ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

কার্যক্রম বাড়াতে চায় প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক

কার্যক্রম বাড়াতে চায় প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক

.

মেসবাহুল হক 

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ২১:১৯

কাজ করার জন্য বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক। এমনকি বিদেশ থেকে যারা ফেরত আসছেন, তাদের দেশে কর্মসংস্থানের জন্যও ঋণ দেওয়া হয়। এ কার্যক্রম আরও বাড়াতে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক মূলধন বাড়াতে চায়। তাদের  অনুমোদিত মূলধন এবং  পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে অনুমোদিত মূলধন বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি টাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগেচিঠি দিয়েছে একই মন্ত্রণলায়ের আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগ।

চিঠিতে বলা হয়, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক আইন, ২০১০-এর ৮ ধারা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধনের ৫ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ কোটি টাকা সরকার পরিশোধ করেছে। অন্যদিকে ৯৫ শতাংশ বা ৪৭৫ কোটি টাকা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড  ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে। ব্যাংকটি বিদেশ যেতে ইচ্ছুক যুবকদের ঋণ দেওয়া ক্রমান্বয়ে বাড়িয়েছে। আগামীতে এ কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যাংকটির সামগ্রিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর  প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক হতে তাদের মূলধন বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এসেছে। ব্যাংকের মূলধন ৫০০ কোটি টাকা বাড়ানো হলে আইন অনুযায়ী ৪৭৫ কোটি টাকা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং ২৫ কোটি টাকা সরকারকে পরিশোধ করতে হবে। মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ৪৭৫ কোটি টাকা পরিশোধে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মতামত চাওয়া হলে তারা সম্মতি দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি থেকে ১ হাজার টাকায় উন্নীতকরণের বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত চাওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বিষয়টি অতি জরুরি উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট শাখাকে পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। খুব শিগগির এ বিষয়ে মতামত দেওয়া হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, অর্থ বিভাগের মতামত পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৩৭ জন ঋণ নিয়ে বিদেশে গেছেন। ঋণ দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে অভিবাসন ঋণ খাতে মোট ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৩৯ প্রবাসীকে ২ হাজার ১২৩ কোটি ২৭ লাখ টাকার ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বিদেশ থেকে ফেরত আসা কর্মীদের কর্মসংস্থানের সহায়তার জন্য পুনর্বাসন ঋণ কর্মসূচির আওতায় মোট ৬ হাজার ২৩৯ জনকে প্রায় ২৪৫ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। 

বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক  ২০১১-১২ অর্থবছরে ৮৮৮ জনকে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ দেয়। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর মোট ৪১ হাজার ৬০০ জন ৯৫৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছেন। প্রায় প্রতিবছর ব্যাংকটির ঋণ বিতরণের পরিমাণ বেড়েছে। আগের বারের তুলনায় ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কভিড-১৯ চলাকালে ২০২১-২২ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে ৩৯ হাজার ২২৫ জন ঋণ নিয়েছেন ৯০০ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৫৩২ জন ঋণ পেয়েছিলেন ২৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

‘দেশে ও বিদেশে, আপনার পাশে’ স্লোগান নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক। অর্থাৎ বিদেশ যেতে তো ঋণ দেওয়া হচ্ছেই, বিদেশ থেকে ফিরে এসে কেউ দেশে কিছু শুরু করতে চাইলেও ঋণ পাচ্ছেন। ব্যাংকটি ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়। কেউ চাইলে ১ লাখ বা ৫০ হাজার টাকাও ঋণ নিতে পারেন। পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো  হলে ব্যাংকটির আরও বেশি ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

ঋণ পেতে যা প্রয়োজন
বিদেশ যাওয়ার জন্য ঋণ পেতে চাইলে বৈধ ভিসা থাকা হচ্ছে অন্যতম শর্ত। ভিসা সংগ্রহ করতে হয় নিজেকে, অর্থাৎ ব্যাংক কোনো ভিসা পাইয়ে দেবে না। ঋণের জন্য আবেদন করতে কোনো টাকা লাগে না। আবেদন করতে হয় ব্যাংকের নির্ধারিত ফরমে। তবে ঋণ নেওয়ার আগে ব্যাংকে হিসাব খুলতে হবে গ্রাহককে।

বৈধ ভিসার পাশাপাশি বিদেশগামী কর্মীকে যে কোম্পানি কাজ দেবে বা নিয়োগ করবে, সেই কোম্পানির দেওয়া নিয়োগপত্র লাগবে। সেই সঙ্গে আবেদনকারীর সত্যায়িত চার কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি, বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা সংবলিত পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেওয়া সনদ, পাসপোর্ট ও ভিসার কপি, ম্যানপাওয়ার স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ফটোকপি দাখিল করতে হয়। এ ছাড়া দু’জন জামিনদারের এক কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি, এনআইডি, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা সংবলিত পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেওয়া সনদ লাগে। জামিনদারদের যে কোনো একজনের স্বাক্ষর করা ব্যাংকের তিনটি চেকের পাতাও জমা দিতে হয়।

প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঋণের প্রক্রিয়া শেষ করার পর প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক আবেদনকারীকে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে ঋণ অনুমোদনের তথ্য জানায়। ব্যাংকটির সার্বিক খেলাপি ঋণের হার প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ। বর্তমানে এই ব্যাংকের ১২০টি শাখা রয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সাতটি করপোরেট শাখাসহ মোট শাখার সংখ্যা ৩০০টিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। 

আরও পড়ুন

×