ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

দ্রুত মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে চায় জেরা

দ্রুত মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে চায় জেরা

ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪৭ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ০৭:৫৬

জাপানস এনার্জি ফর এ নিউ এরা (জেরা) জাপানের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি; যার বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৬১ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে জাপানের বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ এবং ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দেশে ১৩ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে জেরা। জেরা ইন্টারন্যাশনাল তাদের অধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি ১৫টি দেশে এলএনজি সরবরাহ করছে।

২০১৯ সালে জাপানের জেরা ভারতীয় রিলায়েন্সের সঙ্গে  সম্পৃক্ত হয়ে মেঘনাঘাট ৭১৮ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট অধিগ্রহণ করে। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্যাসভিত্তিক আইপিপি। এতে  জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন, এডিবিসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে। প্রকল্পটি জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) থেকে প্রধান সরঞ্জামগুলো সুরক্ষিত করেছে এবং স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি করপোরেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট এবং নির্মাণ চুক্তির ভিত্তিতে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জেরা মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড ২০১৯ সালে বাংলাদেশে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। তবে প্রকল্পের গ্যাস পাইপলাইন বা পাওয়ার গ্রিডসহ বিভিন্ন অবকাঠামো বির্নিমাণ এবং গ্যাসলাইন সঞ্চালন করতে ধাপে ধাপে বিলম্বের মুখে পড়ে। যথাযথ সরকারি সহায়তা না পাওয়ায়  জেরা নিজ উদ্যোগ এবং খরচে শাখা পাইপলাইন করে। পূর্ণাঙ্গ লাইন এবং সাইড লাইনের কাজ শেষ হওয়ার পর গ্যাস সরবরাহ করা হয়। নানা ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে প্রকল্পটি আট মাস আগে চালু হয়।

তবে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পেতে হিমশিম খাচ্ছে। জেরা মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  জানিয়েছেন, প্রকল্পটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং অব্যাহত গ্যাস সরবরাহ সাপেক্ষে শিগগির  চালু হবে। তিনি বলেন, ‘স্পন্সর হিসেবে জেরা এ প্রকল্পে নানাভাবে সহায়তা করছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যেতে মন্ত্রণালয় বিপিডিবি এবং পেট্রোবাংলার কাছ থেকে সহায়তার আশা করছে। অত্যাধুনিক সুবিধা, সবচেয়ে দক্ষ টারবাইন এবং কম শুল্কসহ জেরা মেঘনাঘাট প্রকল্প বাংলাদেশের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার জন্য একটি বড় উদাহরণ সৃষ্টি করবে। 

তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই জাপান বাংলাদেশের শক্তিশালী বন্ধু। জাপানের অর্থায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্প স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে জাপান নানাভাবে অবদান রাখছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেরা বলেছে, বাংলাদেশে বিদ্যমান বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকার যেমন আচরণ করে আসছে, তাদের সঙ্গেও যেন তাই করা হয়। জেরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার অনুরোধ করেছে।
মাতারবাড়ীতে এলএনজি টার্মিনাল করতে আগ্রহী জেরা

নতুনভাবে আলোচিত মাতারবাড়ীতে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করতে আগ্রহ দেখিয়েছে জেরা। জেরা জাপানে ১১টি জমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল পরিচালনা করে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় এবং খারাপ আবহাওয়ার প্রবণতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের দুটি ভাসমান জাহাজভিত্তিক এফএসআরইউ রয়েছে। এ বছর একটি এফএসআরইউ ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে অপারেশনের জন্য যোগ্য ছিল না, যা উল্লেখযোগ্যভাবে গ্যাস সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করেছে। 

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী  সরকারের কাছে জেরা জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশে জমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প, পুনঃনবায়নযোগ্য প্রকল্প উন্নয়ন (সৌর, বায়ু), বিকল্প শক্তি (হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া) এবং এলএনজি সরবরাহে ভবিষ্যতের বিনিয়োগে আগ্রহী। এর ফলে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে জেরা বাংলাদেশের জন্য শূন্য কার্বন নির্গমন বিষয় নিয়ে সুবিন্যস্ত পরিসরে কাজ করছে। পাশাপাশি দেশের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। ভবিষ্যতে জেরা বাংলাদেশে স্থায়ী অফিস স্থাপনের চিন্তাভাবনা করছে।

আরও পড়ুন

×