
ড্রাগন বাগানে তোয়ো ম্রো
তোয়ো ম্রো পাহাড়ে এক আলোর পথিকের নাম। দেশের সুউচ্চ চিম্বুক পাহাড়ে তার বসবাস। সেই চিম্বুক পাহাড়কে আরও আলোকিত করেছেন তোয়ো ম্রো। বিভিন্ন ফলদ বাগান করে আজ নিজে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন, অন্যকেও আলোর পথ দেখাচ্ছেন। নিজ অর্থায়নে বেকার যুবক ও উদ্যোগীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ফলদ বাগানের ফল বিক্রি করে তিনি আজ লাখপতি। অথচ এক সময় তার উল্লেখযোগ্য কোনো সহায় ছিল না। চিম্বুকের বসন্ত ম্রো পাড়ায় তোয়ো ম্রো বাস করেন। বসন্ত পাড়ার কারবারী (পাড়াপ্রধান) চিংরাই ম্রো বলেন, তাদের বসন্ত পাড়াটি প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো। এক সময় পাড়াতে ১০০ পরিবারের বসবাস ছিল। বর্তমানে ২৭টি পরিবার বাস করছে। পাড়ার লোকজন একটা সময় জুম চাষের ওপর নির্ভরশী ছিল। তোয়ো ম্রো পাড়ার লোকদের পাশাপাশি অন্যান্য এলাকার মানুষের চোখও খুলে দিয়েছেন। উন্নত প্রযুক্তিতে বিভিন্ন ফলদ বাগান করে তিনি অনেকের পথপ্রদর্শক।
তোয়ো ম্রোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডিও পার হতে পারেননি। সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের ম্রো আবাসিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি নিজ উদ্যোগে অর্গানিক পদ্ধতিতে পাহাড়ে চাষাবাদের ওপর গবেষণা করছেন। বেকার ও উদ্যোগী যুবকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া শেষে বিভিন্ন ফলদ চারা উপহার দিয়ে থাকেন, যাতে তারা উন্নত বাগান সৃজন করে বেকারত্ব দূর করতে পারেন। এ পর্যন্ত ২৫০ জনকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
২০১৬ সালে বরই ও ড্রাগন ফল বিক্রি করে লাভ করেন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে এ বাবদ শ্রমিক ও পরিচর্যা খরচ বাদ দিয়ে ১০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা লাভ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জাতের আমসহ অন্যান্য জাতের ফল বিক্রি করে লাভ করেন ১৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
তোয়ো ম্রোর তিন ছেলে, এক মেয়ে। এ কাজে তার বড় ছেলে রুমপাও ম্রো সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে সামনে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। আরেকজন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণির ছাত্র। ছুটিতে তার এই দুই ছেলেও বাগানে কাজে সহযোগিতা করে। মাসিক ভিত্তিতে তার কোনো শ্রমিক নেই। প্রয়োজন হলে স্থানীয় শ্রমিক নিয়ে কাজ করেন। বর্তমানে তার ১৫ একর জায়গায় বিভিন্ন ফলদ বাগান রয়েছে। বিভিন্ন জাতের বরই ও ড্রাগন ফলের গাছই বেশি। এ ছাড়া তিনি অন্যের জমিও মেয়াদভিত্তিক ইজারা নিয়ে থাকেন। তার প্রতি বছর ফল উৎপাদন পর্যন্ত ১০-১২ লাখ টাকা শুধু পরিচর্যা ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ হয় বলে জানান। তোয়ো ম্রোর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ মেনপাও ম্রো স্বাবলম্বী হয়েছেন। মেনপাও ম্রো এখন হাতে লাখ টাকা পান। মেনপাও ম্রোর মতো অনেক ম্রো আছে, যারা তোয়ো ম্রোর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ স্বাবলম্বী।
আজকের তোয়ো ম্রোর সাফল্যের পেছনের গল্প বেশ কঠিন। একটা সময় পরিবারে আর্থিক টানাপোড়েন ছিল। জুম চাষ করে কোনোমতে সংসার চলত। তোয়ো ম্রোর জীবন পাল্টাতে শুরু করে ২০০৫ সাল থেকে। রেডলেডি (হাইব্রিড) পেঁপে দিয়ে শুরু হয় নতুন পথ চলা। ২০০ পেঁপের চারা দিয়ে শুরু করেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের মাধ্যমে তাকে এই চারা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। চারা রোপণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত সার্বিক সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন-বান্দরবান জেলার এক কর্মকর্তা। সেই থেকে তার যাত্রা শুরু। এর পর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে তোয়ো ম্রোর গ্রাম বসন্ত ম্রো পাড়া। চিম্বুক সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে পড়ে বসন্ত পাড়ার যাত্রী ছাউনি। ওখান থেকে পূর্বদিকে একটি ঢালু পাহাড়ি ইটের রাস্তা নেমে গেছে। ওই পথ বেয়ে যেতে হয় বসন্ত ম্রো পাড়ায়। এ পাড়ায় পৌঁছার আগে রাস্তার দুই পাশে পাহাড়ের ঢালুতে গড়ে উঠেছে সারি সারি ফলদ বাগান। তোয়ো ম্রোসহ অনেক ম্রো সম্প্রদায়ের ফলদ বাগান রয়েছে। তোয়ো ম্রোর বাগান ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন জাতের বরই, ড্রাগন ফলের গাছ। তার বাগানে বিভিন্ন বিদেশি ফলদ গাছের চারাও রয়েছে। গত বছর বিদেশি আমের জাত কিউজাই, সূর্যডিম, ব্রুনাইকিং, ফাইলংগান রোপণ করেছেন। বাগানে দেশি আমের মধ্যে হাঁড়িভাঙা ও আম্রপালিই বেশি। বরই জাতের মধ্যে আছে আপেল কুল, বাউ কুল, কাশ্মীরি কুল, সিলেট কুল। তার বাগানে বর্তমানে পুরোনো, নতুন মিলিয়ে ৭ হাজার ফলদ গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বরই ১৫০০ এবং ড্রাগন ৩ হাজার।
পাহাড়ের ঢালু ও চূড়ায় বাগানটি হওয়ায় শুস্ক মৌসুমে বাগান পরিচর্যার ক্ষেত্রে পানি সমস্যায় পড়তে হতো তোয়ো ম্রোকে। বর্ষায় পানি রিজার্ভ করে রেখে তা শুস্ক মৌসুমে সেচের ব্যবস্থা হিসেবে বড় বড় পানির ট্যাংক স্থাপন করেছেন। প্রথমদিকে শুস্ক মৌসুমে পানির খুব সমস্যা ছিল। গত বছর ১৩ লাখ টাকা খরচ করে জিএফএসের (গ্রাফিটি ফ্লো সিস্টেম) মাধ্যমে দূর থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন বাগানে। তোয়ো ম্রো বলেন, বাগান শুরুর দিকে প্রথমে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতেন। এখন তা কম ব্যবহার করে অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। তিনি নিজ উদ্যোগে কিছু গবেষণাও চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন। পাহাড়ের ওপরে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে কীভাবে অর্গানিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন উৎপাদন করা যায়, এটা নিয়ে কাজ করছেন।
লেখক: প্রতিনিধি, বান্দরবান
তোয়ো ম্রোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডিও পার হতে পারেননি। সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের ম্রো আবাসিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি নিজ উদ্যোগে অর্গানিক পদ্ধতিতে পাহাড়ে চাষাবাদের ওপর গবেষণা করছেন। বেকার ও উদ্যোগী যুবকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া শেষে বিভিন্ন ফলদ চারা উপহার দিয়ে থাকেন, যাতে তারা উন্নত বাগান সৃজন করে বেকারত্ব দূর করতে পারেন। এ পর্যন্ত ২৫০ জনকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
২০১৬ সালে বরই ও ড্রাগন ফল বিক্রি করে লাভ করেন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে এ বাবদ শ্রমিক ও পরিচর্যা খরচ বাদ দিয়ে ১০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা লাভ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জাতের আমসহ অন্যান্য জাতের ফল বিক্রি করে লাভ করেন ১৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
তোয়ো ম্রোর তিন ছেলে, এক মেয়ে। এ কাজে তার বড় ছেলে রুমপাও ম্রো সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে সামনে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। আরেকজন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণির ছাত্র। ছুটিতে তার এই দুই ছেলেও বাগানে কাজে সহযোগিতা করে। মাসিক ভিত্তিতে তার কোনো শ্রমিক নেই। প্রয়োজন হলে স্থানীয় শ্রমিক নিয়ে কাজ করেন। বর্তমানে তার ১৫ একর জায়গায় বিভিন্ন ফলদ বাগান রয়েছে। বিভিন্ন জাতের বরই ও ড্রাগন ফলের গাছই বেশি। এ ছাড়া তিনি অন্যের জমিও মেয়াদভিত্তিক ইজারা নিয়ে থাকেন। তার প্রতি বছর ফল উৎপাদন পর্যন্ত ১০-১২ লাখ টাকা শুধু পরিচর্যা ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ হয় বলে জানান। তোয়ো ম্রোর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ মেনপাও ম্রো স্বাবলম্বী হয়েছেন। মেনপাও ম্রো এখন হাতে লাখ টাকা পান। মেনপাও ম্রোর মতো অনেক ম্রো আছে, যারা তোয়ো ম্রোর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ স্বাবলম্বী।
আজকের তোয়ো ম্রোর সাফল্যের পেছনের গল্প বেশ কঠিন। একটা সময় পরিবারে আর্থিক টানাপোড়েন ছিল। জুম চাষ করে কোনোমতে সংসার চলত। তোয়ো ম্রোর জীবন পাল্টাতে শুরু করে ২০০৫ সাল থেকে। রেডলেডি (হাইব্রিড) পেঁপে দিয়ে শুরু হয় নতুন পথ চলা। ২০০ পেঁপের চারা দিয়ে শুরু করেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের মাধ্যমে তাকে এই চারা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। চারা রোপণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত সার্বিক সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন-বান্দরবান জেলার এক কর্মকর্তা। সেই থেকে তার যাত্রা শুরু। এর পর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে তোয়ো ম্রোর গ্রাম বসন্ত ম্রো পাড়া। চিম্বুক সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে পড়ে বসন্ত পাড়ার যাত্রী ছাউনি। ওখান থেকে পূর্বদিকে একটি ঢালু পাহাড়ি ইটের রাস্তা নেমে গেছে। ওই পথ বেয়ে যেতে হয় বসন্ত ম্রো পাড়ায়। এ পাড়ায় পৌঁছার আগে রাস্তার দুই পাশে পাহাড়ের ঢালুতে গড়ে উঠেছে সারি সারি ফলদ বাগান। তোয়ো ম্রোসহ অনেক ম্রো সম্প্রদায়ের ফলদ বাগান রয়েছে। তোয়ো ম্রোর বাগান ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন জাতের বরই, ড্রাগন ফলের গাছ। তার বাগানে বিভিন্ন বিদেশি ফলদ গাছের চারাও রয়েছে। গত বছর বিদেশি আমের জাত কিউজাই, সূর্যডিম, ব্রুনাইকিং, ফাইলংগান রোপণ করেছেন। বাগানে দেশি আমের মধ্যে হাঁড়িভাঙা ও আম্রপালিই বেশি। বরই জাতের মধ্যে আছে আপেল কুল, বাউ কুল, কাশ্মীরি কুল, সিলেট কুল। তার বাগানে বর্তমানে পুরোনো, নতুন মিলিয়ে ৭ হাজার ফলদ গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বরই ১৫০০ এবং ড্রাগন ৩ হাজার।
পাহাড়ের ঢালু ও চূড়ায় বাগানটি হওয়ায় শুস্ক মৌসুমে বাগান পরিচর্যার ক্ষেত্রে পানি সমস্যায় পড়তে হতো তোয়ো ম্রোকে। বর্ষায় পানি রিজার্ভ করে রেখে তা শুস্ক মৌসুমে সেচের ব্যবস্থা হিসেবে বড় বড় পানির ট্যাংক স্থাপন করেছেন। প্রথমদিকে শুস্ক মৌসুমে পানির খুব সমস্যা ছিল। গত বছর ১৩ লাখ টাকা খরচ করে জিএফএসের (গ্রাফিটি ফ্লো সিস্টেম) মাধ্যমে দূর থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন বাগানে। তোয়ো ম্রো বলেন, বাগান শুরুর দিকে প্রথমে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতেন। এখন তা কম ব্যবহার করে অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। তিনি নিজ উদ্যোগে কিছু গবেষণাও চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন। পাহাড়ের ওপরে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে কীভাবে অর্গানিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন উৎপাদন করা যায়, এটা নিয়ে কাজ করছেন।
লেখক: প্রতিনিধি, বান্দরবান
মন্তব্য করুন