ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

আইনি পরামর্শ

সম্পর্ক ভাঙতে গেলে হুমকি দিচ্ছেন

সম্পর্ক ভাঙতে গেলে হুমকি দিচ্ছেন

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান

সাদিয়া আরমান

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৮:৩২

আমার বয়স ২২। বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষে পড়ছি। পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম চাকরি করি। সেখানে এক সহকর্মীর সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরবর্তী সময়ে দু’জনের সম্মতিতে আমরা কয়েকবার অন্তরঙ্গ হই। তিনি বিবাহিত। বয়সেও আমার চেয়ে অনেক বড়। এক পর্যায়ে দু’জন মিলেই সিদ্ধান্ত নিই– আমরা এ সম্পর্ক আর রাখব না। কিন্তু এখন তিনি সম্পর্ক ভাঙতে রাজি নন। নানাভাবে আমাকে হুমকি দিচ্ছেন। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয় দেখাচ্ছেন। এখন আমি আইনগত কোনো প্রতিকার কি পেতে পারি?
সেলিম (ছদ্মনাম), ঢাকা


প্রিয় সেলিম
যৌন অপরাধ বা সীমা লঙ্ঘনগুলো আমাদের সমাজব্যবস্থায় এবং দেশীয় আইনে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত হয়ে এসেছে, সাধারণত একজন পুরুষ অপরাধীর কাছ থেকে অপরাধের শিকার একজন নারীকে বাঁচানোর জন্য আইনগত ধারা প্রণয়ন করার মাধ্যমে সংজ্ঞাগুলো তৈরি করা হয়েছে।  
প্রথমেই আপনাদের দু’জনের সম্পর্ক এবং অবস্থানকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, ওই নারী আরেকজনের স্ত্রী। দণ্ডবিধির ধারা ৪৯৭ বলছে, যদি কোনো ব্যক্তি, অন্য লোকের স্ত্রী, এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে উক্ত অন্য লোকের সম্মতি বা সমর্থন ব্যতিরেকে যৌনসঙ্গম করে; যা ধর্ষণ নয়, তাহলে ওই ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধে দোষী এবং তিনি পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডণীয় হবেন। এ ক্ষেত্রে ওই নারী অপরাধের সহায়তাকারিনী হিসেবে দণ্ডনীয় হবেন না। আপনি এই ধারা অনুযায়ী অপরাধ করেছেন। তবে ওই নারী দণ্ডিত হবেন না।
আপনি এই সম্পর্কের ইতি টানতে চান, কিন্তু ওই নারী এতে রাজি নন। এখানে তিনি নানা হুমকি এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে আপনাকে যৌন সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। দণ্ডবিধির ৫০৩ ধারা অনুযায়ী, যে ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে আতঙ্কিত করার লক্ষ্যে তার দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, তা অপরাধমূলক। 
আপনার সহকর্মী আপনাকে তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে চাপ দিচ্ছেন, যেটা করতে আপনি বাধ্য নন এবং না করলে সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন, তাহলে তিনি উক্ত ধারা অনুযায়ী একটি অপরাধ সংঘটিত করেছেন। আরেকটি ব্যাপার হলো, যে কোনো কর্ম যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে সে অপরাধ সম্পন্ন করার চেষ্টাও (অ্যাটেম্পট) একটি সমান অপরাধ। আপনাদের মধ্যে যেসব ব্যভিচারের ঘটনা দু’জনের ইচ্ছায় ঘটেছে, সেগুলো ছাড়া পরবর্তী সময়ে যে ঘটনা ঘটানোর জোরপূর্বক চেষ্টা চালানো হচ্ছে, সেগুলো ‘ব্যভিচার ঘটানোর চেষ্টা’তে অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া আপনি একটি অফিসে কর্মরত আছেন। ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোয় হয়রানি বা যৌন হয়রানি-সংক্রান্ত অভিযোগ দাখিলের জন্য একটি কমিটি থাকে। এ রকম কমিটি থাকলে আপনি সেখানে একটি লিখিত নালিশ দাখিল করতে পারেন। আবার না থাকলেও অফিসের বড় কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিন। আপনি লিখতে পারেন, প্রথম থেকেই তাঁর উঁচু পদের দাপট দেখিয়ে ওই নারী আপনাকে যৌন সম্পর্ক করাতে চাপ দিয়ে অপরাধ করতে বাধ্য করেছেন। চিঠি লেখার আগে আপনি কোনো দায়িত্বশীল উচ্চপদস্থ সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে নিন।
মনে রাখবেন, ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেলে সেই নারীর পারিবারিক এবং কর্মস্থলের পরিবেশ লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই তিনি কখনও চাইবেন না, ব্যাপারটা জানাজানি হোক। আর আপনি যদি মৌখিকভাবে কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে জানান, তাহলে তিনি ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা সমাধানও করে দিতে পারেন। v
thumbelina005@gmail.com

আরও পড়ুন

×