আগামী
চোখেমুখে পজিটিভ বাংলাদেশ

বিবি রাসেল
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২২ | ২৩:৫৭
বাংলাদেশের মাটি ছুঁয়ে বড় হয়েছি। আমার জন্ম এখানে। যতই আমি বিদেশে যাই না কেন; দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা, মায়া ও টান আছে। আমার দেশ অনেক দিক থেকে সমৃদ্ধ। এ দেশে গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে। কিন্তু আমরা গুরুত্ব দিই না। আমি চোখেমুখে বাংলাদেশ দেখি। পৃথিবীর আর কোনো দেশ নেই, যেখানে ভাষার জন্য, সংস্কৃতির জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু বাঙালি দিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ অনেক কিছু পারে। আমি ছোটবেলা থেকে পজিটিভ বাংলাদেশই দেখি। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশকে উন্নত জায়গায় দেখতে চাই।
আমি একটা কাজ করতেই দেশে এসেছি। ১৯৯৪ থেকে এখন পর্যন্ত সেটাই করছি। গ্রামবাংলার কৃষির পরেই কিন্তু ক্র্যাফট তথা হস্তশিল্প। অর্থাৎ হাত দিয়ে যেটা করে। আমি তাই করছি। খুব বিশাল কিছু না। আমি এসেছি একটা চিন্তাধারা নিয়ে। যারা হাত দিয়ে সুন্দর কাজ করে তারা যেন উন্নত জীবন পায়; তাদের জীবনব্যবস্থা যেন টেকসই হয়; সন্তানরা যেন শিক্ষা অর্জন করতে পারে এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পায়; সে লক্ষ্যেই কাজ করি। যে কোনো দেশের মেরুদণ্ড হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। আমি আমার কাজের মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করতে চাই। আমি এক জায়গায় না; পুরো বাংলাদেশে কাজ করি। আমি বাংলাদেশে এসেছিই মিশন নিয়ে। স্বপ্ন পূরণ করতে; ব্যবসা করতে নয়। আমার কাজ নিজস্ব অর্থায়নে। আমার এনজিও, করপোরেট সম্পূর্ণ আমার পয়সায়। আমরা অল্প অল্প করে এগোচ্ছি পুরো বাংলাদেশে। অনেক মানুষ এ কাজের সঙ্গে যুক্ত। মহামারির সময়টা সবার জন্য কঠিন ছিল। প্রথমদিক বেশ কয়েক মাস কাজ বন্ধ ছিল।
কিন্তু বসে থাকিনি। ডিজিটালি এগিয়েছি। কী করে আগানো যায়, সেটি নিয়ে ভেবেছি। অনেক ধরনের ডিজাইন করেছি। ডিজাইন করে গামছার টোটব্যাগ, স্কার্ফ, মাস্ক দিয়ে আমরা তাদের বাঁচিয়েছি এবং নিজেরা বেঁচেছি। সাধারণ মানুষের জন্যই এটি তৈরি করা।
তাঁতিদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাঁতের কাপড় কেনার বিকল্প নেই। সবাই ভাবে, একটা শাড়ি কিনলে একজন তাঁতির জন্ম হয়। কিন্তু বিষয়টা তা নয়। অনেক পদক্ষেপ পাড়ি দিয়ে শাড়ি তাঁতির হাতে যায়। ধাপে ধাপে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে নারী জড়িত। চরকা, নাটাই, রং ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত থাকে। যে নারী এ কাজের সঙ্গে যুক্ত, তার পুরো পরিবার দরিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। প্রত্যেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। সারা বাংলাদেশে এমন অনেক নারী আছে। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের নারী আমাদের সঙ্গে যুক্ত। এখানে কোনো সংখ্যা উল্লেখ করতে চাই না। কারণ সংখ্যা বলে আমি কারও কাছ থেকে ফান্ড নিতে চাই না।
আমি বাঙালি মেয়ে। স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত ঢাকায় ছিলাম। বাইরে যখন পড়তে কিংবা কাজ করতে গিয়েছি; আমার মা-বাবা দেশে ছিলেন। সুযোগ পেলেই দৌড়ে আসতাম। বাংলাদেশ চষে বেড়াতাম। আমার মায়ের জন্মস্থান ঢাকা, বাবার জন্মস্থান রংপুর এবং আমার জন্ম চট্টগ্রামে। মনে হয় পুরো বাংলাদেশই আমার! আমাদের কখনও ঘরে বন্দি করে রাখা হতো না। আমি নিজে ঘুরে ঘুরে বাংলাদেশের কোথায় কী আছে তা জেনেছি। শুধু কাপড় খুঁজেছি, তা নয়; কোনখানে কী গান, সাহিত্য হচ্ছে সেগুলোও খুঁজেছি। বিভিন্ন অঞ্চলের খাবারদাবার যে ভিন্ন; তাও জানি। আমি মনে করি, প্রতিটি প্রজন্মের জানা উচিত বাংলাদেশে কোথায় কী আছে। আমাদের কী কী সম্পদ আছে, সেটা আমি জানি। অন্যদেরও জানা উচিত।
তবে তরুণদের মধ্যে ধীরে ধীরে দেশীয় জিনিসের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। তারা শুধু বাইরের সংস্কৃতি গ্রহণ করছে, তা নয়; এখন তরুণরা দেশীয় পোশাক পরছে। তারা ফিউশন, বৈচিত্র্যময় পোশাক পরছে। সেগুলোকে ভালোভাবে গ্রহণ করছে। আগে দেখা যেত খাদির সঙ্গে গেরুয়া কাপড়ের পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা হতো। বিশেষ করে বুদ্ধিজীবীরা এমন ধরনের পোশাক বেছে নিতেন। এখন খাদির মধ্যে বিভিন্ন ধরন এসেছে। রং, টেক্সচার সবকিছুতে এসেছে বৈচিত্র্য। গামছা ফ্যাশনেও বৈচিত্র্য এসেছে।
আগামীর ফ্যাশন নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী। তবে যে কোনো সময় যে কোনো কিছুর পরিবর্তন হতে পারে। করোনা মহামারি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা কতটা অমানবিক ছিলাম। শুধু বাংলাদেশ বা তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো না; সবাই। পৃথিবীর সব দেশকে ভাবিয়েছে করোনা। আমরা আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে কখনও সম্মান করিনি। দূষণ করেছি প্রচুর। করোনা মহামারি পেরিয়ে এখন মানুষ খুব সাধারণ। যাদের জমানো টাকা ছিল তারা সব সঞ্চিত অর্থ খরচ করে ফেলেছে। আমি যেহেতু সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করি, আমার চলাফেরা ওদের সঙ্গেই। এখন মানুষ আগের চেয়ে সচেতন। তারা খাবার কিনতেও সচেতনতা মেনে চলছে। গায়ে কী লাগাবে, তা নিয়েও সচেতন তারা। আমার কাজ সাধারণ মানুষের উন্নয়নে সাহায্য করা। আমি কখনোই এক লাফে বিবি রাসেল হইনি। ধাপে ধাপে যেতে হচ্ছে। নিজের ফোকাস থেকেই গিয়েছি।
আমরা গ্রীষ্ফ্মপ্রধান দেশে বাস করি। যদিও ষড়ঋতুর দেশ বলা হয়, তবে এখানে অধিকাংশ সময় গরম থাকে। গরমের দিনে সিনথেটিক কাপড়ের পোশাক পরলে আরাম বোধ হয় না। ত্বকে সমস্যা দেখা দেয়। যারা এটি পরিধান করে তাদের সমস্যা হয়। গরিবরাও ত্বকের চিকিৎসকের কাছে যায়। ওরাও আগের চেয়ে সচেতন। টাকা আয় করছে। ওদেরকে সচেতন করার জন্যই আমি। আমার একটাই পরিকল্পনা- আমি এসেছি একটি পজিটিভ বাংলাদেশকে দেখতে। হস্তশিল্প ও ডিজাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পজিটিভভাবে গড়তে। আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়- ফ্যাশন কী? তার মানে এটা নয়, আপনি কত টাকা দিয়ে ব্র্যান্ড কিনলেন। আমরা ছোটবেলায় বলতাম, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান- এগুলো মানুষের মৌলিক চাহিদা। এখন আমি বলি, বস্ত্রই প্রথম মৌলিক চাহিদা। একবিংশ শতাব্দীতে এটিই আমার কাছে প্রথম চাহিদা। কারণ একজন ফকিরও যদি খালি গায়ে হাঁটে, তাহলে পুলিশ ধরে নেবে। লজ্জা ঢাকার জন্য কাপড় পরতে হয়। কাপড় ছাড়া কেউ বের হতে পারে না। কেউ সালোয়ার-কামিজ পরে, কেউ টি-শার্ট বা অন্য পোশাক। যে যা-ই পরুক; পোশাক তার জন্য খুব প্রয়োজনীয় বিষয়। এটি বোঝাতেই আমি কাজ করছি এবং বাংলাদেশে এসেছি।
ফ্যাশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কাপড় ছাড়া কেউ বের হতে পারে না। শুধু হাই হিল পরলে কিংবা লিপস্টিক ব্যবহার করলে কেউ ফ্যাশনেবল হয় না। এ জন্য মমতা লাগে। অনেক কিছুর দরকার হয়। আমার একটা স্লোগান আছে- উন্নয়নের জন্য ফ্যাশন। সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আমি গ্রামে গিয়ে কাজ করি। এতে গ্রামের মানুষের উন্নয়ন হয়। আমি বাংলা একাডেমি ও বেগম রোকেয়া পুরস্কার পেয়েছি। এগুলো স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য; ফ্যাশনের জন্য না। আমি নিজেকে শুধু ফ্যাশন ডিজাইনার ভাবি না। আমি শুধু ব্যবসা করি না। গ্রামের সাধারণ মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
রবিঠাকুর আমার ফ্যাশন আইকন। তিনি জমিদার পরিবারের। তিনি লিখতেন, আঁকতেন; চলাফেরাও করতেন ফ্যাশনেবল। সুতরাং তিনি আমার ফ্যাশন আইকন। আমার বাবাও জমিদার পরিবারের। রবিঠাকুরের গল্প, উপন্যাস, সাহিত্যের ভক্ত আমি। তাঁকে দেখে অনেক কিছুই শিখেছি।
অনেকে বলেন, আমাকে দেখে অনেক নতুন উদ্যোক্তা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এ বিষয়ে আমি বলতে চাই, আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয় একেবারে সাধারণ নারী; সাধারণ মানুষ। আমি কোনো গ্রুপ বা সংগঠনের সদস্য না। এসবের সঙ্গে যুক্তও নই। ওসব নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু আমি বলব, পুরো গ্রামের মানুষ আমার। আমি সাধারণ মানুষদের নিয়ে কাজ করি। তাদের ভালোবাসায় বেঁচে আছি। আমি ধান্ধাবাজি করতে দেশে আসিনি। বিবি প্রোডাকশন তা করে না। আমি দেশকে তুলে ধরি দেশের জিনিস দিয়ে। আমি সংগীতের কাছ থেকে অনেক অনুপ্রেরণা ও শক্তি পাই। কাজ করি গান শুনতে শুনতে। লিখি, ডিজাইন করি গান শুনতে শুনতে। এইটুকু অনুপ্রেরণা আমার লাগে।
অনেক শুনি, নতুনরা কাজ করছে। কিন্তু গ্রুপের একজন সদস্য অন্যজনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে; অসততা করছে- এগুলো শুনি।
আমার উল্লেখযোগ্য কাজ রিকশাচিত্র। এটি আমি কেন করেছি, সেটি অনেকেই জানতে চান। আমি পুরান ঢাকায় বড় হয়েছি। ঢাকাকে বলা হয় রিকশার নগরী। চারদিকে রিকশা। তাকিয়ে তাকিয়ে সেসব চিত্র দেখতাম। কত সুন্দর কালার কম্বিনেশন! রিকশা পেইন্ট যারা করে, তাদের আমি শিল্পী বলি। এত সুন্দর করে ওরা আঁকে! ওদের মধ্যে অধিকাংশই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও তাদের নিজের কাজটুকু যত্ন নিয়ে করে। আমি যখন বাংলাদেশে আসি তখন ভাবতে পেরেছি, রিকশাচিত্র কিংবা এসব ডিজাইন এক সময় শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই রিকশাচিত্রকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করতে লাগলাম। দেশের নিজস্ব সংস্কৃতিকে নিয়ে কাজ শুরু করলাম। আমি নিজেও একজন শিল্পী। ছোটবেলা থেকে আঁকতে ভালোবাসি। সেভাবে রিকশাচিত্রের প্রতি আকর্ষণ বোধ করি।
আগেই ভেবেছিলাম, রিকশার পেছন থেকে চিত্র উঠে যাচ্ছে। তাহলে যারা এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, তাদের কী হবে? তারা কি চাকরি করবে? ওদের কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছি আমি। এখন ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক কিছু গড়ে উঠেছে। আর্ট কলেজ কিংবা চারুকলায় যারা পড়েছে কিংবা পড়ছে, তারা অনেক কিছু করতে পারে। অনেক সুযোগ আছে তাদের। কিন্তু রিকশাচিত্র আঁকে এমন মানুষের সে সুযোগ ছিল না। নেইও। তারা এ কাজটি করেই সংসার টিকিয়ে রেখেছে। আমি আমার এখানকার রিকশাচিত্রের কাজগুলো রিকশা আর্টিস্ট দিয়ে করাই। ওরা যেন একটা সুযোগ পায়। যদিও এখন ডিজিটালি অনেকে রিকশা পেইন্ট করে। তবে আমি মূল শিল্পীদের দিয়ে কাজ করাতে পারছি। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার এখানে যে রিকশা পেইন্ট করে, তার পা ভাঙা। সে নিচে বসতে পারে না। ওপরে বসিয়ে তাকে কাজ করার মতো একটা সুযোগ করে দিয়েছি। এই কাজগুলো আমিও করতে পারি। কিন্তু সেটা করি না। ওদের কাজটা আলাদা। আমি ওদের জন্যই এটা বের করেছি। যারা ডিজিটালি বা অন্যভাবে রিকশা পেইন্ট করছে তাদের পণ্য অনেক বিক্রি হয়। তারা খুব দ্রুত করতে পারে। আমরা পারি না। কারণ আমাদের করতে সময় লাগে। আমরা ম্যানুয়ালি করি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর পরিবর্তন হয়। ফ্যাশনে নতুনত্ব আসে; আসে ফিউশন। ভবিষ্যতে আরও অনেক ফিউশন আসবে। তরুণরা কাজ করছে। আমাকে এখন পুরো পৃথিবী ডাকছে। এখন থেকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় নিয়েছি নিজের কাজগুলো শেষ করার জন্য। আমার খুব ছোট্ট একটা সংগঠন। ১০ টাকা খরচ করলেও চিন্তা করে খরচ করতে হয়। আর এ সংগঠন নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এটুকু নিয়ে যদি আমি বাংলাদেশকে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে তুলে ধরতে পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আরও এগিয়ে যাওয়া উচিত। আমি নিজের অর্জন ও কাজকে সম্মান করি। তাঁত ছাড়া কিছু পারি না। আমাদের সঙ্গে যাঁরা কাজ করছেন, আমি মনে করি, তাঁদের হাতে জাদু আছে। আমি আশা করি, ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তারা আমার চেয়েও ভালো করবে। তরুণরা এগিয়ে যাচ্ছে। একজন সৃষ্টিশীল মানুষ সব সময় কাজ করে। ওরা এগিয়ে যায়। কাজ ও সৃষ্টিশীলতার কোনো বয়স নেই। আমি মনে করি, তরুণরাই নতুন বাংলাদেশ গড়বে। এক সময় আমিও তরুণ ছিলাম। যাঁরা আমার সিনিয়র, তাঁদের সঙ্গে আমি এখনও সময় কাটাই। তাঁদের কথা শুনি। তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বে তারাই। তবে বাংলাদেশকে ভালোভাবে জানতে হবে; পড়াশোনা করতে হবে। সাহিত্য জানতে হবে। ফ্যাশনে পড়লে যে খালি হাই হিল পরতে হবে এবং লিপস্টিক পরতে হবে, বিষয়টা তা নয়। সিরিয়াস হতে হবে। সময়ানুবর্তী হতে হবে।
আমার প্রথম শেখা আমার ঘরে। তার পর জয়নুল আবেদিন, কিবরিয়া ভাই, সুলতান ভাই, দেবদাস চাচা, আব্বাসউদ্দীন ভাই, সানজিদা চাচি, ওয়াহেদুল চাচা, জহিরুল হক চাচা- সবাই আমার প্রিয় ছিলেন। বঙ্গবন্ধু, ভাসানী- সবাইকে দেখে বড় হয়েছি। আমার চোখেমুখে পজিটিভ বাংলাদেশ খেলা করে। আমার বাবা-মা আমাকে মাটি ছুঁতে দিয়েছেন। একেবারে আকাশ ছুঁতে বলেননি।
আমি ছোট থেকেই আঁকতাম। কিন্তু আর্ট কলেজে পড়িনি। পড়াশোনা করতাম পাস করার জন্য। ফার্স্ট ক্লাস পেতে চাইনি। যদি আমি ফ্যাশন ডিজাইনার না হতাম, তাহলে আর্কিটেক্ট হতাম। তবে আমি ফ্যাশনে পড়তে চেয়েছি। ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে আমার বাবা-মাও মানা করেননি। আমাকে পড়তে দিয়েছেন। অনেকে অবশ্য সে সময় খুব গসিপ করত। আমার বাবা-মাকে বলত, বিবিকে দর্জি পড়তে দিয়েছে। এখন তারাই বলে, আমি তাদের দেশের সম্পদ। আমি সাধারণ মানুষের বাড়িতে গেলে ওরা খেতে দেয়; পান-সুপারি দেয়। উজ্জ্বল চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ওদের জন্যই বাঁচি। ওরাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। যা-ই হোক, সমকালের ১৮ বছরে পদার্পণে আমার অনেক অনেক ভালোবাসা। আমি চাই সমকাল আরও অনেক এগিয়ে যাক। আরও পজিটিভ নিউজ দিক। সমকাল নামটাও আমার ভালো লাগে। গোলাম সারওয়ার ভাইয়ের বিরাট ভক্ত ছিলাম। মঞ্জু ভাইকেও আমার সালাম। একটা কাগজের সম্পাদকীয় পাতায় আমি মাঝেমধ্যে লিখি। তার নাম সমকাল। সুতরাং সমকালের জন্য রইল অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা।
লেখক
ফ্যাশন ব্যক্তিত্ব
- বিষয় :
- প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০২২
- ১৮ বছরে সমকাল