ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

জিপিএইচের বিলেট যাচ্ছে বিদেশেও

জিপিএইচের বিলেট যাচ্ছে বিদেশেও

ফাইল ছবি

বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪৪

দেশে ইস্পাতের বাজার প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের। এর আন্তর্জাতিক বাজার আরও প্রায় শতগুণ বেশি। গুণগতমানসম্পন্ন রড উৎপাদন করে এখন সেই বিশ্ববাজারে নজর দিয়েছে বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্প। চীনের বাজারে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো পাঁচটি চালানে বিলেট রপ্তানির কৃতিত্ব দেখায় জিপিএইচ ইস্পাত। চীন ইস্পাত উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষস্থানে আছে। সেই চীনে এ বিলেট রপ্তানি করে তারা ২৫ হাজার টন, যার দাম ১ কোটি ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার। বাংলাদেশ থেকে একসঙ্গে এত বড় চালান আগে কখনও রপ্তানি হয়নি। এই রপ্তানি আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে। সব সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে শুধু ইস্পাত থেকেই বছরে ৩৬০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আসতে পারে দেশে।

রপ্তানিতে বড় সম্ভাবনা
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, আগে ইনডাকশন ফার্নেস দিয়ে দেশে লৌহজাত পণ্য তৈরি করতে হতো। যেমন– রড, অ্যাঙ্গেল, চ্যানেলসহ নির্মাণসামগ্রী। ইনডাকশন প্রযুক্তি অনেক পুরোনো; যেটি শুধু লোহাজাত সামগ্রীকে গলানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি দিয়ে কোনো রিফাইন হয় না। গুণগতমানের ওপরও এটি কোনো প্রভাব রাখতে পারে না। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তি। এটা পৃথিবীর সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে অগ্রগামী প্রযুক্তি। কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস দিয়েই লোহাকে সম্পূর্ণ পিওর করা সম্ভব, যা অন্য কোনো প্রযুক্তি দিয়ে সম্ভব নয়। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন গুণগতমানের পণ্যগুলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে খুব প্রয়োজন। সেখানে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এটির। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলো কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তির পণ্য অন্য দেশ থেকে আমদানি করে থাকে। এই বাজার ধরার সুযোগ আছে বাংলাদেশেরও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেসের মাধ্যমে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রড প্রস্তুত করা সম্ভব। বাড়ানো সম্ভব রপ্তানি। আয় করা যাবে বছরে আরও অন্তত ৩০ কোটি ডলার বা ৩৬০ কোটি টাকা। জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল বলেন, ‘কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ৪০০ ডলার করে যদি আমরা কিনে আনি, সেগুলোকে জনশক্তি থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক সব আমাদের দেশীয় ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে সেটিকে রপ্তানি করে ৭০০ ডলার বিক্রি করতে পারি। দেখা যাচ্ছে, ৩০০ ডলার আমরা আয় করতে পারছি। জিপিএইচ ইস্পাতের সক্ষমতা রয়েছে বছরে ১০ লাখ টন উচ্চমানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করার। বছরে যদি আমরা ১০ লাখ টন পণ্য রপ্তানি করি, তাহলে বার্ষিক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি ৩০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের মুদ্রায় ৩৬০ কোটি টাকা।’

কেন জনপ্রিয় কোয়ান্টাম আর্ক প্রযুক্তি
ইস্পাত কারখানা এলাকায় বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ হয় ও ক্ষুদ্র বস্তুকণা ছড়িয়ে যায়। শিল্পের ধরন, অবকাঠামোর মান, ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতার ওপর দূষণের মাত্রা নির্ভর করে। জিপিএইচ ইস্পাতের কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তিতে এ ক্ষতির মাত্রা খুবই কম। এতে ব্যয় বেড়ে গেলেও নতুন কারখানার কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৮০ শতাংশ কমে গেছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ক্ষতিকর কণা থাকছে বড়জোর ১০ মিলিগ্রাম, যা বিশ্বব্যাংকের গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ কম। কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোনো ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হয় না। পানি শোধনাগার প্লান্ট শূন্য ডিসচার্জ সিস্টেমের সঙ্গে ডিজাইন করা হয়েছে, যা ব্যবহৃত পানির শতভাগ পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করে। এ জন্য জিপিএইচের পণ্যে আস্থা রাখছেন বিদেশিরাও।

আরও পড়ুন

×