করোনায় বিশ্বজুড়ে যে স্তব্ধতা আর শোকের গল্প লিখেছে, তা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। প্রতিটি দেশ, প্রতিটি অঞ্চল হয়ে উঠেছিল একেকটি মৃত্যুপুরী। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য প্রায় সব দেশেই বাধ্যতামূলক লকডাউন বা কারফিউ জারি করেছিল সেসব দেশের সরকার। দীর্ঘ লকডাউনে ঘরবন্দি মানুষ, ঘরে থেকেই একে অন্যকে সাহস জুগিয়েছে নানাভাবে। সাহস আদান-প্রদানের এই গল্পগুলো বিশ্ববাসীকে অদৃশ্য এক শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রেরণা দিয়েছে।
ঘরে বসে অনলাইনে নানান মজাদার চ্যালেঞ্জ দিয়ে একে অন্যে যেমন সময় কাটিয়েছে, তেমনি বারান্দায়, ছাদে, জানালায় দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষ গান গেয়ে, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, ডিজে পার্টি, ব্যায়াম, খেলাধুলাসহ হাজারো উপায়ে আনন্দ ভাগ করে নিয়েছে, সাহস দিয়েছে একে অপরকে। সাহস আদান-প্রদানের এই গল্প আর ছবিগুলো ইন্টারনেটের বদৌলতে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর সব প্রান্তে।
করোনায় ডাক্তার, নার্স, পুলিশসহ সেবাদাতাদের শুভেচ্ছা জানাতে ভারতের বিভিন্ন শহরে নির্দিষ্ট দিনে লাখো মানুষ একসঙ্গে হাততালি এবং বাজনা বাজিয়ে তাদের অভিবাদন জানায়। ব্রাজিলের প্রখ্যাত ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিশিয়ান সোফিয়া সেক্কাটো তার স্বামীকে নিয়ে রিও ডি জেনিরোর বাসার বারান্দা থেকে প্রায় প্রতি বিকেলেই প্রতিবেশীদের জন্য হাজির হতেন মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা নিয়ে। ইতালির রোম শহরের ডিজে আর্টিস্ট ফ্রান্সিসকো সিল্লেনি তার বাসার ছাদে নিজের যন্ত্রপাতি নিয়ে করেন দীর্ঘ এক অনুষ্ঠান। প্রতিবেশীরা বাসার ছাদ এবং বারান্দায় দাঁড়িয়ে নেচে-গেয়ে তাল মেলায় তার সঙ্গে। স্পেনের বার্সেলোনায় নিজ বাসার ছাদে গিটার হাতে দাঁড়িয়ে পড়েন শিল্পী টরি স্পার্ক। স্প্যানিশ আরেক ব্লুজ গায়ক বেট্রিজ বেরোডিয়া 'বেট্টা' নামে যিনি পরিচিত প্রতি সন্ধ্যায় নিজ বাসার বারান্দায় তার গানে মুগ্ধ হতো সবাই। লেবাননের এক কিশোর মা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে বেছে নেয় এক দারুণ বুদ্ধি। পাশের বাসার এক মাকে এই দিবসের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর জন্য নিজের ছোট্ট ড্রোনে ফুল বেঁধে পাঠিয়ে দেয় তার কাছে। জার্মানির শিল্পী টেরজা হাসে নিজের জানালায় দাঁড়িয়ে গান গেয়ে উদ্বুদ্ধ করেন স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও প্রতিবেশীদের। আমেরিকার নিউ অরলিন্সের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে এলাকাবাসীর জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে শিল্পীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কনসার্ট আয়োজন করা হতো। এ ছাড়া ইউরোপ, আমেরিকার প্রায় সব দেশেই বিভিন্ন এলাকায় বারান্দা বা ছাদ থেকে প্রায় প্রতিদিনই সবাই নিজ নিজ দেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে একে অন্যকে অনুপ্রেরণা জোগাত।
গান পরিবেশনা ছাড়াও ছাদ বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে গানের তালে তালে অনেকে মিলে একসঙ্গে ব্যায়াম বা শরীরচর্চাও করত নিয়মিত। স্পেনের দুই কিশোরীর দুই ছাদে থেকে টেনিস খেলার কথাও অনেকে মনে রাখবেন দীর্ঘদিন। এ ছাড়া বারান্দা এবং জানালায় ঝোলানো থাকত করোনায় সেবাদাতাকর্মীদের জন্য বিভিন্ন পোস্টার এবং ধন্যবাদ সংবলিত লেখা।
এভাবে প্রতিটি দেশের এবং শহরের মানুষ নিজ নিজ উদ্যোগে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নিজেদের চাঙ্গা রাখতে নিত্যনতুন উপায় বের করে একে অন্যকে সাহস জুগিয়েছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন, ভুলে থাকতে চেয়েছেন মৃত্যুমুখর দিনগুলোকে

বিষয় : সাহস আদান-প্রদানের গল্পগুলো...

মন্তব্য করুন