
নিজের কবুতর খামারে এ. কে. আজাদ সরকার
আকাশে উড়ছে অসংখ্য পাখি। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই কী পাখি উড়ছে। নানা রঙের পাখি, রাস্তায়, বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আশপাশের মানুষ উপভোগ করছেন পাখির ওড়াউড়ি। প্রায় প্রতিদিন বিকেলেই চোখে পড়ে এমন দৃশ্য। দৃশ্যটি গাইবান্ধা জেলা শহরের কলেজপাড়া এলাকার। আর দৃশ্যে উড়ন্ত পাখিগুলো হচ্ছে কবুতর। সময় করে আগ্রহ নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকেও লোকজন আসেন গিরিবাজসহ বিভিন্ন জাতের কবুতরের খেলা দেখতে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কবুতরগুলো নানা ভঙ্গিমায় উড়ে বেড়ায় খোলা আকাশে।
অত্র এলাকার বাসিন্দা এ. কে. আজাদ সরকার। পেশায় স্কুলশিক্ষক। স্থানীয় সরকারি বিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়ান। শিক্ষকতার ফাঁকে শখের বসে গড়ে তুলেছেন কবুতরের বিশাল এক খামার। ২০১৪ সালে এই খামারের গোড়াপত্তন। বাড়ির ছাদের পুরোটাতেই কবুতরের বসবাস। স্থানীয় মানুষ তাকে গাইবান্ধার কবুতরের সম্রাট বলে ডাকে। পাঁচ শতাধিক জোড়া দেশি-বিদেশি জাতের কবুতর রয়েছে বর্তমানে আজাদের এই ভিন্নধর্মী খামারে।
শখের বসে শুরু করলেও কবুতর পালন এখন আর শখের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; এটি তার আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবেও পরিণত হয়েছে। বাড়ির ছাদে লোহার খাঁচা আর সিমেন্টে তৈরি আবাস বানানো হয়েছে কবুতরের জন্য। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কবুতরের বাকবাকুম ডাক আর ডানা ঝাপটানোর শব্দে এক অন্যরকম পরিবেশ বিরাজ করে খামারে সর্বক্ষণ। আজাদ যখন নিজ হাতে খাবার দেন একসঙ্গে নিচে নেমে এসে খাবার খেতে থাকে কবুতরগুলো। কয়েকটি এসে হাতে বসে তার। এ. কে. আজাদের কাছ থেকে জানা যায়, তার এই খামারে বর্তমানে দেশি, গিরিবাজ, ককোয়া, ঘীয়া চুলি, কাগ্জি, মুকখী, লোটনসহ বিভিন্ন জাতের পাঁচশ জোড়া তথা হাজারের বেশি কবুতর রয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জোড়া কবুতর বিক্রি করেন। যা থেকে আয় হয় গড়ে ২০ হাজার টাকারও বেশি।
আজাদের নতুনধারার এই খামার দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে গাইবান্ধার অনেকেই গড়ে তুলেছেন কবুতরের খামার। অনেকে আগে শখের বসে কবুতর পাললেও তারাও এখন শখকে বাণিজ্যিক খামারে পারিণত করেছেন। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে কবুতরের খামার দেখতে আসেন। অনেকে আসেন কবুতরের খামার গড়ার পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা সঞ্চার করতে। কবুতর পালনে আগ্রহীদের আজাদ সরকার নিঃস্বার্থভাবেই প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম জানালেন, 'আমাদের এখানে অতিথি পাখির দেখা না মিললেও আজাদ ভাইয়ের খামারের বিভিন্ন জাতের কবুতরের খেলা দেখতে বেশ ভালো লাগে। বিকেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গিরিবাজ কবুতরের খেলা দেখতে দেখতেই সময় কেটে যায়।' শহরের পশ্চিমপাড়ার আরেক বাসিন্দা ও কবুতর খামারি প্রদীপ চৌহান বললেন, 'গাইবান্ধায় কবুতরের রাজা বলা হয় আজাদ মাস্টারকে। তিনি শখের বশে কবুতরের খামার গড়ে তুললেও এখন সেটি প্রায় বাণিজ্যিক হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। মাত্র কয়েক বছরেই তার খামার সফলতার শীর্ষে অবস্থান করে নিয়েছে। খামারে গেলে দেখা মিলবে সুদৃশ্য কয়েকশ ছোট ছোট খোপ (কবুতরের ঘর)। তার মধ্যে অনেকগুলো ডিম, অনেকগুলো ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে বসে আছে।'
কথা হয় কবুতর খামারি ও শিক্ষক এ. কে. আজাদ সরকারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, শিক্ষকতাই আমার পেশা। স্কুলের বাইরে মূলত শখ এবং সময় কাটানোর জন্যই কবুতর পালন শুরু করি। ছোটবেলা থেকেই কিন্তু কবুতরের প্রতি আমার দুর্বলতা ছিল। এই ভালোবাসা থেকেই ছোট পরিসরে অনেকটা শখের বসেই ২০১৪ সালে মাত্র কয়েক জোড়া কবুতর নিয়ে শুরু করেন নিজের বাসার ছাদের এক কোণে। যা ধীরে ধীরে বিশাল খামারে রূপ নেয়। শুরুতে দেশি জাতের কবুতর পালন করলেও এখন তার খামারে বিভিন্ন জাতের কবুতর রয়েছে। আজাদ সরকার জানালেন, 'দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে খামার দেখতে আসেন। ব্যস্ততার ফাঁকে তাদের সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। বিকেলে যখন কবুতরগুলো আকাশে উড়ে খেলা করতে থাকে, আশপাশের মানুষরা তা দেখে আনন্দিত হয়। এটা দেখতে আমারও বেশ ভালো লাগে। আমার এখানে মূলত ছাড়া (মুক্ত) পদ্ধতিতে পালিত হয় কবুতরগুলো। কবুতরের জন্য প্রতিদিন ১২-১৫ কেজি দানাদার খাবার সরবরাহ করে থাকি।'
কবুতর পালনের সুবিধার পাশাপাশি সমস্যার বিষয়েও জানান আজাদ সরকার, 'ছাদে কবুতর পালনে বড় সমস্যা শিকারি পাখির হানা। বিশেষ করে চিল, কাক প্রভৃতি তাড়া করে কবুতরের ঝাঁককে। এভাবে অনেক কবুতর মারা গিয়েছে, আহত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রোগের সংক্রমণের ঝুঁকিও আছে। তবে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শে এবং স্থানীয় কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগে সুস্থতা ফিরে পায়। শীত-গরমের মাঝামাঝি সময়টাই কবুতর খামার তৈরির উৎকৃষ্ট সময়। তবে বর্ষা, অতি গরম ও অতি শীতে বিশেষ যত্ন নিতে হয় কবুতরের।'
শিক্ষকতার পাশাপাশি অনেকটা শখের বসেই গড়ে তোলা এই কবুতরের খামারের মাধ্যমে ভিন্নধর্মী এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এ. কে. আজাদ সরকার। তাকে দেখে স্থানীয় এবং আশপাশের জেলার অনেক তরুণ বর্তমানে কবুতরের বাণিজ্যিক খামার স্থাপন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
লেখক: প্রতিনিধি, গাইবান্ধা
অত্র এলাকার বাসিন্দা এ. কে. আজাদ সরকার। পেশায় স্কুলশিক্ষক। স্থানীয় সরকারি বিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়ান। শিক্ষকতার ফাঁকে শখের বসে গড়ে তুলেছেন কবুতরের বিশাল এক খামার। ২০১৪ সালে এই খামারের গোড়াপত্তন। বাড়ির ছাদের পুরোটাতেই কবুতরের বসবাস। স্থানীয় মানুষ তাকে গাইবান্ধার কবুতরের সম্রাট বলে ডাকে। পাঁচ শতাধিক জোড়া দেশি-বিদেশি জাতের কবুতর রয়েছে বর্তমানে আজাদের এই ভিন্নধর্মী খামারে।
শখের বসে শুরু করলেও কবুতর পালন এখন আর শখের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; এটি তার আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবেও পরিণত হয়েছে। বাড়ির ছাদে লোহার খাঁচা আর সিমেন্টে তৈরি আবাস বানানো হয়েছে কবুতরের জন্য। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কবুতরের বাকবাকুম ডাক আর ডানা ঝাপটানোর শব্দে এক অন্যরকম পরিবেশ বিরাজ করে খামারে সর্বক্ষণ। আজাদ যখন নিজ হাতে খাবার দেন একসঙ্গে নিচে নেমে এসে খাবার খেতে থাকে কবুতরগুলো। কয়েকটি এসে হাতে বসে তার। এ. কে. আজাদের কাছ থেকে জানা যায়, তার এই খামারে বর্তমানে দেশি, গিরিবাজ, ককোয়া, ঘীয়া চুলি, কাগ্জি, মুকখী, লোটনসহ বিভিন্ন জাতের পাঁচশ জোড়া তথা হাজারের বেশি কবুতর রয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জোড়া কবুতর বিক্রি করেন। যা থেকে আয় হয় গড়ে ২০ হাজার টাকারও বেশি।
আজাদের নতুনধারার এই খামার দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে গাইবান্ধার অনেকেই গড়ে তুলেছেন কবুতরের খামার। অনেকে আগে শখের বসে কবুতর পাললেও তারাও এখন শখকে বাণিজ্যিক খামারে পারিণত করেছেন। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে কবুতরের খামার দেখতে আসেন। অনেকে আসেন কবুতরের খামার গড়ার পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা সঞ্চার করতে। কবুতর পালনে আগ্রহীদের আজাদ সরকার নিঃস্বার্থভাবেই প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম জানালেন, 'আমাদের এখানে অতিথি পাখির দেখা না মিললেও আজাদ ভাইয়ের খামারের বিভিন্ন জাতের কবুতরের খেলা দেখতে বেশ ভালো লাগে। বিকেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গিরিবাজ কবুতরের খেলা দেখতে দেখতেই সময় কেটে যায়।' শহরের পশ্চিমপাড়ার আরেক বাসিন্দা ও কবুতর খামারি প্রদীপ চৌহান বললেন, 'গাইবান্ধায় কবুতরের রাজা বলা হয় আজাদ মাস্টারকে। তিনি শখের বশে কবুতরের খামার গড়ে তুললেও এখন সেটি প্রায় বাণিজ্যিক হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। মাত্র কয়েক বছরেই তার খামার সফলতার শীর্ষে অবস্থান করে নিয়েছে। খামারে গেলে দেখা মিলবে সুদৃশ্য কয়েকশ ছোট ছোট খোপ (কবুতরের ঘর)। তার মধ্যে অনেকগুলো ডিম, অনেকগুলো ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে বসে আছে।'
কথা হয় কবুতর খামারি ও শিক্ষক এ. কে. আজাদ সরকারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, শিক্ষকতাই আমার পেশা। স্কুলের বাইরে মূলত শখ এবং সময় কাটানোর জন্যই কবুতর পালন শুরু করি। ছোটবেলা থেকেই কিন্তু কবুতরের প্রতি আমার দুর্বলতা ছিল। এই ভালোবাসা থেকেই ছোট পরিসরে অনেকটা শখের বসেই ২০১৪ সালে মাত্র কয়েক জোড়া কবুতর নিয়ে শুরু করেন নিজের বাসার ছাদের এক কোণে। যা ধীরে ধীরে বিশাল খামারে রূপ নেয়। শুরুতে দেশি জাতের কবুতর পালন করলেও এখন তার খামারে বিভিন্ন জাতের কবুতর রয়েছে। আজাদ সরকার জানালেন, 'দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে খামার দেখতে আসেন। ব্যস্ততার ফাঁকে তাদের সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। বিকেলে যখন কবুতরগুলো আকাশে উড়ে খেলা করতে থাকে, আশপাশের মানুষরা তা দেখে আনন্দিত হয়। এটা দেখতে আমারও বেশ ভালো লাগে। আমার এখানে মূলত ছাড়া (মুক্ত) পদ্ধতিতে পালিত হয় কবুতরগুলো। কবুতরের জন্য প্রতিদিন ১২-১৫ কেজি দানাদার খাবার সরবরাহ করে থাকি।'
কবুতর পালনের সুবিধার পাশাপাশি সমস্যার বিষয়েও জানান আজাদ সরকার, 'ছাদে কবুতর পালনে বড় সমস্যা শিকারি পাখির হানা। বিশেষ করে চিল, কাক প্রভৃতি তাড়া করে কবুতরের ঝাঁককে। এভাবে অনেক কবুতর মারা গিয়েছে, আহত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রোগের সংক্রমণের ঝুঁকিও আছে। তবে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শে এবং স্থানীয় কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগে সুস্থতা ফিরে পায়। শীত-গরমের মাঝামাঝি সময়টাই কবুতর খামার তৈরির উৎকৃষ্ট সময়। তবে বর্ষা, অতি গরম ও অতি শীতে বিশেষ যত্ন নিতে হয় কবুতরের।'
শিক্ষকতার পাশাপাশি অনেকটা শখের বসেই গড়ে তোলা এই কবুতরের খামারের মাধ্যমে ভিন্নধর্মী এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এ. কে. আজাদ সরকার। তাকে দেখে স্থানীয় এবং আশপাশের জেলার অনেক তরুণ বর্তমানে কবুতরের বাণিজ্যিক খামার স্থাপন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
লেখক: প্রতিনিধি, গাইবান্ধা
মন্তব্য করুন