ঢাকা বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩

ভ্রাম্যমাণ ক্রীড়া লাইব্রেরি

ভ্রাম্যমাণ ক্রীড়া লাইব্রেরি

ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, ক্রিকেটের জন্য ক্রীড়া সরঞ্জামে সজ্জিত বাহন এই ভ্রাম্যমাণ ক্রীড়া লাইব্রেরি

জিলফুল মুরাদ

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১৬:৪৯ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৪৯

কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী মায়াদেবী চাকমা। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পর জানতে চাইলাম, তোমার স্বপ্ন কী? খানিকটা সংকোচ নিয়ে মুখ লুকিয়ে ফেলল। এ মেয়েটি যখন খেলার মাঠে ফুটবল পায়ে ছুটে চলে, তখন তাকে অন্যভাবে আবিষ্কার করা যায়। যেন গর্জে ওঠা দুরন্ত এক ফুটবলার। সব বাধা ডিঙ্গিয়ে ছুটে চলে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করতে। থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ফুটবল দলের অধিনায়কও সে। সম্প্রতি উপজেলা পর্যায়ের ফুটবল খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয় তার দল।
মায়াদেবীর স্বপ্ন, জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে– সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে ২-৩ দিন প্রশিক্ষণ নেয় সে। মায়াদেবী চাকমা জানায়, ‘আমি ও আমার দল সপ্তাহে দুই দিন খেলাধুলার চর্চা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। আমরা সবাই এই ভ্রাম্যমাণ ক্রীড়া লাইব্রেরির জন্য অপেক্ষা করে থাকি। প্রশিক্ষক খুবই যত্নসহকারে আমাদের খেলাধুলার খুঁটিনাটিগুলো শিখিয়ে দেন। আমরা খেলাধুলার সামগ্রীর সঙ্গে কলা ও ডিমের মতো পুষ্টিকর খাবার পাই।’
শুধু মায়াদেবীই নয়, উখিয়ার বিভিন্ন স্কুলের এমন হাজারো ছাত্রছাত্রী নানা খেলাধুলার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করছে শারীরিক ও মানসিকভাবে। উখিয়ার শিশু-কিশোরদের জন্য যৌথভাবে এই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে ফরাসি ফুটবল ক্লাব পিএসজি, বিশ্বব্যাপী ক্রীড়ার মাধ্যমে শরণার্থীদের সাহায্যকারী ডাচ ফাউন্ডেশন ক্লাব এবং সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ। প্রতিষ্ঠানগুলো উখিয়ায় ভ্রাম্যমাণ ক্রীড়া লাইব্রেরি চালু করেছে। ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, ক্রিকেটের জন্য ক্রীড়া সরঞ্জামে সজ্জিত একটি বাহন এই ভ্রাম্যমাণ ক্রীড়া লাইব্রেরি। খেলাধুলার সামগ্রী যেমন– জার্সি, হাফপ্যান্ট, মোজা, বুট, জুতা, র‌্যাকেট, প্রশিক্ষণ উপকরণ, বল ইত্যাদি শিশুদের খেলতে দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছে এই বাহনে। খেলাধুলার সরঞ্জাম ছাড়াও এতে রয়েছে সৌরচালিত টিভি স্ক্রিন। এর মাধ্যমে খেলাধুলার ম্যাচ, হাইলাইট, সাক্ষাৎকার এবং অন্যান্য ভিডিও সম্প্রচার করা হয়। এই লাইব্রেরির মাধ্যমে উখিয়ার স্থানীয় ও রোহিঙ্গা শিশুরা খেলাধুলাসহ অন্য সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে পারে। 
ফ্রেন্ডশিপের ইনক্লুসিভ সিটিজেনশিপ বিভাগের উপপরিচালক আহমেদ তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ক্রীড়া। আমাদের অংশীজনদের সহযোগিতায় এটি আমরা ভিন্ন আঙ্গিকে শুরু করেছি। এই ভ্রাম্যমাণ ক্রীড়া লাইব্রেরি একই সঙ্গে শিশুদের আনন্দ দেবে এবং বিকাশেও সহযোগিতা করবে। বিশেষ করে মেয়েদের নানামুখী প্রতিবন্ধকতা ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার একটি প্রয়াস এই ভ্রাম্যমাণ ক্রীড়া লাইব্রেরি।’ 
উখিয়ার ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৮৪১ ছাত্রছাত্রী এই ভ্রাম্যমাণ ক্রীড়া লাইব্রেরির নিবন্ধিত সদস্য। এর মধ্যে ৪১৩ জন ছাত্রী রয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা এই লাইব্রেরির সুবিধা গ্রহণ করে। সপ্তাহ ঘুরে একেক দিন একেক স্কুলে গিয়ে ক্রীড়াসামগ্রী প্রদান ও খেলাধুলার আয়োজন করে এ লাইব্রেরি। খেলা শেষে আবার সেগুলো ফেরত নিয়ে পরিষ্কার করে পরের দিন অন্য কোনো স্কুলে যায়। প্রতিটি স্কুলে আলাদা আলাদা দল রয়েছে। দলভিত্তিক ক্রীড়াসামগ্রী খেলার জন্য দেওয়া হয়। দু’জন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। একজন নারী সহায়ক রয়েছেন, যিনি মেয়েদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য কাজ করেন।
এই ভ্রাম্যমাণ ক্রীড়া লাইব্রেরির একজন প্রশিক্ষক হচ্ছেন সাকান চাকমা। তিনি শিশুদের হাতেকলমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেন। তিনি বলেন, ‘এসব শিশুর ভেতরে একটি দৃঢ় স্বপ্ন রয়েছে। আমরা একটু উৎসাহ আর সহযোগিতা করতে পারলে তারাই হয়তো একদিন দেশের নাম বিশ্বদরবারে উজ্জ্বল করতে সক্ষম হবে। অনেক কিশোর-কিশোরী রয়েছে, যারা কেউ কেউ ফুটবল, কেউ ক্রিকেটে বেশ ভালো প্রতিভাবান। আমি আশা করি, এখান থেকেই আগামীদিনের জাতীয় দলের খেলোয়াড় তৈরি হবে।’ 

আরও পড়ুন