ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

সাক্ষাৎকার

দেশে বিশ্বমানের প্রসাধনী উৎপাদন হচ্ছে

দেশে বিশ্বমানের প্রসাধনী  উৎপাদন হচ্ছে

আশরাফুল আম্বিয়া সভাপতি এএসবিএমইবি

আশরাফুল আম্বিয়া সভাপতি এএসবিএমইবি

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫০

সমকাল: বর্তমানে দেশে কী পরিমাণ প্রসাধনী উৎপাদন হচ্ছে?
আশরাফুল আম্বিয়া: দেশে বর্তমানে প্রসাধনীর বাজার প্রায় ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। এর প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। তবে এখন আমরা দেশেই বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য উৎপাদন শুরু করেছি। পাশাপাশি দেশের পুরোনো কয়েকটি কোম্পানি তাদের অন্যান্য খাতের সঙ্গে প্রসাধনী খাতেও কিছু পণ্য নিয়মিত উৎপাদন করছে। আশা করছি, মানুষের সচেতনতা বাড়লে ভবিষ্যতে এই আমদানিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।
সমকাল: দেশি পণ্যের মান নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে কি কোনো আস্থার ঘাটতি আছে?
আশরাফুল আম্বিয়া: দেখুন, দেশি পণ্য মানেই মানহীন– এ ধরনের কথা বলার দিন শেষ। এখন আমরা দেশেই বিশ্বমানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করছি। বাজারে মানহীন, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ যেসব পণ্য রয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই বিদেশ থেকে অবৈধ পথে আনা কিংবা দেশে নকল করে তৈরি করা। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে এর সত্যতা উঠে আসছে। মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে আমাদের সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সরকার ও গণমাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক সংগঠনগুলোরও এগিয়ে আসা উচিত। ক্রেতাদেরও সচেতন হওয়া দরকার।
সমকাল: আপনার দৃষ্টিতে উৎপাদনে সবচেয়ে বড় বাধা কী কী? সেগুলো কীভাবে দূর করা যায়? 
আশরাফুল আম্বিয়া: পণ্য বহুমুখীকরণ ও আমদানির বিকল্প বিবেচনায় এই শিল্প ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাত। কিন্তু এই সম্ভাবনার বিকাশে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চোরাই পথে আসা মানহীন পণ্য। পাশাপাশি বিদ্যমান শুল্কনীতি উৎপাদকদের জন্য ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বাজারে টিকে থাকার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের শুল্ক কমাতে হবে। বিশেষ করে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্যের তালিকা থেকে ওষ্ঠাধার প্রসাধন, চক্ষু প্রসাধন, হাত, নখ বা পায়ের প্রসাধন, পাউডার, সুগন্ধিযুক্ত বাথ সল্ট এবং অন্যান্য গোসল সামগ্রীসহ সংশ্লিষ্ট প্রসাধন সামগ্রী বাদ দিতে হবে। অবৈধ পথে বাজারে ভেজাল, মানহীন কসমেটিকস ও নকল পণ্য রোধ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। যেহেতু উৎপাদকরা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ৫ গুণ বেশি রাজস্ব দেয়, সেহেতু আমদানি নিরুৎসাহিত করে স্থানীয় উৎপাদনে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে আমদানি পণ্যে প্রকৃত মূল্যে শুল্কায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আইনগত দিক থেকে সুরক্ষা দরকার।
সমকাল: আপনারা বলছেন, ভবিষ্যতে প্রসাধনী খাত হতে পারে রপ্তানি বাণিজ্যে অন্যতম বড় অংশীদার। সেটা কীভাবে সম্ভব?
আশরাফুল আম্বিয়া: দেশীয় কারখানায় স্কিনকেয়ার ও কালার কসমেটিকস পণ্য এমনভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে, যাতে সেগুলোর গুণগত মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ না থাকে। মূলত স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যেন ভবিষ্যতে রপ্তানি করা যায়, সে লক্ষ্যেই গুণগত মান নিশ্চিত করা হচ্ছে। তৈরি পোশাক দেশের প্রধান রপ্তানি খাত। রপ্তানি বাড়াতে নতুন নতুন খাত সংযোজন করতে হবে। তাতে বিদ্যমান রপ্তানিযোগ্য শিল্পগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। আমি মনে করি, এই শিল্পে সরকার বিশেষ দৃষ্টি দিলে এ খাতে বিপ্লব ঘটবে। প্রযুক্তির সমাহারে স্থাপন হবে নতুন নতুন কারখানা। সেগুলোতে প্রত্যক্ষভাবে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা যাবে। ইতোমধ্যে আমাদের কারখানা মান নিশ্চিত করে গ্লোবাল ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে।  আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে, তাতে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করার সুযোগ রয়েছে। আমরা এরই মধ্যে আমাদের ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য ৩০টি দেশে রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছি। 
সমকাল: এ খাতের বিনিয়োগের পরিমাণ কেমন?
আশরাফুল আম্বিয়া: বলা চলে, এটি দেশের জন্য একটি নতুন শিল্প খাত। বিশেষ করে কালার কসমেটিকস সম্পূর্ণ নতুন। পাশাপাশি স্কিনকেয়ার পণ্যেও স্থানীয় উৎপাদন পূর্ণাঙ্গ ছিল না। বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ে এখনও কোনো সমীক্ষা হয়নি। তবে এটুকু বলা যায়, এই খাতে বিনিয়োগ আগের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। রিমার্ক বেশ ভালো বিনিয়োগ করেছে। নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আসছেন। এটি সত্যিই একটি সমৃদ্ধিশালী শিল্প খাত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু কারখানা স্থাপন, কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদকের আইনগত সুরক্ষা বাড়ানো, শুল্কায়নে বৈষম্য নিরসন জরুরি। তা না হলে উদ্যোক্তারা আমদানি, নকল ও ভেজালের বিরুদ্ধে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
সমকাল: আপনারা কি মনে করেন, প্রসাধনী আমদানিতে লাগাম টানা দরকার? 
আশরাফুল আম্বিয়া: দেখুন, উন্নত বিশ্বের সবাই পণ্য উৎপাদনে স্থানীয় আবহাওয়া, নিজস্ব ত্বকের ধরন ও প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেসব দিক থেকে আমাদের অবস্থা ভিন্ন। মানসম্পন্ন পণ্যের অভাবে আমাদের দেশের মানুষ বিদেশি পণ্যের দিকে বেশি আস্থাশীল ছিল। তবে সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। রিমার্ক স্থানীয় ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে আবহাওয়া ও ত্বকের ধরন অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনে গবেষণায় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করছে। অথেনটিক পণ্য ভোক্তার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হারল্যান নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। তাই আমরা মনে করি, আমাদানি পণ্যের সঙ্গে স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের শুল্কায়নের নীতিমালা পরিবর্তন দরকার। যেহেতু দেশে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন হচ্ছে, তাই আমদানিতে শুল্ক আরোপ না করলে দেশীয় উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে।
সমকাল: আপনাদের উৎপাদিত পণ্য মানসম্মত, তা কীভাবে বুঝবে ক্রেতা?
আশরাফুল আম্বিয়া: একটু খেয়াল করে সতর্কতা অবলম্বন করলেই ভেজাল ও নকল পণ্য এড়ানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাদের কেনার সময় অথেনটিক আউটলেট, অনলাইনের ক্ষেত্রে অথেনটিক ই-কমার্স ও সরবরাহকারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়াটা জরুরি। উৎপাদিত পণ্যে বিএসটিআইর মানসনদ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। নকলকারীরা প্যাকেজিং করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মান নিশ্চিত করতে পারে না। এগুলো দেখেও ভেজাল ও নকল পণ্য চেনা সম্ভব। তবে এসব নকল ও ভেজাল পণ্য বিক্রি বন্ধে  বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি, অভিযান পরিচালনাও জরুরি।
 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জসিম উদ্দিন বাদল

আরও পড়ুন

×