ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

মজুরিতে অধিকার কতটুকু

মজুরিতে অধিকার কতটুকু

বনশ্রী মিত্র নিয়োগী ডিরেক্টর-প্রোগ্রামস মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

বনশ্রী মিত্র নিয়োগী ডিরেক্টর-প্রোগ্রামস মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১৬:৪৮ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৪৮

ঘরের কাজের কোনো দাম নেই; কিন্তু মূল্য অনেক, যা এ সমাজব্যবস্থা বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকে। গৃহস্থালির সব ধরনের কাজ, বাচ্চাদের দেখাশোনা, পড়াশোনা, বড় করে তোলা, পরিবারের বয়স্কদের যত্ন, দৈনন্দিন সবজি বাজার, বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, নিয়ে আসা, এমন কি গৃহাভ্যন্তরে নারীর কৃষিকাজ, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন– সবই নারীর কাজ হিসেবে সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে এ সমাজব্যবস্থা। সব অর্থনৈতিক কাজ, অর্থ উপার্জন পুরুষ সদস্যের মূল কাজ। কাজের এই বিভাজন পরিবার ও সমাজে নারীকে অধস্তন অবস্থানে রেখেছে। কারণ, এসব কাজের বিনিময়ে পরিবারে কোনো অর্থ আসে না।
যুগ পাল্টেছে, সমাজ এগিয়ে গেছে অনেক দূর। একজন কর্মজীবী নারী হোক গৃহকর্মী, ব্যাংকার, এনজিও বা সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, খেলোয়াড় বা দিনমজুর– সবাইকেই প্রতিনিয়ত লড়ে যেতে হয়। অথচ দিনের পর দিন নারী ঘরে-বাইরে এত যে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন, এর সিংহভাগ নারীই পরিবারে বা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে না পাচ্ছেন এর মর্যাদা-সম্মান, না অধিকার। সেই সঙ্গে আছে নানা ধরনের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন এবং ক্ষেত্রবিশেষে যৌন নির্যাতন বা হয়রানি। ঠিক এ কারণেই গৃহকর্মীকে আমরা তাঁর যথাযথ মর্যাদা বা মজুরি দিতে কুণ্ঠা বোধ করি। খুবই অবাক লাগে ভাবতে, যে গৃহকর্মী সারাদিন আমার বাচ্চার যত্ন করে, তাঁকে আমি আমার বিছানায় বসতে, টেবিলে খেতে দিতে ইতস্তত করি। পরিবারের নারী সদস্য কাজ করলে কোনো টাকা লাগে না; তাই যখন আমি বাসার কাজের লোক হিসেবে একজন নারীকেই নিয়োগ দিই, তখন তাঁকে যথাসম্ভব কম বেতনে রাখতে চাই, আর যত পারি খাটিয়ে নিই। অধিকার হিসেবে দেখা তো অনেক দূরের বিষয়। ঘরের কাজ এখনও কাজ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি, আসেনি কোনো আইনি কাঠামোতে। শুধু বেসরকারি অধিকারবিষয়ক সংগঠনগুলোর অনবরত প্রচেষ্টায় একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার; যা হয়তো বা ৯০ শতাংশ মানুষেরই জানা নেই। অথচ আমাদের গৃহকর্মীর প্রতি আচরণ কেমন হবে এবং তাঁর অধিকার সম্পর্কে ‌‍গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালায় সহজ ও পরিষ্কারভাবে বলা আছে।
গৃহকর্মীরা তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে যেমন সচেতন নন, তেমনি আমরাও এ বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রে অবহেলা বা অস্বীকার করি। দায়িত্ব নিয়ে সততার সঙ্গে আমাদের পরিবারের সব কাজ যিনি করেন, তাঁর সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকলেও তিনি আমাদের পরিবারের সদস্য। তাঁর প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। ঘরের কাজে নিয়োজিত বিশাল নারী জনগোষ্ঠী শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে এত দিনেও নিশ্চিত হয়নি অধিকার এবং কর্মপরিবেশ। সার্বিকভাবে গৃহস্থালি কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই। গৃহকর্মীর অধিকার, কাজের স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। 
 

আরও পড়ুন