‘দ্য ম্যান অব কমিটমেন্ট’
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জিপিএইচ গ্রুপ
সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪৫
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। জিপিএইচ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। গ্রুপের সবাই তাঁকে মনে করেন প্রতিষ্ঠানের ‘প্রাণপুরুষ’। ছয় ভাইয়ের ১২ হাতকে এক বিন্দুতে আনেন তিনি। করেন ঐক্যবদ্ধ। বাড়ান শক্তি। মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে তিনি বিন্দু থেকে গড়ে তোলেন সিন্ধু। তাঁর শুরু করা পুঁজিবিহীন ব্যবসায় এখন বিনিয়োগ আছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। দেশের সবচেয়ে আধুনিক ইস্পাত কারখানাটি এখন জিপিএইচের। এটি গড়তে গিয়ে তিনি তিন ডজনেরও বেশি ব্যাংক থেকে নিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ। কিন্তু কোনো ব্যাংকেই কখনও খেলাপি হননি এক দিনের জন্যও। তাই ব্যাংকপাড়ায় মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে ডাকা হয় ‘দ্য ম্যান অব কমিটমেন্ট’ হিসেবে।
ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দ্বিতীয়। কিন্তু ইস্পাতের ব্যবসা সম্প্রসারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনিই। ১৯৮২ সালেও জাহাঙ্গীর আলম কাজ করতেন অন্যের প্রতিষ্ঠানে। সেই চাকরিতে তিনি এতটা আস্থা অর্জন করেছিলেন যে, বিনা পুঁজিতে তাঁকে ব্যবসা করতে উদ্ধুদ্ধ করতে থাকেন আছাদগঞ্জ ও খাতুনগঞ্জের বনেদি ব্যবসায়ীরা। বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত হাজী এ এ রউফকে নিয়ে ১৯৮৬ সালে বিনা পুঁজিতেই চাকরি ছেড়ে ঢেউটিনের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। পরে সেই ব্যবসায় পর্যায়ক্রমে যুক্ত হন অপর ভাই– মোহাম্মদ আলমগীর কবির, মোহাম্মদ আলমাস শিমুল, মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান ও মোহাম্মদ আবদুল আহাদ। সারাদেশে যৌথ পরিবারের ব্যবসা যখন বিভক্ত হচ্ছে, তখন সব ভাইয়ের সব হাত এক হয়েছে জিপিএইচ ইস্পাতে।
জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল বলেন, ‘দেশের জন্য কিছু একটা করতে হবে। ধরে রাখতে হবে গুণগত মান। বজায় রাখতে হবে কমিটমেন্ট। ধারণ করতে হবে সততা। এই চারটি বিষয়কে সব সময় প্রাধান্য দিতেন আমার মেজো ভাই জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর এই শিক্ষা থেকে দীক্ষা নিয়েই আমরা শূন্য থেকে গড়ে তুলেছি দেশের সবচেয়ে আধুনিক ইস্পাত কারখানাটি। আমাদের প্রতিষ্ঠান এখন আন্তর্জাতিক মানের পণ্য রপ্তানি করে। দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে বিদেশ থেকেও। এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।’
জিপিএইচ ইস্পাত এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড-২০২৪ পেয়েছে। গত বছরও ইন্ডাস্ট্রি ইনোভেশন অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিভাগেও এই চ্যাম্পিয়নশিপ লাভ করেছে। জিপিএইচ ইস্পাত আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব স্থাপন করে বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড থেকে সনদ লাভ করেছে। এই প্লান্ট ভারতের টাটা, আমেরিকার বিনটন স্টিল ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা পরিদর্শন করে রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
জিপিএইচ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চাই, দেশের পতাকাটা বিশ্ব দরবারে উঁচু করে ধরতে। তাই প্রতিষ্ঠা করেছি বিশ্বমানের সম্পূর্ণ গ্রিন ও ডিজিটাল ইস্পাত ফ্যাক্টরি। আমরা বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে এমন একটা প্রযুক্তি এনেছি, যেখানে অক্সিজেন ব্যবহারের মাধ্যমে স্ন্যাগ ফেলে দিয়ে নিখাদ স্টিল তৈরি করা হয়। বায়ুদূষণ কমাতেও এ প্রযুক্তি খুবই কার্যকর। প্রচলিত প্রযুক্তির বিভিন্ন কারখানার তুলনায় জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানায় প্রাকৃতিক গ্যাসের সাশ্রয় হচ্ছে। এমন বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেস থেকে উৎপাদিত ইস্পাত অন্য যে কোনো ফার্নেস থেকে উৎপাদিত ইস্পাত থেকে বহুলাংশে সেরা।’
সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করে এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চান বলে মন্তব্য করেন দ্বিতীয় প্রজন্মের সায়হাম সাদিক পিয়াল। আলমাস শিমুলের বড় সন্তান পিয়ালও বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসে হাল ধরেছেন পারিবারিক ব্যবসায়। তিনি বলেন, ‘আমার বাপচাচারা যে ব্যবসা করছেন, তাতে কন্ট্রিবিউট করতে চাই আমরাও। আমার জ্যেঠাতো ভাই সাদাত এরই মধ্যে নিয়মিত অফিস করছেন। আমিও কানাডা থেকে পড়াশোনা শেষ করে মনোযোগ দিচ্ছি ব্যবসাতে। আমার জ্যেঠা জাহাঙ্গীর আলম সততা, নিষ্ঠা ও কমিটমেন্টের যে শিক্ষা আমাদের দিয়েছেন, সেটি টেনে নিতে চাই আমরা নতুন প্রজন্ম।’
- বিষয় :
- সমৃদ্ধি