ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সমসাময়িক

‘বাল্যবিয়ে রোধে দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা’

‘বাল্যবিয়ে রোধে দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা’

ফাইল ছবি

জেড আই খান পান্না

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:২৮ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১১:২৬

গত ৫ নভেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে বাল্যবিয়ে নিরোধকল্পে অ্যাকসেলের‌্যাটিং অ্যাকশন টু অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারিজ ইন বাংলাদেশ (ফেজ-২) প্রকল্পের আওতায় ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ: সমস্যা ও করণীয়’ শীর্ষক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। 

কর্মশালায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘বাল্যবিয়ে শিশুদের জন্য একটি বড় অভিশাপ। এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বাল্যবিয়ে নিরোধে আইনের বিধান যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। যেখানে নারী নির্যাতন, বাল্যবিয়ে হবে, সেই তথ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। আমরা দ্রুত সাড়া দেব। পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যদি গ্রামে গ্রামে বাল্যবিয়ে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে পারি, তাহলে বাল্যবিয়ে কমে আসবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাল্যবিয়ে নিরোধে আইনের যে বিধান আছে, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এখন সুযোগ এসেছে, সমাজে যেখানে যা দুর্বলতা আছে, তা চিহ্নিত করে নতুনভাবে কমিটি করে তা সমাধানে কাজ করার। যারা কমিটিতে থেকে কাজ করছেন না, তাদের পরিবর্তন করে দুর্নীতিমুক্ত, সত্যের পথে এগোতে হবে।’

দেশে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার প্রায় ৪২ শতাংশ। ১৫ বছরের কম বয়সীদের বাল্যবিয়ের হার ৮ শতাংশ। বাল্যবিয়ের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। করোনার সময় স্কুল থেকে অনেক মেয়ে ঝরে পড়েছে। তাদের আর স্কুলে ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাদের অধিকাংশই বাল্যবিয়ের শিকার।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছরের কম বয়সে বিয়ের হার ২০০৬ সালে ৬৪ শতাংশ, ২০১২ সালে ৫২ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ৫১ শতাংশ ছিল। তাদের হিসাবে দেশে এখন ৪ কোটি ১৫ লাখ মেয়ে ও নারী বিবাহিত এবং সন্তানের মা। গত ১০ বছরে বাল্যবিয়ে কমার যে হার দেখা যাচ্ছে, সে হার দ্বিগুণ হলেও ২০৩০ সালে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার হবে প্রায় ৩০ শতাংশ।

বখাটেদের উৎপাতে বিঘ্নিত হয়েছে নারীর সামাজিক নিরাপত্তা। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে। নারী নিজেকে নিরাপদ মনে করলে, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে তাঁর অধিকার নিশ্চিত হলে আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী নারী সমাজ গড়ে উঠবে। আর এর ফলে বাল্যবিয়ে এমনিতেই কমে যাবে।

দেশে বাল্যবিয়ে ঠেকাতে প্রথাগত আইনে সাজা হিসেবে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সে আইনের বাস্তবায়নও হচ্ছে না ঠিকমতো। অনেক ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে নানা জটিলতা। মেয়েদের ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর সর্বনিম্ন বিয়ের বয়স। আইনে শাস্তির বিধান আছে; কিন্তু বিয়ে অবৈধ হবে না।

সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় প্রভাবও রয়েছে। বাল্যবিয়ে রোধের ক্ষেত্রে জনসচেতনতা গড়ে তোলা ভীষণ জরুরি। এজন্য যেমন প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুলের ভূমিকা আছে; তেমনি ভূমিকা আছে ধর্মীয় নেতা ও প্রতিষ্ঠানের। মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসাকে এই ব্যাপক পর্যায়ের প্রচারাভিযান ও জনসচেতনতা প্রকল্পে যুক্ত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই কেবল বাল্যবিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

লেখক: চেয়ারপারসন আইন ও সালিশ কেন্দ্র

আরও পড়ুন

×