আলোচনার পক্ষে সবাই, ছাড় দেবে না কেউ
নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে আলোচনায় রাজি

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০০:৩৮ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০০:৩৮
সর্বোচ্চ আদালতের সংক্ষিপ্ত রায়ে দেশের স্থিতিশীলতা, ধারাবাহিকতা, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আগামী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এদিকে মনোযোগী না হয়ে রায়ের কয়েক মাসের মধ্যেই এটি সংসদে নিয়ে বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ।
তবে অনেক দিন পরে পূর্ণাঙ্গ রায়ে দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা নেই। এর মাধ্যমে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে, যা ফৌজদারি অপরাধ। এটি কেন করা হয়েছে, তা বুঝতে বাকি নেই। পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে এনে আজীবন ক্ষমতায় থেকে একদলীয় শাসন কায়েম করতে তা করা হয়েছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অসাংবিধানিকভাবে করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যোগ করা হয়েছিল জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে। আমরা তখন এর বিরুদ্ধে ছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ, জামায়াতসহ অন্যান্য দল আন্দোলন করেছে। জাতীয় ঐক্য হয়েছে বলে বিএনপি গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে সংবিধানে যোগ করেছে।
এখন অনেকে বলেন, সংসদ এটি বাদ দিয়েছে, তারা দিতে পারে। সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেই কোনো দল এককভাবে এটি বাদ দিতে পারে না। যদি এককভাবে কোনো দলকে এটি বাদ দিতে হয়, তাহলে ইশতেহারে উল্লেখ করে ক্ষমতায় এসে বাদ দিতে হবে। সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে কিংবা গণভোটের মাধ্যমে বাদ দেওয়া যেতে পারে।
কারও সুবিধামতো রাজনৈতিক বিষয় মীমাংসিত হবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কোনটি মীমাংসিত বিষয়। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কী হবে। আপনার (হাসানুল হক ইনু) মীমাংসিত বিষয় অন্যের জন্য মীমাংসিত না-ও হতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক শয়তান বলছেন হাসানুল হক ইনু। জবাবে যদি বলি, যারা জীবনে নির্বাচিত হতে পারবে না জেনে একটি অবৈধ সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, তারা আসলে ক্ষমতার হালুয়া-রুটির উচ্ছিষ্টভোগী।
আওয়ামী লীগ বারবার বাহাত্তরের সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। কিন্তু সংবিধান তো পরিবর্তনশীল। ১৯৯৬ সালে কি আওয়ামী লীগের মনে ছিল না যে সংসদীয় গণতন্ত্রে অনির্বাচিত সরকার থাকতে পারে না। বিএনপিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধী ছিল। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যখন জাতীয় ঐকমত্য হয়েছিল, তখন জাতির প্রত্যাশা পূরণে বিএনপি তা মেনে নিয়েছিল। নইলে বিএনপিও এখনকার মতো গুম, খুন করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জেতার পর জোর করে ক্ষমতায় থেকে যেতে পারত।
গত দু’বার সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। দেশ-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্য হয়নি। আওয়ামী লীগ বলছে, আগামীতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবে। প্রশ্ন হচ্ছে সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় কিনা? নিরপেক্ষ নির্বাচন করার সদিচ্ছা আছে কিনা? আওয়ামী লীগ আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে– এটা কেউই বিশ্বাস করে না। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এবার তারা নির্বাচনের দিকে যেতে পারবে না। জাতি মানবে না, গণতান্ত্রিক বিশ্ব মানবে না।
বলা হচ্ছে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ কি নির্বাচিত সরকার? তবে গ্রহণযোগ্য, অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তৈরি হলে নিরপেক্ষ সরকারের আলোচনায় রাজি বিএনপি। কিন্তু এমন পরিবেশ আওয়ামী লীগের অধীনে সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে বহু উন্নয়ন করেছে। তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে ভয় কীসের? বিএনপি গত দু-তিন বছর যে সুশৃঙ্খল আন্দোলন করেছে, এমন অহিংস আন্দোলনের নজির এ দেশে নেই। এরপরও আমাদের ২৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সহিংসতা যতটুকু হয়েছে, সরকারের দিক থেকেই হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশও শান্তিপূর্ণ থাকবে। সহিংসতা হলে আওয়ামী লীগের দিক থেকেই করা হবে।
- বিষয় :
- সংলাপ
- আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী