এক দিনের সিইও ‘স্বপ্নবাজ’ মালেকা
মালেকা আক্তার
হিল্লোল চৌধুরী
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১৬:৪০ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৪২
১৭ বছরের কিশোরী মালেকা আক্তার। এইচএসসি পেরিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতি। তবে আর দশজনের মতো স্মার্টফোনে ডুবে থাকা বা পাঠ্যবইয়ের পাতায় আটকে নেই সে। কাজ করে যাচ্ছে নিজের ও চারপাশের কিশোরীদের উন্নয়নে।
মালেকা বলে, ‘মেয়েরা স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়। প্রত্যে মেয়েরই স্বপ্নবাজ হওয়া উচিত। আমি একজন স্বপ্নবাজ। জীবনে যা-ই হোক সফল হতে হবে। এমনভাবেই সফল হতে হবে যেন আমি প্রত্যেকের কাছেই একজন রোল মডেল হয়ে থাকতে পারি।’
সম্প্রতি টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনে এক দিনের জন্য প্রধান নির্বাহী (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে মালেকা। যোগ দেয় প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড মিটিংয়েও। গত ১১ অক্টোবর ছিল ‘আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস’। দিবসটি উপলক্ষে প্রতীকী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গ্রামীণফোন।
‘আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস’ উপলক্ষে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে একজন কিশোরীকে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহীর ভূমিকা পালন করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর পেছনে উদ্দেশ্য সম্পর্কে গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, ‘‘একটি দায়িত্বশীল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণফোন বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়। আমাদের অবিচল প্রতিশ্রুতি পূরণের বহিঃপ্রকাশ এ ‘গার্লস টেক ওভার’ উদ্যোগ। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যেখানে কিশোরীদের নানা রকম বাধা ও বঞ্চনার মুখোমুখি হতে হয়, সেখানে এই বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা আরও বেশি প্রয়োজন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামীণফোনের প্রতীকী সিইও হিসেবে মালেকার নিয়োগ শুধু এক দিনের ঘটনা নয়; আমাদের পক্ষে আসলে কী করা সম্ভব, এটা তারই প্রতিফলন। যখন অন্য কিশোরীরা দেখবে মালেকা সব বাধা কাটিয়ে উঠে তার অবস্থানে ভালো করছে, তারাও সক্ষমতা অর্জন করতে উৎসাহিত হবে। এ উদ্যোগ ক্ষমতায়নের প্রতীক।’
মালেকা আক্তার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ইয়ুথ অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করছে। নেতৃত্ব দিচ্ছে ৫০ জনের একটি দলকে। উৎসাহিত করছে নিজের চারপাশের কিশোরীদের। গ্রামীণফোনের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে মালেকা বলে, ‘আমরা বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানের সিইওদের সম্পর্কে শুনি আর তাদের কাজ দেখে বিস্মিত হই। একদম প্রান্তিক পর্যায় থেকে উঠে আসা আমার মতো কারও জন্য এ ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করা সত্যিই অবিশ্বাস্য।’ সে আরও জানায়, ‘গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আর কৌশলগত মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে সিইও কীভাবে অংশ নেন– জানতে পেরে আমার সবচেয়ে বেশি অবাক লেগেছে। এ থেকে আমি বুঝতে পেরেছি, এ ভূমিকার জন্য প্রাথমিকভাবে লক্ষ্যে স্থির থাকা, সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; এ ক্ষেত্রে লিঙ্গ পরিচয় কোনো জরুরি বিষয় নয়। এ অভিজ্ঞতা জীবন বদলে দেওয়ার মতো শিক্ষা দিয়েছে।’