- বিশেষ আয়োজন
- কালরাত্রির পরের কথা
কালরাত্রির পরের কথা

একাত্তরে আমি ছিলাম দশম শ্রেণির ছাত্র। পড়তাম কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে। কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যের সেই প্রারম্ভিক সময়ে রাজনীতির দীক্ষা নিয়েছিলাম। '৬৮-'৬৯-এর গণআন্দোলনে কিশোর নেতা হিসেবে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত থাকতাম প্রতিটি সমাবেশ ও মিছিলে। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি।
বঙ্গন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর গঠিত হয় সর্বদলীয় মহকুমা সংগ্রাম পরিষদ। ছাত্র সংগঠনগুলোর নির্দেশে ইতোপূর্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদও গঠিত হয়েছিল। সে সময় কিশোরগঞ্জকেন্দ্রিক আন্দোলনগুলোতে অন্য অনেকের সঙ্গে তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে আমরা কতিপয় বন্ধু নিয়মিত অংশগ্রহণ করে ছাত্রদের সুসংগঠিত করি।
মূলত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর দেশের দৃশ্যপট আমূল বদলে যেতে থাকে। বিভিন্ন জেলায়, মহকুমায়, থানায় ও ইউনিয়নে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। কিশোরগঞ্জ মহকুমা শহরেও তরুণ ও যুবকরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। শহরের আজিমউদ্দিন হাই স্কুল মাঠ ও আখড়াবাজারের শতাব্দীপ্রাচীন আখড়ার খোলা চত্বরে তরুণ-যুবকরা সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। প্রথম পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিতেন একজন অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সৈনিক। পরে হারুয়া এলাকার জনৈক জসীমউদ্দিন তরুণ-যুবকদের দেশীয় অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেন।
২৫ মার্চ কালরাত্রির পর দেশব্যাপী শুরু হয় টানটান উত্তেজনা। ওই রাতেই বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিশোরগঞ্জেও সেই স্বাধীনতার বার্তা পৌঁছে যায়। এর মধ্যেই বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সেনা অফিসার মেজর সফিউল্লাহ্ তার ট্রুপস নিয়ে জয়দেবপুর সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি ময়মনসিংহ হয়ে ১ এপ্রিল তার সৈন্যদের নিয়ে কিশোরগঞ্জে চলে আসেন।
১৯ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরের পর ভৈরবের দিক থেকে একদল পাকসেনা ট্রেনযোগে কিশোরগঞ্জের দিকে এগিয়ে আসে। কিশোরগঞ্জ-যশোদল স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আগে থেকেই রেললাইন উপড়ে রেখেছিল। ফলে হানাদার বাহিনী যশোদল স্টেশনের কাছে ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে শহরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। শহরে এসেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সর্বত্র তাদের জোরালো টহল বৃদ্ধি পায়। সেই অবরুদ্ধ কঠিন সময়ে আমরা তরুণ দল এক দুঃসাহসিক কাজ করি। সে সময় শহরতলির কাতিয়ারচর গ্রামে ইউসুফ আলী বেপারীর একটি ইটের ভাটা ছিল। আমি কাগজ ও রং সংগ্রহ করি। আমার দুই বন্ধু আফতাব ও সেলিম রেজাকে নিয়ে সেই ইটভাটায় অবস্থান নিই। সেখানে বসে আমরা বেশকিছু পোস্টার লিখি। পোস্টারের ভাষা ছিল, 'বইয়ের পাতায় ছুরি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো', 'স্কুল-কলেজ বর্জন করো, মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ো' ইত্যাদি। এসব পোস্টার লিখে অবরুদ্ধ শহরে নিজ বিদ্যাপীঠ কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে সেইসব পোস্টার সাঁটিয়ে দিই। পরদিন স্কুল খোলার পর এই পোস্টারের বিষয়টি ছাত্র-শিক্ষকসহ অন্য সবাইকে আতঙ্কিত করে তোলে। খবর পেয়ে দখলদার বাহিনীর সৈন্যরা এসে সারা স্কুলে ব্যাপক তল্লাশি চালায়।
হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দালালদের কারণে ক্রমেই দেশে অবস্থান করা আমার জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তাই একপর্যায়ে আমি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। মে মাসের আনুমানিক ১ বা ২ তারিখ আমি মতিউর রহমান, রেজাউল করিম খসরু, গোলাম রব্বানী মুক্তু, আবদুল হামিদ হারুন, তমিজউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম মেনু ও গোলাম সারওয়ার রতনসহ যশোদল, গুণধর হয়ে হাওরের মিঠামইন থানায় চলে যাই। উদ্দেশ্য ছিল সেখানে গিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমএনএ আবদুল হামিদ সাহেবের (বর্তমানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি) সঙ্গে দেখা করা। কিন্তু তারা সেখানে পৌঁছে জানতে পারে কয়েকদিন আগেই হামিদ সাহেব সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গিয়েছেন।
স্থানীয় মইশাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাত্রিযাপন করে পরদিন পায়ে হেঁটে নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি যাই। সেখানে এক মহিলার আতিথ্য গ্রহণ করে চলে যাই সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ থানার মেজু মোড়লের বাড়িতে। মেজু মোড়ল ছিলেন মুসলিম লীগের স্থানীয় নেতা এবং দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর দালাল। তার বাড়িতে গেলে তিনি আমাদের কৌশলে আটক করে ফেলেন। পরদিন আমাদের পাকিস্তান সেনাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে স্থানীয় এক কলেজপড়ূয়া তরুণের সহযোগিতায় আমরা পালিয়ে চলে আসি তাড়াইল থানার ধলা গ্রামে। সেখানে চৌধুরীবাড়িতে অবস্থান নেওয়া ইপিআরের সদস্যদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আমরা মেঘালয়ের মহেশখলা ইয়ুথ ক্যাম্পে চলে যাই।
কিছুদিন পর মহেশখলা থেকে আবার দেশে ফিরে আসি। পরে আবারও ১৫/১৬ জনের সঙ্গে টেকেরঘাট চলে যাই। টেকেরঘাটে তখন ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সেখান থেকে মিস্টার গুপ্তের চিঠি নিয়ে আমরা মহেশখলায় সেকান্দর নূরীর কাছে যাই। মেঘালয়ের তুরা ট্রেনিং সেন্টারে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বল্পমেয়াদি সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ভারতীয় কর্নেল মিস্টার মুরারির তত্ত্বাবধানে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষণ শেষে গ্রুপ কমান্ডার আবদুল হামিদের অধীনে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে নামি। সশস্ত্র যুদ্ধের প্রথম অভিজ্ঞতা হয় হাতিবান্ধা সীমান্ত এলাকায়। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে হাতিবান্ধা সীমান্তবর্তী এলাকায় পাকিস্তানি সৈন্যদের ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়ে অন্তত ২৫ জন সৈন্যকে হত্যা করি আমরা। এই অভিযানের সংবাদ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকেও প্রচার করা হয়েছিল।
১৭ ডিসেম্বর চতুর্দিক থেকে শত শত সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা কিশোরগঞ্জের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই চতুর্মুখী মরণপণ অভিযানে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে স্থানীয় রাজাকাররা কিশোরগঞ্জ ছেড়ে দিজ্ঞ্বিদিক পালিয়ে যায়, কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়, অন্যরা ধৃত হয়ে বিজয়ী বাহিনীর হাতে বন্দিত্ববরণ করে। এভাবেই ১৭ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের বুকে উত্তোলিত হয় বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা।
লেখক, মুক্তিযোদ্ধা
অনুলিখন ::সাইফুল হক মোল্লা দুলু, নিজস্ব প্রতিবেদক, কিশোরগঞ্জ
বঙ্গন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর গঠিত হয় সর্বদলীয় মহকুমা সংগ্রাম পরিষদ। ছাত্র সংগঠনগুলোর নির্দেশে ইতোপূর্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদও গঠিত হয়েছিল। সে সময় কিশোরগঞ্জকেন্দ্রিক আন্দোলনগুলোতে অন্য অনেকের সঙ্গে তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে আমরা কতিপয় বন্ধু নিয়মিত অংশগ্রহণ করে ছাত্রদের সুসংগঠিত করি।
মূলত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর দেশের দৃশ্যপট আমূল বদলে যেতে থাকে। বিভিন্ন জেলায়, মহকুমায়, থানায় ও ইউনিয়নে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। কিশোরগঞ্জ মহকুমা শহরেও তরুণ ও যুবকরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। শহরের আজিমউদ্দিন হাই স্কুল মাঠ ও আখড়াবাজারের শতাব্দীপ্রাচীন আখড়ার খোলা চত্বরে তরুণ-যুবকরা সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। প্রথম পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিতেন একজন অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সৈনিক। পরে হারুয়া এলাকার জনৈক জসীমউদ্দিন তরুণ-যুবকদের দেশীয় অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেন।
২৫ মার্চ কালরাত্রির পর দেশব্যাপী শুরু হয় টানটান উত্তেজনা। ওই রাতেই বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিশোরগঞ্জেও সেই স্বাধীনতার বার্তা পৌঁছে যায়। এর মধ্যেই বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সেনা অফিসার মেজর সফিউল্লাহ্ তার ট্রুপস নিয়ে জয়দেবপুর সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি ময়মনসিংহ হয়ে ১ এপ্রিল তার সৈন্যদের নিয়ে কিশোরগঞ্জে চলে আসেন।
১৯ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরের পর ভৈরবের দিক থেকে একদল পাকসেনা ট্রেনযোগে কিশোরগঞ্জের দিকে এগিয়ে আসে। কিশোরগঞ্জ-যশোদল স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আগে থেকেই রেললাইন উপড়ে রেখেছিল। ফলে হানাদার বাহিনী যশোদল স্টেশনের কাছে ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে শহরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। শহরে এসেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সর্বত্র তাদের জোরালো টহল বৃদ্ধি পায়। সেই অবরুদ্ধ কঠিন সময়ে আমরা তরুণ দল এক দুঃসাহসিক কাজ করি। সে সময় শহরতলির কাতিয়ারচর গ্রামে ইউসুফ আলী বেপারীর একটি ইটের ভাটা ছিল। আমি কাগজ ও রং সংগ্রহ করি। আমার দুই বন্ধু আফতাব ও সেলিম রেজাকে নিয়ে সেই ইটভাটায় অবস্থান নিই। সেখানে বসে আমরা বেশকিছু পোস্টার লিখি। পোস্টারের ভাষা ছিল, 'বইয়ের পাতায় ছুরি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো', 'স্কুল-কলেজ বর্জন করো, মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ো' ইত্যাদি। এসব পোস্টার লিখে অবরুদ্ধ শহরে নিজ বিদ্যাপীঠ কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে সেইসব পোস্টার সাঁটিয়ে দিই। পরদিন স্কুল খোলার পর এই পোস্টারের বিষয়টি ছাত্র-শিক্ষকসহ অন্য সবাইকে আতঙ্কিত করে তোলে। খবর পেয়ে দখলদার বাহিনীর সৈন্যরা এসে সারা স্কুলে ব্যাপক তল্লাশি চালায়।
হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দালালদের কারণে ক্রমেই দেশে অবস্থান করা আমার জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তাই একপর্যায়ে আমি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। মে মাসের আনুমানিক ১ বা ২ তারিখ আমি মতিউর রহমান, রেজাউল করিম খসরু, গোলাম রব্বানী মুক্তু, আবদুল হামিদ হারুন, তমিজউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম মেনু ও গোলাম সারওয়ার রতনসহ যশোদল, গুণধর হয়ে হাওরের মিঠামইন থানায় চলে যাই। উদ্দেশ্য ছিল সেখানে গিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমএনএ আবদুল হামিদ সাহেবের (বর্তমানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি) সঙ্গে দেখা করা। কিন্তু তারা সেখানে পৌঁছে জানতে পারে কয়েকদিন আগেই হামিদ সাহেব সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গিয়েছেন।
স্থানীয় মইশাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাত্রিযাপন করে পরদিন পায়ে হেঁটে নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি যাই। সেখানে এক মহিলার আতিথ্য গ্রহণ করে চলে যাই সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ থানার মেজু মোড়লের বাড়িতে। মেজু মোড়ল ছিলেন মুসলিম লীগের স্থানীয় নেতা এবং দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর দালাল। তার বাড়িতে গেলে তিনি আমাদের কৌশলে আটক করে ফেলেন। পরদিন আমাদের পাকিস্তান সেনাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে স্থানীয় এক কলেজপড়ূয়া তরুণের সহযোগিতায় আমরা পালিয়ে চলে আসি তাড়াইল থানার ধলা গ্রামে। সেখানে চৌধুরীবাড়িতে অবস্থান নেওয়া ইপিআরের সদস্যদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আমরা মেঘালয়ের মহেশখলা ইয়ুথ ক্যাম্পে চলে যাই।
কিছুদিন পর মহেশখলা থেকে আবার দেশে ফিরে আসি। পরে আবারও ১৫/১৬ জনের সঙ্গে টেকেরঘাট চলে যাই। টেকেরঘাটে তখন ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সেখান থেকে মিস্টার গুপ্তের চিঠি নিয়ে আমরা মহেশখলায় সেকান্দর নূরীর কাছে যাই। মেঘালয়ের তুরা ট্রেনিং সেন্টারে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বল্পমেয়াদি সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ভারতীয় কর্নেল মিস্টার মুরারির তত্ত্বাবধানে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষণ শেষে গ্রুপ কমান্ডার আবদুল হামিদের অধীনে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে নামি। সশস্ত্র যুদ্ধের প্রথম অভিজ্ঞতা হয় হাতিবান্ধা সীমান্ত এলাকায়। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে হাতিবান্ধা সীমান্তবর্তী এলাকায় পাকিস্তানি সৈন্যদের ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়ে অন্তত ২৫ জন সৈন্যকে হত্যা করি আমরা। এই অভিযানের সংবাদ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকেও প্রচার করা হয়েছিল।
১৭ ডিসেম্বর চতুর্দিক থেকে শত শত সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা কিশোরগঞ্জের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই চতুর্মুখী মরণপণ অভিযানে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে স্থানীয় রাজাকাররা কিশোরগঞ্জ ছেড়ে দিজ্ঞ্বিদিক পালিয়ে যায়, কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়, অন্যরা ধৃত হয়ে বিজয়ী বাহিনীর হাতে বন্দিত্ববরণ করে। এভাবেই ১৭ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের বুকে উত্তোলিত হয় বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা।
লেখক, মুক্তিযোদ্ধা
অনুলিখন ::সাইফুল হক মোল্লা দুলু, নিজস্ব প্রতিবেদক, কিশোরগঞ্জ
মন্তব্য করুন