বাংলাদেশের মুখ
একজন স্বপ্নবাজ

মনোজ সাহা
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২২ | ০০:১০
মো. গিয়াস উদ্দিন (৩৩)। একজন আত্মপ্রত্যয়ী প্রদীপ্ত তরুণ। বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার হোগলাকান্দি গ্রামে। পিতার আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা, মাতা আলেয়া বেগম। তিনি পরের অধীনে বড় কর্মকর্তা পদে চাকরি না করে উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির চিন্তা করেন। তাই ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন। এখন তিনি অগ্র ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী। ফার্মের দুধ প্রক্রিয়াজাত করে গড়ে তুলেছেন অগ্র সুইটস ভিলেজ নামে ৩টি মিষ্টির দোকান। ডেইরি ফার্ম ও মিষ্টির দোকানে তিনি ১৫ জনের কর্মসংস্থান করেছেন। তাঁর ফার্মে গরুর সংখ্যা এখন ৯০। ১০ লাখ টাকা নিয়ে ডেইরি ফার্ম শুরু করেন। এ পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বর্তমানে স্থায়ী আবাসনসহ তাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি টাকা। গত কোরবানির ঈদে তিনি অন্তত ১০টি গরু মোটাতাজা করেন। এর মধ্যে ৪টি বড় আকারের ষাঁড়। গরু মোটা তাজাকরণেও পেয়েছেন সাফল্য। এ অভাবনীয় সাফল্য তাঁকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সহায়তা করেছে। তিনি এলাকায় পুষ্টি ও আমিষ সরবরাহে ভূমিকা রাখছেন।
গিয়াস উদ্দিন ২০১৪ সালে প্রাইম ব্যংকে জুনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ব্যাংকে চাকরি তাঁর ভালো লাগেনি। তিনি উদ্যোক্তা হয়ে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালের শেষদিকে তিনি চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। ২০১৮ সালে ১০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে তিনি ৪টি উন্নত জাতের গাভী দিয়ে হোগলাকান্দি গ্রামেই শুরু করেন ডেইরি ফার্ম। তাঁর ডেইরি ফার্মের গরুর সংখ্যা নব্বই। প্রতিটি গরুর তিনি আলাদা নাম দিয়েছেন। ফার্মে প্রবেশ করে তিনি গরুর নাম ধরে ডাকেন। প্রতিটি গরুরই তাঁর ডাকে সাড়া দেয়। ফার্মের গরু পালনে তিনি নিজের ও গ্রাম থেকে লিজ নিয়ে ১০ একর জমিতে ঘাষের চাষ করছেন। এখানে উৎপাদিত ঘাস সারাবছর গরুকে খাওয়ানো হয়। অতিরিক্ত ঘাস বিক্রি করেও অর্থোপার্জন হয়। এ ছাড়া ফার্মের ৩০ শতাংশ জমিতে গিয়াস উদ্দিন বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। নিজ পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে বাড়তি সবজি বাজারে বিক্রি করে রোজগার করছেন।
এলাকায় মো. গিয়াস উদ্দিনের ডেইরি ফার্ম ও মিষ্টির বেশ সুনাম। তিনি অগ্র সুইটস ভিলেজকে তাঁর ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে ছড়িয়ে দিতে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। ডেইরি ফার্মের দুধ দিয়ে ঘি, ছানা, সন্দেশ, কালোজাম, মালাই চপ, ল্যাংচা, চমচম, রস মালাই, রসগোল্লা, দই, রসকদম, কমলাভোগসহ বাহারি মিষ্টি তৈরি করছেন। এসব মিষ্টি ৩টি শোরুমে বিক্রি হচ্ছে। একটি আউটলেট রয়েছে কাশিয়ানী উপজেলার জয়নগর বাজারে। অপর দুটি আউটলেট মুকসুদপুর উপজেলায়।
ডেইরি ফার্মের কর্মী কিতাব, আমজাদ, রহিম বলেন, আমাদের ফার্মের মালিক মো. গিয়াস উদ্দিন একজন মানবিক হৃদয়ের মানুষ। তিনি যা খান, তাই আমাদের খাওয়ান। অগ্র সুইটস ভিলেজের জয়নগর বাজার শাখার ম্যানেজার দীনবন্ধু বলেন, মিষ্টির মান ভালো; দামও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। তারপরও গ্রামের মধ্যে মিষ্টি কম চলে। আউটলেট শহরে করতে পারলে মিষ্টির চাহিদা বাড়বে।
জয়নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মাদ সালাহউদ্দীন বলেন, শহরের অভিজাত এলাকার মতো মানসম্পন্ন মিষ্টি পাওয়া যায় অগ্র সুইটস ভিলেজে।
লেখক
গোপালগঞ্জ
প্রতিনিধি
- বিষয় :
- প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০২২
- ১৮ বছরে সমকাল