মিঠামইনে জেন্ডার সচেতনতা বাড়াবে ‘অদম্য’

কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন এক পিছিয়ে পড়া এলাকা; সেখানকার মেয়েরা এখন শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে আসছে
রেজওয়ান রহমান
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:০৩ | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১৮:১২
বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতির এক সমৃদ্ধ জেলা কিশোরগঞ্জ। নারীশিক্ষা, বাল্যবিয়ে, নারী ও শিশু নির্যাতন-সহিংসতা এবং সামাজিক বৈষম্যের সূচকে পিছিয়ে এক অঞ্চল। মূলত এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে মালালা ফান্ডের অর্থায়নে এবং জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে ‘অদম্য (অপারেটিং ডাইভারসিফাইড অপরচুনিটিস ইন ম্যাস-মিটিগেশন অব অবস্ট্যাকলস অব গার্লস এডুকেশন)’ প্রকল্প।
‘অদম্য’ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়ে কন্যাশিশুদের ভর্তি বৃদ্ধি, নারীশিক্ষা ও জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কমিউনিটিভিত্তিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং গার্লস ক্লাব গঠন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এসটিইএম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত), সোশ্যাল ইমোশনাল লার্নিং (এসইএল বা সামাজিক মানসিক শিক্ষা) এবং দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা বা কম্পিট্যান্সিবেজড লার্নিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষাগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের জেন্ডারবান্ধব শিক্ষার পরিবেশ ও মনিটরিংয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে, যৌন হয়রানি এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদান এবং মাসিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলায় শিক্ষা ক্ষেত্রে মেয়েদের প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণের উপায় শীর্ষক জেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে আলোচকরা মেয়েদের শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন।
সভায় জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, ‘সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে আমাদের শিক্ষার প্রসার এবং নারীর অধিকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নারী ও শিশু কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর নারীর জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও সেবা নিশ্চিত করতে এবং সঠিক সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের স্থানীয় কমিউনিটিগুলোর সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে হবে এবং নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সঠিক প্রচারণার মাধ্যমে আমরা সহিংসতা কমাতে এবং সবার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারব।’
অদম্য প্রকল্পের মাধ্যমে কন্যাশিশুর শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, বাল্যবিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক বাধা দূর করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন সম্ভব হবে বলে আশা করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের একজন উপকারভোগী তাসমিয়া মিম বলেন, ‘গার্লস ক্লাবের সদস্য হয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী ও সচেতন হতে পেরেছি। এখন আমি আমার স্কুলের অন্য মেয়েদের মধ্যেও সচেতনতা ছড়াতে সাহায্য করছি। গার্লস ক্লাবের কার্যক্রম আমাকে নিজেকে আরও দক্ষ করে তুলেছে, যা আমার চারপাশের মানুষের জন্যও উপকারী।’
জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান করভি রাকসান্দ বলেন, “জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট বিশ্বাস করে, শিক্ষা পৃথিবী পরিবর্তনের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। মালালা ফান্ডের ‘অদম্য’ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা কন্যাশিশুর শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে প্রতিটি মেয়ে তার স্বপ্ন অনুসরণ করতে পারে এবং সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।”
জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের এডুকেশন চ্যাম্পিয়ন কামরুল কিবরিয়া অয়ন বলেন, ‘মিঠামইনের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নত মানের শিক্ষার সুযোগ খুবই সীমিত, সেখানে অদম্য প্রকল্পটি মেয়েদের শিক্ষাসহায়ক নীতির পক্ষে প্রচার, নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা এবং মেয়েদের শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য শক্তিশালী অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।’
- বিষয় :
- বাল্যবিয়ে
- নারী নির্যাতন