- স্বপ্নের পদ্মা সেতু
- প্রমত্তা পদ্মা নদী
প্রমত্তা পদ্মা নদী

পদ্মা নদী আর পাঁচটা সাধারণ নদীর মতো নয়। এটি বেশ ভয়ংকর খরস্রোতা একটি নদী। নদীটির ভয়ংকর রূপের কিছু অতীত ইতিহাস আছে। পদ্মা নদীতে ১৯৬৬ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫৬ বর্গমাইলেরও বেশি জায়গা বিলীন হয়ে গেছে। উল্নেখ্য, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের বর্তমান আয়তন প্রায় ১১৮.৩ বর্গমাইল। তার মানে প্রায় ৫৬ বছরের ব্যবধানে পদ্মা নদী দুইবারেরও বেশি ঢাকা শহরের সমান আয়তনের শহরকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে! পদ্মা দিয়ে যে পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়, তা বিশ্বের প্রথম সারির নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতি সেকেন্ডে এই নদী দিয়ে প্রায় ৩৮ হাজার ১২৯ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। এই পানির পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। ব্যাপারটা বোঝার জন্য একটি সুইমিংপুল দিয়ে তুলনা দেওয়া যেতে পারে। অলিম্পিক গেমসে যেসব সুইমিংপুলে সাঁতার প্রতিযোগিতা হয়, সেগুলোর প্রতিটিতে পানি ধারণ করা যায় প্রায় ২ হাজার ৫০০ ঘনমিটার করে। তার মানে পদ্মা নদী দিয়ে যে পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয় প্রতি সেকেন্ডে তা দিয়ে অলিম্পিক সুইমিংপুলের সমান আয়তনের প্রায় ১৫টি সুইমিংপুল ভরে ফেলা যাবে! সারা ঢাকা শহরে আমরা যতটুকু পানি ব্যবহার করি, তার সমান পানি পদ্মা নদী দিয়ে প্রতি ৭৯ সেকেন্ডে প্রবাহিত হয়! এত বিপুল পরিমাণ পানি বহন করে এমন নদী বিশ্বে আর গুটিকয়েকই আছে। পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিয়ারকে কিন্তু এই পানির ধাক্কা সামলাতে হবে এবং যে কারণে পৃথিবীর গভীরতম পাইল বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে। পদ্মা নদীর আরেকটি স্বভাব হলো মাটি তুলে নিয়ে যাওয়া। নদীর তলদেশ থেকে মাটি তুলে নিয়ে যাওয়াকে 'স্কাউরিং' বলে, যা আগেই বলা হয়েছে। পদ্মা নদীতে এই স্কাউরিংয়ের পরিমাণ ৬৫ মিটার গভীরতা পর্যন্ত হতে পারে, যা প্রায় ২১ তলা উঁচু দালানের সমান উচ্চতা। নদী এলাকায় মাঝে মধ্যে পাড় রক্ষার জন্য জিওটেক্সটাইল ব্যাগ বা জিওব্যাগ দেওয়া হয়ে থাকে। এগুলো মূলত বালুর বস্তা। বিশেষভাবে বানানো কাপড়ের ভেতর একটি নির্দিষ্ট ধরনের বালু ভরে সেলাই করে নদীর পাড় রক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়। বস্তাগুলো বিভিন্ন ওজনের হয় যেমন- ২৫০ কেজি, ৫০০ কেজি, ১ হাজার ২০০ কেজি প্রভৃতি। এমনও শোনা গেছে, আগের দিন ১ হাজার ২০০ কেজির বালুর বস্তা পদ্মায় ফেলে গেছে আর পরের দিন গিয়ে দেখা গেছে, সেই বালুর বস্তা আর সেখানে নেই। পদ্মা নদী তা তুলে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। শুধু এটাই নয়, বাংলার বিভিন্ন লোকসংগীতে পদ্মা নদী নিয়ে গীতিকারের দুঃখ গাথা শুনলে পদ্মার ভয়াবহতা সম্পর্কে আরও পরিস্কার ধারণা পাওয়া যায়।
মন্তব্য করুন