ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাল্যবিয়ে রোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি

বাল্যবিয়ে রোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি

--

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৬:১৬

বর্তমান সমাজে বাল্যবিয়ে একটি ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান। বাল্যবিয়ের প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে, স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, নারী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে। দেশের মাতৃমৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় আনতে হবে, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। তার জন্য বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা জরুরি। সমাজ থেকে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হলে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। রংপুরে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেছেন আলোচকরা। গত ২৮ নভেম্বর পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ইউএনএফপির যৌথ উদ্যোগে নগরীর পর্যটন মোটেলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠক আয়োজনে মিডিয়া পার্টনার ছিল দৈনিক সমকাল


ড. হোসেন জিল্লুর রহমান
বাল্যবিয়ে বিষয়টি সবার মনোযোগের দাবি রাখে। বাংলাদেশ সরকারও এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। বৈশ্বিকভাবে বাল্যবিয়ে রোধ করার কথা বলা হচ্ছে। ইউএনএফপিএ বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে কাজ করছে। পিপিআরসিও বহুদিন ধরে বাল্যবিয়ে নিয়ে কাজ করে চলেছে। বিষয়টি নিয়ে বহুদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। তার কমিটি আছে, সবই আছে। কিন্তু এখনও এখানে বহু কিছু বাকি থেকে গেছে। আমাদের কর্মকাণ্ডে আরও গতি আনতে হবে। গতি আনতে হলে আমরা অনুভব করেছি- সব পর্যায়ে আলোচনাটির গুরুত্ব পাওয়া দরকার। সে জন্য রংপুরে এ আলোচনা সভাটি করা।
এ মুহূর্তে বাংলাদেশে ১৬ বছর ৩ মাসের মেয়েদের বিয়ে বেশি হচ্ছে। ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রংপুর বিভাগে বাল্যবিয়ের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এ জন্য আমরা রংপুরেই আলোচনা সভা করছি। বাল্যবিয়ে আমাদের জন্য একটা চিন্তার বিষয়। বাংলাদেশে সার্বিক অগ্রগতির বাধায় বাল্যবিয়ে সম্পৃক্ত। আমাদের দেশে যুব সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেশি, কিন্তু আমরা যদি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দিতে না পারি তাহলে তাদের উন্নত মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বিশেষ করে সমাজে মেয়েরা ছিটকে পড়ছে। ফলে আমাদের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ তলানিতে রয়েছে। তার সংখ্যাও সর্বোচ্চ। বাল্যবিয়ের সঙ্গে নারী নির্যাতনেরও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এসবের কারণে প্রজন্মের পর প্রজন্ম দরিদ্রতা গভীর থেকে আরও গভীরতর হচ্ছে। যে কারণে পরবর্তী প্রজন্ম দারিদ্র্যের শিকল থেকে বের হতে পারছে না।
বাল্যবিয়ে বন্ধে অনেক উদ্যোগ ও নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তারপরও বাল্যবিয়ের মাত্রা কমছে না। রংপুর বিভাগে বাল্যবিয়ের মূল কারণ দারিদ্র্য। বাবা-মায়ের সচেতনতারও অনেক ঘাটতি রয়েছে। অনেক বাবা-মা সচেতন হলেও সন্তানের শিক্ষার খরচের বোঝা টানতে পারেন না। নিরাপত্তাহীনতা, যেমন যৌন হয়রানি ও হুমকির কারণে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন মা-বাবারা। যে কারণে দিন দিন বাল্যবিয়ে বেড়ে চলেছে। কাজিদের কারসাজিতেও বাল্যবিয়ে হচ্ছে। কিশোর-কিশোরীরা বলছে, তাদের কথা শোনার কেউ নেই। শুধু বাবা-মাকে সচেতন করলে হবে না, কিশোর-কিশোরীদেরও সচেতন করতে হবে। অনেক কিশোর-কিশোরী পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে। ফলে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তাদের ভালো উপদেশ দিতে হবে। আমাদের এসব বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। এনজিওগুলো এবং সরকার নানাভাবে বাল্যবিয়ে নিয়ে কাজ করছে। এটি অব্যাহত রাখা জরুরি। সবসময় বাল্যবিয়ে বন্ধে লেগে থাকতে হবে এবং লেগে থেকে চেষ্টা করতে হবে।
২০২৩ সালের মধ্যে যেন কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়, সে লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে। অনেক সময় সামাজিকভাবে নানা প্রতিবন্ধকতা কাজ করে। সেই প্রতিবন্ধকতার দেয়ালগুলো ভাঙতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের এসডিজি অর্জন করতে হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধে আমাদের গতি নিয়ে কাজ করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশ এটি পেরেছে। আমরাও পারব। বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে নীতিমালা শক্তিশালী করতে হবে। যৌন হয়রানির বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে। বিভিন্ন ধরনের নারী নির্যাতন নিরোধ কমিটিসহ নানা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। তথ্য সঠিক ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবাগুলো আরও জোরদার করতে হবে। আমাদের সামাজিক অ্যাডভোকেসি বাড়াতে হবে। নতুন উদ্যোগ দরকার। কুসংস্কার দূর করা দরকার। সারাদেশে সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত মনিটরিং দরকার। বাল্যবিয়ে রোধে মাধ্যমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যায় কিনা তা চিন্তা করতে হবে।
এম. শহীদুল ইসলাম
অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। বর্তমান পৃথিবীতে পুরুষের থেকে নারীর সংখ্যা বেশি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জনশুমারি মতে, দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। বাল্যবিয়েকে শুধু সামাজিক সমস্যা হিসেবে না দেখে অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও যে ঝুঁকি তৈরি করছে- এদিকটাতেও গুরুত্ব দিতে হবে। ইউএনএফপিএ বাল্যবিয়ের সমস্যাটি নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করছে। আমরা আশা করছি, রংপুরে আয়োজিত এ বৈঠকের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে নিরসনে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। বাল্যবিয়ের যেসব কারণ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- দরিদ্রতা, অশিক্ষা, সচেতনতার অভাব, প্রচলিত প্রথা ও কুসংস্কার, সামাজিক অস্থিরতা, যৌন নিপীড়ন, মেয়েশিশুর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, নিরাপত্তার অভাব, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, যৌতুক প্রথা এবং বাল্যবিয়ে রোধ-সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া। বাল্যবিয়ের কারণে অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণ, মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যহানি, তালাক, পতিতাবৃত্তি, অপরিপকস্ফ সন্তান প্রসবসহ নানা জটিলতার শিকার হচ্ছে। দেশে বেশিরভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে। বিয়ের ১৩ মাসের মধ্যেই ৬৫ শতাংশ মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গ্রামের মেয়েদের বেশিরভাগই বিয়ের এক বছরের মধ্যে সন্তান জন্ম দেয়। বাল্যবিয়ের ফলে মেয়েদের অপরিণত বয়সে অন্তঃসত্ত্বা এবং অনেকের বাচ্চা প্রসব করতেই মৃত্যু হয়।
ফেরদৌস আলী চৌধুরী
বাল্যবিয়ে বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। তার জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন অনুসারে ছেলেদের বিয়ের বয়স নূ্যনতম একুশ এবং মেয়েদের বয়স আঠারো হওয়া বাধ্যতামূলক। নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক নানা কুসংস্কারের কারণে এ আইনের তোয়াক্কা না করে বাল্যবিয়ে হয়ে আসছে। গ্রামপর্যায়ে বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং, উঠান বৈঠক ও মা সমাবেশ এ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হতে পারে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক বিয়ে বন্ধসহ মামলা করা যেতে পারে।
বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭-তে ২২টি ধারা রয়েছে। তার মধ্যে ১৯ ধারা বিশেষ শর্ত সম্পর্কিত। বাল্যবিয়ে হলেই তার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়া কোনো অবস্থাতে যেন নিকাহ রেজিস্ট্রার না হয়, এমন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। প্রতিটি ইউনিয়নে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। প্রতিটি থানাসহ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক, উইমেন সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে কর্মরত নারী ও শিশুবান্ধব কর্মকর্তারা নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে চলেছেন।
সারথী রানী সাহা
নিরাপত্তাহীনতা ও দরিদ্রতার কারণে মা-বাবারা মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। কিন্তু কয়েক বছর পার না হতেই ওই মেয়েটি বাচ্চাসহ আবার বাবার বাড়িতে চলে আসে। সবার দায়িত্ব নিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। প্রথমে বাবা-মাকে সচেতন করতে হবে। সমাজের নেতৃস্থানীয় ও বিত্তবানদের বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় ক্লাব গড়ে তুলতে হবে। গ্রামে যারা স্কুলে পড়ে, তারা এসব ক্লাবে এসে পত্রিকা পড়বে, বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করবে। এখানে মোটিভেশনটা খুবই জরুরি। স্থানীয় প্রশাসনকে আরও বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাল্যবিয়ের খবর জানামাত্রই প্রশাসনকে জানাতে হবে এবং ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। বাল্যবিয়ের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া যাবে না। হেল্প লাইনগুলো সম্পর্কে বাবা-মা, কিশোর-কিশোরীসহ সবাইকে আরও বেশি জানাতে হবে। বাল্যবিয়ে রোধ করতে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
ডা. শামিম আহম্মেদ
সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নারীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের ক্লাবের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব। তাদের মুক্তির চিন্তা নিজেদের করতে দিতে হবে। এতে তাদের সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখা সহজ হবে। অশিক্ষার কারণেও বাল্যবিয়ের মতো ঘটনা ঘটছে।


নাসিমা জামান ববি
সবকিছু আইন দিয়ে সম্ভব নয়। আমাদের পুলিশের যে সংখ্যা, তাদের দিয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যাবে না। আমরা সব কাজ পুলিশ দিয়ে করে ফেলতে চাই। বাল্যবিয়ে রোধ করতে হলে দরকার সচেতনতা। রংপুর বিভাগে মূল সমস্যা অসচেতনতা। এ জায়গায় আমাদের সবচেয়ে বেশি কাজ করতে হবে। আমাদের অনেক কমিটি আছে। এই কমিটিগুলো কাজীর গরুর মতো। এসব কমিটির সভা নিয়মিত হয় না। সব কমিটি ইউএনওকে দেখতে হচ্ছে। তাঁর একার পক্ষে কতগুলো সভা করা সম্ভব! কমিটিগুলোকে আরও সক্রিয় করতে হবে। তাদের কাজের গতি বাড়াতে হবে। বাল্যবিয়ে রোধে লাল কার্ড কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের লাল কার্ড দেওয়া হয়েছে। ওই লাল কার্ডে পুলিশসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছিল। এই লাল কার্ডের মাধ্যমে অনেক বাল্যবিয়ে আটকে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
মো. আব্দুল ওয়াদুদ
বাল্যবিয়ের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দরকার। বিশ্বের যে দেশে বাল্যবিয়ে নেই, সে দেশের নিয়মগুলো আমরা ব্যবহার করতে পারি। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা দরকার। যতই আলোচনা করা হয়, তার কোনো ফল আসে না। আমাদের ধর্ম থেকেও অনেক কিছু নিতে হবে, তাহলে বাল্যবিয়ে বন্ধে কার্যক্রমগুলো সফল হবে।


সফুরা খাতুন
আমাদের সমাজে যৌতুক প্রথা আছে। মেয়ের বয়স একটু বেশি হয়ে গেলে যৌতুকের পরিমাণও বেড়ে যায়। নিরাপত্তাহীনতার কারণেও বাল্যবিয়ে হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনও নিরাপদ নই। রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানি চলছে। রিকশায়, মার্কেটেও মেয়েরা নানা কটূক্তির শিকার হচ্ছে। মা-বাবারা কখনও কখনও অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে বাধ্য হন। কুসংস্কারের কারণেও বাল্যবিয়ে হচ্ছে। স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণেও অনেক কিশোর-কিশোরী পালিয়ে বিয়ে করছে। পর্নো সাইটের কারণেও বাচ্চারা অনেক সময় ভুল পথে পা দিচ্ছে। এখনকার বাচ্চারা অনেক বিষয় নিয়ে লজ্জা পায় না। এনজিও এবং সুশীল সমাজের যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অনেকের কাজ ঠিকভাবে হয় না। মামলা করতে গেলেও আইনি সহায়তা পাওয়া যায় না। এনজিও, পুলিশ ও সুশীল সমাজকে বাল্যবিয়ে রোধে একযোগে কাজ করতে হবে। ভারতে ১৮ বছরের পর বিয়ে দিলে মেয়ের বিয়ের খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আমাদের দেশেও এটি চালু করা যেতে পারে।
সামশেদ বেগম
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিনা পয়সায় পড়ানো হচ্ছে, আবার শিক্ষাবৃত্তিও দেওয়া হচ্ছে। তবে সবাই পায় না, পারিবারিক অবস্থা দেখে দেওয়া হয়। শিক্ষাবৃত্তি সরকারিভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত করা দরকার। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দেখেছি, কলেজে পড়া ১৮ বছর বয়সে কোনো মেয়ের যেন বিয়ে না হয় তার জন্য একরকম শিক্ষাবৃত্তির প্রচলন আছে। অন্যদিকে বয়ঃসন্ধিকাল বিষয়ে আমাদের শিশুদের বইতে সীমিত আকারে পাঠ থাকে, তাও শিক্ষকরা পড়াতে সংকোচ বোধ করেন। এই বিষয়গুলো যদি আরও বড় পরিসরে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে মেয়েরা আরও ভালোভাবে শিক্ষা নিতে পারবে।

এনায়েত আলী
বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমাদের নানামুখী কার্যক্রম রয়েছে। তবে সেটি করোনাকালীন কিছুটা হলেও বেড়ে গিয়েছিল মানুষ গৃহবন্দি থাকার কারণে। পরবর্তী সময়ে যখন স্কুলগুলো খোলা হয় তখন আমরা পড়ালেখার পাশাপাশি কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। লক্ষণীয় বিষয় হলো, বর্তমানে অনেক স্কুলে সুন্দর পরিবেশ না থাকায় মেয়েরা আসতে অনীহা প্রকাশ করছে। পড়ালেখার পাশাপাশি স্কুলগুলোতে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা, গার্ল গাইডস, লাইব্রেরি- এই বিষয়গুলোর প্রতি যদি বেশি নজর দেওয়া যায় তাহলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ বহুলাংশে সহজ হয়ে আসবে।

শাহানাজ ফারহানা আফরোজ
আজকের আলোচনায় কিশোর-কিশোরী ক্লাব নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারাদেশে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে কিশোর-কিশোরী ক্লাব রয়েছে, যার সদস্য হিসেবে ২০ জন মেয়ে ও ১০ জন ছেলে রয়েছে। এই ক্লাবগুলোতে কিশোর-কিশোরীরা তাদের সুস্থ প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হচ্ছে। এতে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে উপকৃত হচ্ছে। আমাদের একটি হেল্পলাইন রয়েছে ১০৯। এ হেল্পলাইনের প্রচার-প্রচারণার জন্য কাজ করে থাকি আমরা। এ ছাড়া আমরা স্কুল ক্যাম্পেইন প্রোগ্রাম করি। বাল্যবিয়ে, যৌন হয়রানি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার বিষয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়াতে আমরা কাজ করছি। বাল্যবিয়ে রোধে অভিভাবকের পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীদের বেশি সতর্ক করা দরকার।
মো. আকছেদ আলি
আমাদের সমাজে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমরা বিভিন্ন খাতে ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। যদিও নানা ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে আমাদের দেশে বাল্যবিয়ের ঝুঁকি বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে যদি ঝুঁকিপূর্ণ কিশোরীদের খুঁজে বের করতে পারি, আমাদের কাজের সার্থকতা বাড়বে। শুধু কিশোর-কিশোরী কিংবা নারীদের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করলে হবে না, পুরুষদের নিয়েও কাজ করতে হবে। আমরা বাল্যবিয়ের ঝুঁকি মোকাবিলায় কিশোর-কিশোরী এবং নারী-পুরুষ মিলিয়ে এলাকাভিত্তিক ৬০ সদস্যের কমিটি গঠন করে কাজ করছি। বাল্যবিয়ে নিরসনে আমরা উঠান বৈঠক, মিলনমেলার মতো আয়োজন করছি। পাশাপাশি আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কিশোরীদের চিহ্নিত করছি। এ ছাড়া জন্মনিবন্ধন ডাটাবেজ এমনভাবে করা দরকার যেন একই ব্যক্তি নামের একটু এদিক-ওদিক করে একাধিক জন্মনিবন্ধন না করতে পারেন।
কে. এম. আলি সম্রাট
বাল্যবিয়ে রোধে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। কুড়িগ্রামের মতো জেলার প্রান্তিক এলাকার ৯০ ভাগ মেয়ে কিন্তু বাইসাইকেলে করে স্কুলে যাচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে, কারণ সেখানে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করা হয়েছে। মেয়েরা সাইকেল চালাতে অস্বস্তি বোধ করছে না। অভিভাবক যদি সচেতন না হন, আমাদের ছেলেমেয়েরা সচেতন হবে না। প্রজেক্টভিত্তিক কাজ না করে সচেতনতা কর্মসূচি সারাবছর চলমান রাখতে হবে।


মো. মোসাদ্দেকুর রহমান
যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত সমাজের চিত্র বদলাবে না। কিশোরী, নারী এবং মায়েদের প্রতি আমাদের সম্মান দেখানো দরকার। এ জায়গাগুলোতে বড় ধরনের ফাঁক থেকে গেছে। আমরা শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করছি। আমাদের একটি হেল্পলাইন আছে ১০৯৮, তার মাধ্যমে আমরা বাল্যবিয়ে বন্ধ করাসহ শিশুর সহায়তায় নানা সেবা দিয়ে থাকি।


মো. মঈনুল ইসলাম
বাল্যবিয়ে রোধে সমাজে মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। আমরা একটি জরিপ করেছিলাম। এ জরিপে বাংলাদেশে ১৪টি জেলার বিবাহিত ৭ হাজার ১৬৩ জন অংশ নিয়েছিল। এ জরিপের ফলাফলে ৯২ শতাংশ বলেছেন, মেয়েকে বিয়ে দেওয়া ধর্মীয় দায়িত্ব। সাংসারিক মেয়েদের পাত্রী হিসেবে বেশি পছন্দ বলেছেন ৮৮ শতাংশ। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশি নিরাপত্তা প্রয়োজন বলেছেন ৮৫ শতাংশ। কম বয়সী মেয়েরা বেশি আপস করেন বলে জানিয়েছেন ৭৩ শতাংশ। বিয়ের মাধ্যমে মেয়েরা সামাজিক মর্যাদা পায় বলে জানিয়েছেন ৭০ শতাংশ। সন্তান জন্মদান ও লালন-পালন করাই মেয়েদের প্রধান কাজ বলেছেন ৭০ শতাংশ। অবিবাহিত বয়স্ক মেয়েরা অপবাদের কারণ বলেছেন ৬২ শতাংশ। বয়স বেশি হলে মেয়েদের বেশি যৌতুক দিতে হয় বলে মনে করেন ৮৭ শতাংশ। ৫৪ শতাংশ বলেছেন, কম বয়সী মেয়েরা বেশি নমনীয় এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়। উপযুক্ত পাত্র পেলে বিয়ে দিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ৫০ শতাংশ। ২ শতাংশ নারী বলেছেন, বাল্যবিয়ে রোধে পুরুষের ভূমিকা জরুরি। এটা হলো সমাজের চিত্র। সমাজের পরিকল্পনা আছে কিন্তু সেসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে কমিটিগুলো সক্রিয় নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। সবাইকে সবার দায়িত্বটুকু ঠিকমতো পালন করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যৌথ কার্যক্রম দরকার। তাহলে সমাজে পরিবর্তন আসবে। বাল্যবিয়ে বন্ধ না হলে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় যেতে পারবে না। এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে আট বছর বাকি আছে। বাল্যবিয়ে বন্ধ না হলে এসডিজি অর্জন করা যাবে না।
মাহবুবুর রহমান
অভিজ্ঞতা থেকে আমি দেখেছি, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা বাল্যবিয়ের একটি বড় কারণ। বাবা-মা হয়তো কাজের জন্য বাড়ির বাইরে থাকছেন বাসায় মেয়েকে একা রেখে। বাড়িতে একা মেয়েটি যে নিরাপদে আছে, সেটি তো বলা যাবে না। তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকার কারণে বাবা-মা তাদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। মঙ্গা বা অভাবের কারণে বাল্যবিয়ে হয় না, এটি হয় সচেতনতার অভাবে।

জাওয়াদ আমীন
ইউএনএফপিএ মূলত সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে। ২০১৯ সালের জরিপে বাল্যবিয়ের হার ছিল ৫১ শতাংশ। তবে আশার কথা, বাল্যবিয়ে কমছে। বাল্যবিয়ে নিরোধকল্পে সরকারের একটি রোডম্যাপ কিংবা কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনাগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে শর্টটার্ম ২০২১ সাল পর্যন্ত, ২০২৫ সাল পর্যন্ত মিডটার্ম এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত লং টার্ম ধরে নিয়ে। বাল্যবিয়ে রোধের এ কার্যক্রম মনিটরিংয়ের কথাও বলা আছে। এটি নিয়ে ২৪টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তবে এখানে সমন্বিত একটি ড্যাশবোর্ড থাকা দরকার, তাহলে বোঝা যাবে কোন মন্ত্রণালয় কোথায় কাজ করছে, তার ফলাফল কী।
আশরাফুল আলম
যে কোনো সমস্যা সমাধানে আমাদের আগে জানতে হবে আমরা এখন কোথায় আছি। বাল্যবিয়ে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসার জন্য আমাদের কি কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে, যার মাধ্যমে আগামী দুই কিংবা তিন বছরে বাল্যবিয়ে এই সংখ্যায় নামিয়ে আনতে পারব? আসলে আমাদের আগে দরকার একটি রোডম্যাপ, তারপর সেটি বাস্তবায়নে সঠিক পদক্ষেপ। একটি বাল্যবিয়ে হলে কতটা অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় এবং না হলে কতটুকু অর্থনৈতিক উপযোগিতা যোগ হয়, সেটিও জানা দরকার। কোন এলাকায় বাল্যবিয়ে কেমন- এটি নিয়ে একটা ম্যাপিং থাকা দরকার। সেটি হলে এলাকাভিত্তিক বাল্যবিয়ে নিরসনে সহজে উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হতো।
মশিউর রহমান
আমরা আজ অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের একটি মাইলস্টোন ঠিক করতে হবে। আধুনিক টেকনোলজি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। অনেক নারী মোবাইল বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। কিশোরীরা ভালো ফল অর্জন করতে না পারলে অনেক সময় বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক তারা যেন ভালো করতে পারে- এটি নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।

মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াজেদ
পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় বাল্যবিয়ে কীভাবে বন্ধ করেছে, সেই উদাহরণগুলো মানুষের মাঝে তুলে ধরা দরকার। মুসলিম দেশগুলো কী করছে, সেটিও আমাদের জানা দরকার। ধর্মে কী আছে, সেটিও জানা দরকার। ধর্ম জীবনকে সহজ করার জন্য এবং এর নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। কিছু পরামর্শ ও প্রবিধান আছে, কিন্তু কিছু লোক তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধর্মীয় শব্দগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ১৯৮৫ সালে একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করার একটি মামলা পরিচালনা করেছি। আইন অনুযায়ী যদি একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম করে, তখন তার বয়স ১৪ বছরের কম হয়, তাহলে আইন বলে যে এটি ধর্ষণ। এবং আমরা তারপর আইন দ্বারা এটি পরিচালনা করি। আমাদের সমাজে এই ধরনের ঘটনা এখনও ঘটে এবং এটি উদ্বেগজনক। আমাদের আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিয়ের বিষয়ে মেধা খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
হাসান জাকির
বাল্যবিয়ে অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। রংপুরের এ গোলটেবিল বৈঠকে মাঠপর্যায়ের বাল্যবিয়ে সম্পর্কে যে বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে তার পথ ধরে যদি আমরা এগোতে পারি, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা অনেকাংশে সহজ হবে। বাল্যবিয়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি কী, চ্যালেঞ্জ কোথায়- এ বিষয়ে যদি সঠিক তথ্য-উপাত্ত থাকে, গণমাধ্যম তা প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আলোকপাত করতে পারে। আশা করছি, এ বিষয়ে আমরা হালনাগাদ সঠিক চিত্র জানতে পারব।

মূল বক্তা
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান
চেয়ারম্যান, পিপিআরসি

আলোচক
এম শহীদুল ইসলাম
চিফ অব পপুলেশন প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ, ইউএনএফপিএ

মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াজেদ
সিনিয়র ফেলো, পিপিআরসি

মো. মঈনুল ইসলাম
অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব পপুলেশন সায়েন্সেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ফেরদৌস আলী চৌধুরী
পুলিশ সুপার, রংপুর

নাসিমা জামান ববি
চেয়ারম্যান, রংপুর সদর উপজেলা পরিষদ
আশরাফুল আলম
সহকারী পুলিশ সুপার, রংপুর

ডা. শামিম আহম্মেদ
সিভিল সার্জন, রংপুর

মাহবুবুর রহমান
সভাপতি, রংপুর প্রেস ক্লাব

মশিউর রহমান
ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট অফিসার, ইউএনএফপিএ

জাওয়াদ আমীন
প্রোগ্রাম অফিসার, ইউএনএফপিএ

মো. এনায়েত আলী
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, রংপুর

মো. আব্দুল ওয়াদুদ
ইমাম, রংপুর

শাহানাজ ফারহানা আফরোজ
ডেপুটি ডিরেক্টর, ডিডব্লিউএ

কে. এম. আলি সম্রাট
এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, পাস

মো. মোসাদ্দেকুর রহমান
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, রংপুর

মো. আকছেদ আলি
জোনাল ম্যানেজার, ব্র্যাক

সামশেদ বেগম
সদস্য, টিআইবি

সফুরা খাতুন
উপস্থাপিকা, বাংলাদেশ বেতার

সারথী রানী সাহা
এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর
সিড অর্গানাইজেশন

হাসান জাকির
সহকারী সম্পাদক, সমকাল

অনুলিখন
জাহিদুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক, সমকাল

ইভেন্ট সহযোগিতায়
এটিএম মাজহারুল আলম মিলন
পীরগঞ্জ প্রতিনিধি, সমকাল

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×