আলোচনার পক্ষে সবাই, ছাড় দেবে না কেউ
উদার দৃষ্টিতে সংলাপ হলে বিএনপিও আসবে

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তক
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০০:৩৬ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০০:৩৬
সমস্যা সমাধানের জন্য রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংলাপে ডাকতে পারেন। সর্বদলীয় আলোচনা একটি সমাধানের দিকে যেতে সহায়ক হবে। বিএনপি না-ও আসতে পারে। যদি সত্যি সত্যি উদার দৃষ্টিতে সংলাপ হয়, তাহলে বিএনপিও আলোচনায় আসবে। এ ছাড়া অন্য কোনো দিকে যেতে চাইলে আমাদের সংবিধান অনুযায়ী জটিলতা তৈরি হবে এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণাসহ আরও কিছু পদক্ষেপ বিধানে লেখা রয়েছে। এটি বিবেচনার বিষয়।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে অত্যন্ত সংকটে রয়েছে। বিশেষ করে বিদেশি শক্তিগুলো ঢাকায় এসে আমাদের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধমক দিচ্ছেন। এ থেকে আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার। আমাদের দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্র ও জাতিকে রক্ষা করতে হবে। আর যতটা পারা যায় জনসাধারণের সমস্যা সমাধান করতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের ডেকে এনেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ১৯৯১ সালে নির্বাচনের এক বছর পর ১৯৯২ সালের শুরুতে শেখ হাসিনা একটি চিঠি লিখেছিলেন বাংলাদেশে অবস্থানরত সাত বিদেশি মিশনে। তিনি লিখেছিলেন, ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন হয়েছে তা সুষ্ঠু হয়নি, সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। বিএনপি সরকারকে বৈধ সরকার হিসেব গণ্য করি না। আপনারাও এ অবৈধ সরকারকে কোনো আর্থিক সহায়তা ও ঋণ দেবেন না। এ ছাড়া রাজনৈতিক সহযোগিতা এ সরকারকে করবেন না। এ চিঠি যেদিন শেখ হাসিনা তাদের দিয়েছিলেন, এর পরের দিন প্রায় সব দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন হয়েছিল।
গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। এভাবে বিদেশি শক্তির কাছে চিঠি লেখা বাংলাদেশের সার্বভৌম ও স্বাধীনতার পরিপন্থি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া দপ্তরে যাওয়া বা দূতাবাসগুলোতে যাওয়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্বের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিএনপি যখন বিরোধী দলে, তখন পত্রিকা ঘাটলে দেখা যায়, তারাও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, ব্রিটিশ হাইকমিশনসহ মার্কিন মিত্র দেশগুলোর মিশনে গিয়েছেন। এভাবে যদি আজ পর্যন্ত ফিরে দেখি, তাহলে দেখব যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় শক্তিগুলোর কাছে আসা-যাওয়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমানভাবে করেছে।
রাজনৈতিক সংকট শুধু এবারই হচ্ছে না। ২০০৬, ২০১৪, ২০১৮ সালের আগেও সংকট হয়েছে। গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অগ্রগতি দেখতে গেলে দেখা যাবে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেরই যেভাবে জনগণের ওপর যতটা নির্ভর করার কথা, ততটা না করে বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করছে। আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়, বিএনপি শাসনামলে বাংলাদেশ টানা পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, প্রথমবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে হবে কি হবে না, তা বহুল অংশে নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। অন্তত শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের চাপে মাথানত করছেন না। প্রধানমন্ত্রী যখন এ ধরনের অবস্থান নিয়েছেন, তখন আমি আনন্দিত হয়েছি। কিন্তু একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি শক্তি ঢাকায় এসে এভাবে চাপ সৃষ্টি করছে, তা মোকাবিলায় বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য দরকার। তবে যে ভাষায় ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কথা বলা হচ্ছে, তা আলোচনার টেবিলে বসানোর জন্য সহায়ক নয়। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র তার আগের ‘মাইনাস-২’ ফর্মুলা নিয়ে এগোচ্ছে। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা ছিল একটি তৃতীয় শক্তিকে সামনে আনবে। সে রকম তৃতীয় শক্তি এখনও কাজ করছে। এ জন্য সব রাজনৈতিক দলকে একত্রে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের সংকট সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। আওয়ামী লীগের লোকজন ছাড়া সবাই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয় না। একটি স্লোগান সবাই দিতে পারে, তা তৈরি না হওয়া জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের।
- বিষয় :
- অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক
- সংলাপ