ঢাকা বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সালতামামি

আন্দোলনে অগ্রগামী নারী

আন্দোলনে অগ্রগামী নারী

ছবি:: মাহবুব হোসে নবীন

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:০৮ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২:৩০

নারী চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে একটা বড় শক্তির জায়গা। নারীর অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। আন্দোলন যখন শান্তিপূর্ণভাবে বিকশিত হচ্ছিল, তখনও আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কলেজ, এমনকি স্কুলের নারী শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে এসেছে। এরপর যখন আক্রমণ শুরু হলো, তখন প্রথম প্রতিক্রিয়া হিসেবে মেয়েরাই বিভিন্ন হল থেকে বেরিয়ে এসেছিল ১৪ জুলাই রাতে। যে কোনো আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ এক বিরাট শক্তি। নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে সশস্ত্র আক্রমণ মোকাবিলা– সবখানেই শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে তারা।

এ আন্দোলনের আরেকটা বিশেষ দিক ছিল বিভিন্ন ধর্ম, মতের কিংবা বিভিন্ন পোশাকে নারীর অংশগ্রহণ। নারীর অংশগ্রহণ একটি আন্দোলনে যত বেশি থাকে, সেটি আলাদা শক্তি প্রদর্শন করে। কারণ, নারীর অংশগ্রহণ মানেই হলো সমাজের একেবারে চাপের মধ্যে যারা থাকে, যারা নানা রকম নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকে, যারা অনেক রকম অধস্তন অবস্থার মধ্যে থাকে, তাদের বের হয়ে এসে সরব অবস্থান গ্রহণ করা।

আন্দোলনে নারীর বড় অংশগ্রহণ থাকলে তা পুরুষতান্ত্রিক প্রবণতার বিপরীতে সংগ্রামে যুক্ত হয়। আমরা এ আন্দোলনে বিভিন্নভাবে নারীর অংশগ্রহণ দেখলাম। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী দেখলাম, তাদের ওপর আক্রমণ হলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা সামনে আসছেন, তাদের ওপর আক্রমণ হলে স্কুল-কলেজের নারী শিক্ষার্থীরা এসেছে। শুধু ঢাকা নয়, দেশের সব জায়গায় এটি দেখা গেছে। এটি এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এই মাত্রায় নারীর অংশগ্রহণ জানান দিচ্ছে, জাতীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পালনের ডাক তারা শক্তিশালীভাবে গ্রহণ করছে।

এই আন্দোলনের একটি বড় অংশ মায়েরা, যারা সন্তানের হাত ধরে নেমে এসেছিলেন রাস্তায়। অনেক ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের সঙ্গে নারীরা তর্ক করছেন। তর্কের যুক্তিগুলোও খুব শক্তিশালী। শুধু তারা মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছেন বিষয়টা এমন নয়, শক্তিশালী যুক্তি নিয়ে দাঁড়াচ্ছেন।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সব অপপ্রচার, অনলাইন বুলিং রুখে দিয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও নারীর কণ্ঠ আজ উপেক্ষিত, নারীকে শহীদ হিসেবেও স্বীকার করতে চান না অনেকে। সম্প্রতি নারীদের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিফা জান্নাত বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক, এই সময়ে এসে নারীকে বলতে হচ্ছে আমরাও আন্দোলনে ছিলাম।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আন্দোলনের সময় নারীকে মিছিলের সামনে রাখা হতো যেন পুলিশ আক্রমণ না করে। নারীকে আন্দোলনের ভ্যানগার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ এখন নারীর প্রাপ্য স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘প্রতিটি আন্দোলন বা বিপ্লবের পর প্রথমে আমরা ভুলে যাই নারীকে; ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পরও এটি হতে যাচ্ছে। এখনও আমাদের সময় আছে। নানাভাবে পুরুষতান্ত্রিক শব্দের মধ্যে আমরা পড়ে যাই, এখন আমাদের প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে।’

১১ নারী শহীদ
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে মোট ১৩২ শিশু-কিশোর এবং ১১ জন নারী শহীদ হয়েছেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এ তথ্য জানিয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানে ১১ নারী শহীদ হলেন– রিয়া গোপ, নাঈমা সুলতানা, লিজা আক্তার, মায়া ইসলাম, মেহেরুন নেসা, নাজমা বেগম, তানহা, সুমাইয়া আক্তার, নাফিসা হোসেন, রিতা আক্তার এবং মোসাম্মত আক্তার মারওয়া।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৫ ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত ৮৬৫ জনের মৃত্যুর তথ্য ডেটাবেজে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮২ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। শহীদদের মধ্যে বরিশালে ১০৪, চট্টগ্রামে ১২০, খুলনায় ৬৮, ময়মনসিংহে ৭৪, রাজশাহীতে ৫৪, রংপুরে ৬১ এবং সিলেটের ৩২ জন রয়েছেন।

আরও পড়ুন

×