ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

সা ক্ষা ৎ কা র

পেনশন স্কিম নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রচুর আগ্রহ রয়েছে

পেনশন স্কিম নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রচুর আগ্রহ রয়েছে

মো. গোলাম মোস্তফা সদস্য জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৬:৩৯

সমকাল : সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম শুরুর পর ছয় মাস হতে চলল, কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
গোলাম মোস্তফা : এ পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার জন চাঁদা জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এ কর্মসূচি নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। জানুয়ারির শুরুতে চালু হওয়া কল সেন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চারটি স্কিমের বিষয়েই জানতে চাচ্ছেন। এতে বোঝা যায়, তারা এ কর্মসূচিকে খুব ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। আমরা আশা করি, আগামীতে এতে অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যা আরও দ্রুতগতিতে বাড়বে।  
সমকাল : এ কার্যক্রম শুরুর আগে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী অংশ নেবেন ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। প্রবাসীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কি কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? 
গোলাম মোস্তফা : অনেক প্রবাসীর ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড না থাকায় আগ্রহ থাকলেও এতে অংশ নিতে পারছেন না। তাই ডেবিট-ক্রেডিট ছাড়াই প্রবাসীদের টাকা জমা দেওয়ার বিষয়টি আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। এটি কার্যকর করা গেলে প্রবাস স্কিমে নিবন্ধন ব্যাপক হারে বাড়বে।  
সমকাল : ব্যাংকে ডিপিএস কিংবা ফিক্সড ডিপোজিট এবং বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে প্রচলিত স্কিমের হিসাবনিকাশ করে অনেকে বলছেন, সর্বজনীন পেনশন থেকে তুলনামূলক কম লাভবান হওয়া যায়। এ বিষয়ে আপনি কী মনে করছেন? 
গোলাম মোস্তফা : দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রডাক্ট রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সুবিধাও ভিন্ন ভিন্ন। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, কেউ যদি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট কিংবা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে তাঁর কমপক্ষে এক লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে তা করা সম্ভব নয়। কিন্তু সর্বজনীন পেনশনে কোনো ব্যক্তি প্রতি মাসে অল্প পরিমাণ টাকা জমা দিয়ে শেষ বয়সে আজীবন সুবিধা পাবেন। আবার কেউ যদি বলতে চান, ডিপিএসে ব্যাংকগুলো বেশি সুবিধা দেয়, সেটিও যথাযথ হিসাব দেখাতে না পারলে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ছাড়া বীমার সঙ্গে এর কোনো তুলনাই হবে না। কারণ তারা ঝুঁকি বহন করে কিন্তু মেয়াদ শেষে এত বেশি সুবিধা দেয় না। সবচেয়ে বড় কথা ব্যাংক, বীমা বা অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের স্কিমের পরিচালন ব্যয় ও লভ্যাংশের পরই গ্রাহককে সুবিধা দেয়। অথচ জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আওতার স্কিমগুলোতে জনগণের জমা দেওয়া টাকা বিনিয়োগ করে পাওয়া মুনাফার পুরোটাই তাদের দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালন ব্যয়ও সরকার বহন করবে। তাই আমি মনে করি, পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই বেশি লভ্যাংশ দিতে পারে না।     
সমকাল : একজন প্রগতি স্কিমে অংশ নিয়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে টানা ১০ বছর জমা দিয়ে পেনশন পাবেন মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা করে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় সে টাকা কম মনে হয়। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
গোলাম মোস্তফা : একজন প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে দিলে ১০ বছরে জমা দিচ্ছেন ৬ লাখ টাকা। কিন্তু ৬০ বছরের পর থেকে ওই ব্যক্তি যদি ৮০ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকেন তাহলে পাবেন ১৮ লাখ টাকারও বেশি। এর থেকে কম-বেশি জীবিত থাকলে পাওনাটাও পরিবর্তন হবে। বর্তমানে মানুষ ৮০ এমনকি ৯০ বছরও বাঁচে। পেনশনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ওই ব্যক্তিটিকে শেষ বয়স পর্যন্ত প্রটেক্ট করা। এ ছাড়া লম্বা সময় ধরে চাঁদা দিলে তিনি মাসিক পেনশন বেশি পরিমাণ পাবেন। সবকিছু হিসাবনিকাশ করেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখনকার প্রেক্ষাপটে সর্বোত্তমটাই করার চেষ্টা করেছি। তা ছাড়া পেনশনে সংস্কার সব সময় হয়।  
সমকাল : মুনাফা হিসাব করার সময় কি বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার ধরে হয়েছে। ভবিষ্যতে এটি কি কমতে বা বাড়তে পারে? 
গোলাম মোস্তফা : মুনাফার সম্ভাব্য হিসাব ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। অনুমাননির্ভর কিছুই করা হয়নি। সবকিছুই চূড়ান্ত হয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। ভবিষ্যতে বাড়া-কমার বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে পেনশন তহবিলের প্রায় ২০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখান থেকে প্রায় ১১ শতাংশ করে মুনাফা পাওয়া যাবে। পরে পেনশন দেওয়া শুরুর আগ পর্যন্ত যদি একই হারে মুনাফা পাওয়া যায় তাহলে মুনাফা বেশ বাড়বে।
সমকাল : ২০ বছর বয়সী কেউ টানা আট বছর চাঁদা দিয়ে পরে আর দিলেন না। নিয়ম অনুযায়ী, জমা করা টাকা ফেরত পেতে তাঁকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ বিষয়টি নিয়ে অনেকে তো আপত্তি জানাচ্ছেন। 
গোলাম মোস্তফা : পেনশন কার্যক্রমটা অনেক সহজ করা হয়েছে। কেউ যদি পেশা পরিবর্তন করেন তাহলে একই আইডিতে থেকে স্কিমও পরিবর্তন করতে পারবেন। কারও আয় যদি অত্যন্ত কমে যায় তাহলে তিনি সমতা স্কিমে গিয়ে প্রতিমাসে মাত্র ৫০০ টাকা করে জমা দিয়ে এটি কন্টিনিউ করতে পারবেন। কেউ যাতে ফেল না করেন সে জন্যই এ কর্মসূচিতে এতসব সুযোগ রাখা হয়েছে। তারপরও কেউ যদি ১০ বছরের আগেই চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দেন তাহলে তিনি যে পরিমাণ জমা দিয়েছেন তার ওপর ভিত্তি করেই ৬০ বছর বয়সের পর পেনশন সুবিধা দেওয়া হবে।  
সমকাল : বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা পেনশনের একটা অংশ (৫০ শতাংশ) তুলে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এ কর্মসূচিতে এ ধরনের কোনো সুযোগ না রাখার কারণ কী? 
গোলাম মোস্তফা : সারাবিশ্বেই আধুনিক পেনশন ব্যবস্থায় এককালীন টাকা ওঠানোকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ অর্ধেক এককালীন তুলে নেওয়ার পর যে পরিমাণ পেনশন পাওয়া যায়, তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন। সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শেষ বয়সে নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়া। 
 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেসবাহুল হক

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×