- বিশেষ আয়োজন
- তারুণ্য জাগলেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ
তারুণ্য জাগলেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ

যুগে যুগে পৃথিবীর বাঁক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তরুণরা। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। দেশের বহু অর্জনের সঙ্গে তরুণদের নাম জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ছিল মূলত তারুণ্যের মহাবিস্টেম্ফারণ। তারা রাষ্ট্রভাষা কমিটির মূল সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ও পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে এসে যে ইতিহাস তৈরি করেছে, সেটা আসলে তারুণ্যের ইতিহাস। আবার এই সময়ে তারুণ্যের বুকে বন্দুক তাক করার কারণে পাকিস্তানিদের এ দেশ থেকে বিদায়ের হিসাব নিশ্চিত হয়। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সুসজ্জিত এবং পৃথিবীর একটা দক্ষ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল এ দেশের লাখ লাখ তরুণ তাদের তারুণ্যের শক্তি ও সাহস নিয়ে। আর পাকিস্তান সেনাবাহিনী মূলত পরাজয় বরণ করেছিল এই তারুণ্যের কাছেই। বর্তমানে তরুণরা উদ্যোক্তা হিসেবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আইটি সেক্টরে তরুণরা ভালো করছে। সারাবিশ্বের বড় বড় কোম্পানিতে যাচ্ছে আমাদের ইয়াং জেনারেশন।
শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী হিসেবে ওয়ার্ল্ড র?্যাঙ্কিংয়ে থাকা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণরা যাচ্ছে। খুব কম বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যাবে, যেখানে বাংলাদেশের শিক্ষক বা শিক্ষার্থী নেই।
অর্জন বলতে আমাদের যেসব বাধাবিপত্তি ছিল, যদি টেকনোলজিতে বলি, তথ্য অ্যাকসেস করায় বাধা ছিল, সামগ্রিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে এখন অ্যাকসেস তো হাতের মুঠোয়। আমি যদি এখন কোনো তথ্য পেতে চাই, আগে যেমন কষ্টসাধ্য ছিল, ব্যক্তিগত পরিচয়ের ওপর নির্ভর করত, এখন এসব সমস্যা সমাধান করতে পারার কারণে তরুণরা তথ্যগুলোতে অ্যাকসেস পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তরুণদের অর্জন আছে।
চ্যালেঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যেটা দেখি, তরুণদের মধ্যে যে প্রবণতাটা স্বাধীনতার সময়ে বা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ছিল, সেটা এখন আর নেই। সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক সচেতনতা। রাজনীতিকে বিভিন্নভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং তরুণদের রাজনীতিবিমুখ করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে। আমাদের ছাত্ররাজনীতি বলতে ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি তা নয়, বরং শিক্ষার অধিকার সেটা রাজনীতির অংশ, এই জায়গাগুলোয় আসলে সচেতনতার জায়গায় আমরা পিছিয়েছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যে ভূমিকা যুদ্ধ সংগঠন করার ক্ষেত্রে ছিল, মানুষের মাঝে সচেতনতা ছড়ানোর ক্ষেত্রে ছিল, সেটা না হলে হয়তো স্বাধীনতা যুদ্ধ হতো না। সে জায়গায় এখন তরুণরা একটু পিছিয়ে আছে এবং অনাগ্রহী।
বিদেশমুখী শিক্ষার্থীদের পেছনেও আমাদের রাজনীতি দায়ী। একজন শিক্ষার্থীকে আমরা স্বপ্ন দেখাতে পারছি না এই দেশে থাকার জন্য। একজন শিক্ষার্থীর খেলার মাঠটুকু পর্যন্ত নেই। যেসব জায়গা আছে, বিভিন্ন প্রভাবশালী মানুষজন প্রভাব খাটিয়ে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে। ঢাকা শহরেই যে সমস্ত খেলার মাঠ ছিল, সে খেলার মাঠগুলোর ইতিহাস নিয়ে লিখতে শুরু করলে দেখা যাবে যে প্রতিটা এলাকার খেলার মাঠ দখল হয়ে মার্কেট বা বিল্ডিং হয়েছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি সময় কাটাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা গেমসে সময় বেশি কাটাচ্ছে। আবার একই সঙ্গে আমরা যে একজন তরুণ ছেলে বা মেয়েকে বাইরে খেলতে পাঠাব তাও তো নিরাপদ নয়। পার্কে পাঠালেও তো নিরাপদ নয়। যেসব পার্ক আছে সেগুলোও তো মাদকসেবীদের আড্ডা। যে মাঠগুলো তার খেলার জায়গা ছিল সেই মাঠগুলো দখল করে মার্কেট বানানো হয়েছে, সেই মার্কেটে গিয়ে তরুণরা মোবাইল কিনছে, ল্যাপটপ কিনছে, কিনে নিয়ে মোবাইলে বা ল্যাপটপে গেম খেলছে। পুরো কাঠামোটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি আর আগের মতো না থাকায় তরুণরা সেখানে আগ্রহ পাচ্ছে না। ফলে বিদেশমুখী হওয়া ছাড়া অন্য কিছু তারা এখন ভাবতে পারছে না।
বিদেশমুখী কেন হচ্ছে যদি একটু ব্যাখ্যা করে বলি, সেক্ষেত্রে আমরা দেখব, প্রথমত হচ্ছে তাদের নিশ্চিত জীবন, সম্মান, কর্মজীবনের স্থায়িত্ব প্রভৃতি বিষয় কাজ করে। সেখানে কেবল বাংলাদেশি হওয়ার কারণে কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না বা তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করে না কেউ। সেখানে নিজের মতো করে পড়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে গবেষণার সুযোগ অপ্রতুল। বিশ্বমানের গবেষকদের মাঝে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজনের নাম আসছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় নেই কেন? তাহলে শিক্ষার্থীরা কেন থাকবে এই দেশে? সবাই তো নিজের জীবনের নিশ্চয়তা চায়। সে ভালো সুযোগ পাচ্ছে তাই বাইরের দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এই রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার জায়গাটা যদি তৈরি করতে আমরা না পারি সেক্ষেত্রে এটা হবেই। এটা তো শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কথা বলছি, এবার তরুণদের বলতে গেলে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পায়নি, তারা কী করছে? তাদের নিয়েও যদি আমরা ভাবি, তারা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে চাচ্ছে, একই সঙ্গে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। সরকার বলে দিচ্ছে ২০ হাজার টাকার বেশি একটা টাকাও খরচ হবে না, তারা এর বাইরেও তিন-চার লাখ টাকা দালালদের দিয়ে বাইরে যেতে চাচ্ছে। ওখানে গিয়ে কোনো ধরনের ওয়ার্ক পারমিট বা ভিসা ছাড়া তারা বিভিন্ন সংকটের মধ্যে পড়ছে। আরও দুঃখজনক দিকটা হলো- সমুদ্র ঘুরিয়ে, থাইল্যান্ড ঘুরিয়ে, মালয়েশিয়া ঘুরিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে অনেকের মৃত্যু। তারপর থাইল্যান্ডে গণকবর আবিস্কার হওয়া যাদের মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছিল, এ মানুষজনের মাঝে আমাদের তরুণরাও ছিল। দেশের যদি উন্নতিই হবে, তাহলে এই জনগোষ্ঠী সমুদ্রে ডুবে বা জলদস্যুদের হাতে কিংবা বেইমানির শিকার হয়ে কেন মারা যাচ্ছে? এর কারণগুলোও তো এ দেশের রাজনীতি, ওদের জন্য কোনো নিরাপদ কর্মসংস্থান তৈরি করতে না পারার কারণে। এ ভুলগুলো কেউ শিকার করে নেয় না। আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বড় অংশই হলো তরুণ। এদের প্রতি আমাদের আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। এসব সংকট থেকে উত্তরণের উপায় আমাদের খুঁজে বের করে দ্রুত সমাধান করতে হবে।
একমাত্র মানুষের সন্তানকেই কিন্তু মানুষের মতো নার্সিং করে বড় করতে হয়। বিড়ালের বাচ্চা জন্মানোর পর বিড়াল হয়েই বেড়ে ওঠে। মানুষের বাচ্চাকে নার্সিং না করলে সে মানুষ হয় না। নার্সিংয়ের ব্যবস্থাটা পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে করতে হয়। এই জায়গাটায় আমাদের ঘাটতি আছে। মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা না সমাজ করেছে, না রাষ্ট্র করেছে। এই ব্যবস্থাগুলো না করে আমরা একটা সময় পর গিয়ে তার কাছ থেকে যদি আশা করি যে সে সব মানবিক গুণের অধিকারী হবে, সে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। তাহলে সে আশা গুড়েবালি হবে। কারণ তরুণদের এগিয়ে যাওয়ার পদে পদে আমরা বাধা দিয়ে রেখেছি।
সৌদিতে যেসব নারী শ্রমিক পাঠাচ্ছি আমরা অনেকেই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং লাশ হয়ে ফিরছেন। এর মধ্যেই অনেকে লাশ হয়ে ফিরেছেন। সারা বাংলাদেশে এ নিয়ে তেমন আলাপ-আলোচনা হয়নি। এর মাঝেও দেখবেন তরুণ-তরুণীরা আছে। আমরা এখনও নারী শ্রমিককে আরবের দেশগুলোতে পাঠাই। তারুণ্যের অপমান তো আমরাই করছি। তরুণদের মেধাকে আরও সম্প্রসারিত করতে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। কারণ তরুণদের হতাশায় ফেলতে দেওয়া যাবে না।
তরুণরা যদি হতাশার জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, সে আত্মহত্যা করছে নয়তো সে দেশ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেটা ওয়ার্ক ভিসা, সেটলমেন্ট ভিসা কিং স্টুডেন্ট ভিসা হোক, যে কোনো উপায়ে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে চাচ্ছে।
তবুও আমি বাংলাদেশকে নিয়ে খুবই আশাবাদী। কারণ নাসাতে খোঁজ নিলে আমরা বাংলাদেশি পাব। আবার নামকরা ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মধ্যেও আমাদের শিক্ষার্থী আছে। এখানে সবাই নিজ যোগ্যতায় দাঁড়াচ্ছে। আমরা নিজ যোগ্যতায় দাঁড়াতে পারছি। কাজেই আমাদের মৌলিক কিছু জায়গায় যদি পরিবর্তন আনা যেত, তারুণ্যের এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যেত। তারুণ্যের এই শক্তিকে বোঝা মনে না করে, বছরে বছরে লাখ লাখ অনার্স ডিগ্রি প্রদান না করে প্রকৃতপক্ষেই যদি তাদের কারিগরি জায়গা থেকে সামর্থ্যবান করে গড়ে তুলতে পারতাম, তাহলে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
একটা উদাহরণ দিই, আমরা রাস্তায় বের হলে কয়টা গাড়ি দেখি যেগুলো পাশের দেশগুলো থেকে আসে? খুবই কম। কিছু এলিট শ্রেণি আছে, যারা পশ্চিমা গাড়ি ব্যবহার করে। তাছাড়া সমস্ত গাড়ি আসে জাপান থেকে। অর্থাৎ জাপানের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির একটা বিশাল পাইকারি মার্কেট আমাদের ২০ কোটি জনসংখ্যার এই বাংলাদেশ। কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে প্রগতি গাড়ির বডি বানাচ্ছিল। প্রগতিকে আমরা পৃষ্ঠপোষকতা করলাম না বরং আমরা জাপানের একটি বাজারে পরিণত হলাম। বরং আমরা যদি উদ্যোগ নিতাম, থাইল্যান্ড মালয়েশিয়ার মতো আমাদের এখানেও টয়োটার প্রোডাকশন হতে পারত। সব নিজস্ব প্রোডাকশন। জাপানি টেকনিশিয়ানরা যদি এসে প্রোডাকশন করত কিন্তু দক্ষ তরুণ জনশক্তি তো আমাদের নিজেদের থাকত। আমাদের এখানে বিগত ৫০ বছরেও হলো না কেন?
কারণ কখনও ভাবিইনি যে আমাদের এখানে আমরা বিশাল তরুণ জনশক্তি তৈরি করতে পারব। মার্সিডিজ বা ল্যাম্বর্গিনির ডিজাইন তৈরি করেছে আমাদের পুরান ঢাকার একটা ছেলে। আমাদের তরুণদের মধ্যে এই শক্তিগুলো আছে কিন্তু আমরা বাঙালিরা নিজেরাই নিজেদের সম্মান করতে শিখিনি এখনও। মূল্য দিতেও শিখিনি। এটা হচ্ছে আমাদের চরম ব্যর্থতা। তারপর নদীকেন্দ্রিক যেসব শহর গড়ে উঠেছে, নদীতে কয়টি লাইসেন্স, ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচল করছে, বিআইডব্লিউটিএর নিজেরও ধারণা নেই। ক'দিন পরপর নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটে মানুষ মারা যায়। অথচ বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হিসেবে নৌ ব্যবস্থাপনা হওয়া উচিত ছিল উন্নতমানের। তারুণ্যকে নিয়ে যদি এভাবে চিন্তা করা হতো, উপযোগী করার জন্য চেষ্টা করা হতো, আমরা তরুণ শক্তি পেতাম। আমরা তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে উন্নতি করতে পারতাম, সারা বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াতাম। এই প্রতিবন্ধকতাগুলো আসলে সব জায়গায় থাকায় তাদের কোনো সুযোগ আমরা করে দিতে পারিনি।
তারুণ্য একটা দেশের ঐশ্বরিক সম্পদ। এই তরুণরাই হিমালয় পর্বতের মাথায় দেশের পতাকা উড়িয়ে আসে, এই তারুণ্য শক্তিই ক্রিকেট কিংবা ফুটবলে নৈপুণ্য দেখিয়ে পৃথিবীর মানুষের মুখগুলো আমাদের দেশের দিকে ঘুরিয়ে আনে। তারা গুগল, নাসার মতো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে বলে আমিই বাংলাদেশ! কাজেই তারুণ্যের এই বাংলাদেশকে জাগাতে হবে। আর এই তারুণ্য জাগলেই দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
তরুণ শক্তিকে ব্যবহার করা তাই সমাজ রূপান্তরের জন্য জরুরি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেসব প্রশ্ন, আমরা তখনই তার মোকাবিলা করতে পারব, যখন সমাজ রূপান্তরে তারুণ্যের অংশগ্রহণকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে পারব। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রের উচিত তারুণ্য শক্তিকে কাজে লাগানোর কার্যকর কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা। শিক্ষা শেষে তরুণরা বেকার থাকবে না, এটা নিশ্চিত করা গেলেই সাফল্যের বড় ধাপের উত্তরণ ঘটে। আর এ জন্য প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষার চমৎকার কিছু পরিকল্পনা, যাতে তাদের অর্জিত জ্ঞান দেশে-বিদেশে সর্বত্র কাজে লাগাতে পারে।
লেখক
আইনজীবী
মন্তব্য করুন