বাংলাদেশের মুখ
ফ্রিল্যান্সিংয়ে অনেক দূর

আবদুর রহিম
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২২ | ০০:১৭
হামিদুর রহমান। একজন প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন নেটদুনিয়ায়। বর্তমানে তিনি ঘরে বসে মাসে আয় করছেন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। একই সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন বেকার যুবকদের।
তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইল পৌর শহরের কাগমারায়। ২০১৫ সালে সিগারেট কোম্পানি ঢাকা টোবাকোতে কাজ করতেন তিনি। এরপর টাঙ্গাইল শহরে দর্জি বাড়ি ফ্যাশন হাউসের শোরুমে কাজ করেন। সেখান থেকে চলে যান ভিভো মোবাইল কোম্পানিতে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করতেন। ১০টায় বাসায় গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করতেন। ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও দেখেছেন। এরপর অনলাইনভিত্তিক এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি কোর্স করেছেন।
টাঙ্গাইলের পুলিশ লাইনস আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে বিবেকানন্দ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর ভর্তি হন কাগমারী মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজে। করেন বিয়ে। এ অবস্থায় চিন্তা বেড়ে যায় তাঁর। দোকানে ৬ হাজার টাকা বেতনের চাকরি শুরু করেন। বাসা ভাড়া দিয়ে কোনোরকমে চলছিল সংসার। চাকরিরত অবস্থায় তাঁর সহকর্মীকে দেখেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করতে। হামিদুর সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার পথে পা বাড়ান। প্রথম অবস্থায় কিছুটা আয় শুরু হলে আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় চাকরি ছেড়ে প্রফেশনালি শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ। সেই আয়ের টাকা দিয়ে এখন গাড়ি-বাড়ি সব করেছেন তিনি।
বর্তমানে মাসে তাঁর আয় হচ্ছে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকা দিয়ে তিনি টাঙ্গাইল শহরের হাউজিং সোসাইটি আবাসনে গড়ে তুলেছেন ফ্রিল্যান্সার ইনস্টিটিউট বিডি। শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিই তাঁর লক্ষ্য।
হামিদুর রহমান বলেন, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ওপর ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোর্সগুলো করেছিলাম, যে কারণে আমি মার্কেটপ্লেস ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস দিয়ে ইউএসএ, কানাডা অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, জাপান, সুইজারল্যান্ড, ভারত, সৌদি আরব, ইউএইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজগুলো করে আসছি। শুরুর দিকে খুব অসুবিধায় পড়তে হতো। একটি কাজ পেলে কোনো ধরনের সাপোর্ট পেতাম না। কাজগুলো গুছিয়ে নিতে পারতাম না। নিজে নিজেই কাজগুলো অনেক কষ্ট করে করতে হতো। প্রথম ২০ দিনের মাথায় একটি ১০০ ডলারের পেমেন্টে পাই। কাজটি ছিল ইউএসএর একটি কোম্পানির এবং আমি সেই কাজটি প্রফেশনালি করে দিতে পেরেছিলাম। তারা কাজে খুশি হয়ে আমাকে ১০ ডলার টিপস দিয়েছিল। ভালো কাজের মূল্যায়নে অনুপ্রেরণাটা আরও বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, পরে দক্ষ হতে থাকি আর ভালোভাবেই কাজ পেতে থাকি। প্রতি মাসে লাখ টাকা আয় করা শুরু করি। এরপর আমাকে দেখে আশপাশের অনেকেরই ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। সেই থেকে নিজে কাজ করছি এবং অন্যকেও শেখানো শুরু করলাম। এতে নিজের উপার্জন সক্ষমতা যেমন তৈরি হচ্ছে, তেমনি দক্ষ জনবলও তৈরি হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে টানা দুই মাস রাতদিন ২৪ ঘণ্টা কোর্স করতে হবে। ফিজিক্যালি কোর্সে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসস্থান। থাকাটা আমাদের, কিন্তু খাওয়া নিজের। সে ক্ষেত্রে মাসিক তিন থেকে চার হাজার টাকা হলেই হয়ে যাবে। এভাবেই দুই মাস আমাদের সঙ্গে রাতদিন কাজ করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোর্স সম্পন্ন করতে পারেন আপনিও। আমার ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে প্রায় ১৭ হাজার মানুষকে ফ্রিতে ফ্রিল্যান্সিং সাপোর্ট দিচ্ছি এবং ৫ হাজার স্টুডেন্টকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শেখাতে পেরেছি। আমার ফ্রিল্যান্সিং ইনস্টিটিউট বিডির স্টুডেন্টরা আজ ৫০০ ডলার থেকে শুরু করে হাজার ডলারের কাজ পাচ্ছে।
তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ শিখে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন এক ব্যক্তি। প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে সেই ব্যক্তির মাসে আয় ৪০ হাজার টাকার ওপরে। এরকম কয়েকশ ছাত্রছাত্রী ঘরে বসে আয় করছে ও সংসারের হাল ধরছে।
তাঁর ভাষ্য, আমার টিমে ২২ জন মেম্বার আছে। তিনজন এক্সিকিউটিভ রয়েছে। যারা মূলত সম্পূর্ণ টিমের নেতৃত্ব দেয়। প্রযুক্তির যুগে ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে ফ্রিল্যান্সিংয়ের। কারণ, এর মাধ্যমে আপনি কাজ করতে পারবেন ঘরে বসেই। আধুনিকতার যুগে, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের যুগে দক্ষতা বাড়িয়ে নিজেকে একজন অভিজ্ঞ ডিজিটাল মার্কেটারের কাতারে নাম লেখাতে পারেন। দক্ষতা থাকলে আপনি শুধু বাংলাদেশি ক্লায়েন্ট নয়, বিদেশি ক্লায়েন্টদেরও কাজ করতে পারবেন ঘরে বসেই।
ফ্রিল্যান্সার হামিদুর রহমান এখন শুধু ফ্রিল্যান্সিং করছেন না। মানবতার সেবায়ও এগিয়ে আসছেন। বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের যে কোনো খারাপ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। ২০২২ সালের বন্যায় সিলেটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৭ হাজার পরিবারের জন্য খাবার নিয়ে সিলেটে ছুটে যান।
হামিদুর রহমান বলেন, ফ্রিল্যান্সিং ইনস্টিটিউট বিডির মাধ্যমে হাজারো তরুণকে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে যাব। একটি আইটি ফার্ম করার ইচ্ছা রয়েছে।
লেখক
টাঙ্গাইল
প্রতিনিধি
- বিষয় :
- প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০২২
- ১৮ বছরে সমকাল