়।’ পরের পাতায় শেষ লাইনে একজন হিন্দু ও একজন মুসলিম পরিবারের সদস্যের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, পুকুরঘাট থেকে যে সুরধ্বনি বের হয়ে আসছে তার জন্ম এই পৃথিবীতে নয়, অন্য কোনো খানে।’ তাঁর এই শেষ করাটা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই শেষের লাইন থেকেই আরেকটা নতুন ঘটনার উপন্যাস তৈরি করা যায়। হুমায়ূন আহমেদের বর্ণনার যে বৈশিষ্ট্য ও জাদুকরি একটি বিষয় আছে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
হুমায়ূন আহমেদ তরুণ পাঠকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর এ বইটি নিয়ে আয়োজিত সুহৃদের পাঠচক্র সত্যি অসাধারণ ছিল। তারুণ্যের প্ল্যাটফর্ম সুহৃদ সমাবেশের নিয়মিত এ আয়োজন অব্যাহত থাকুক। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার এই প্রচেষ্টা সফল হোক। 
লেখক, স্থপতি ও নির্মাতা 

আরও পড়ুন

×