
শাহবাগে গণজাগরণের শুরুটা হয়েছিল ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় আরেকটি দিন। বাংলার মানুষের ইতিহাস আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস। আবহমানকাল ধরে এ দেশের মানুষ অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধিকার আন্দোলন, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পথপরিক্রমায় বাংলাদেশের তারুণ্যের হাত ধরে শাহবাগে গণজাগরণের উন্মেষ। একাত্তরের এক চিহ্নিত ঘাতকের বিরুদ্ধে মামলায় যাবজ্জীবন রায়কে কেন্দ্র করে দেশের লাখো মানুষকে সমবেত করেছিল শাহবাগের এই গণজাগরণ মঞ্চ। লাখো কণ্ঠে দাবি উঠেছিল- '৭১-এর নরঘাতকদের ফাঁসি চাই।
বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মনের একেবারে গভীরতম প্রদেশ থেকে উত্থিত যুদ্ধপরাধীদের প্রত্যাশিত ফাঁসির দাবিতে আত্মপ্রকাশ করা শাহবাগের গণজাগরণ ছিল একাত্তর-পরবর্তী তরুণ প্রজন্মের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম প্রতিবাদী অধ্যায়। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে ট্রাইব্যুনালের যে রায় তার বিরুদ্ধে সর্বশ্রেণির মানুষের যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছিল ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে- সারাদেশের মানুষ অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে সে দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে রাজপথে নেমে এসেছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় ছিল মূলত সকলেরই চাওয়া। শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ গণমানুষের সেই চেতনার প্রত্যাশাকে ধারণ করেই এগিয়ে গেছে এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী এবং পাকিস্তানি দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। বাংলাদেশের তরুণরাই ছিল যার নেতৃত্বে।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি আবদুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণা করে। কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা, আলুব্দি গ্রামে ৩৪৪ জন মানুষ হত্যাসহ মোট ৬টি অপরাধের ৫টি প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। কিন্তু এতোগুলো হত্যা, ধর্ষণ, সর্বোপরি গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মেনে নিতে পারেনি। রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সেদিন বিকেল থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকার শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে এবং এর অনুসরণে এক সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে ও ২৬ মার্চ ভোররাতজুড়ে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালায়, তার পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। প্রায় ৩০ লাখ মানুষের রক্ত এবং অগণিত নারীর ওপর অমানবিক নির্যাতনের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ যুদ্ধে জয়লাভ করে। তবে বাংলাদেশেরই কিছু মানুষ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদান করেছিল, যার মধ্যে ছিল গণহত্যা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি। যুদ্ধকালীন সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে একটি আইন তৈরি করা হয়, ২০০৯ সালে যা কিছুটা সংশোধন আনা হয়। এ আইনের আওতায় ২০১০ সালের ২৫ মার্চ এ সকল অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদ [বাচ্চু রাজাকার]-কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ওই বছরই ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে কাদের মোল্লাকে ৩টি অপরাধের জন্য ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ২টির জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলে, এ রায়কে সাধারণ জনগণ মেনে নিতে পারেনি। তারা শাহবাগে অহিংস বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করে। একসময় তা দেশব্যাপী বিক্ষোভে রূপ নেয়। দেশের অন্য যেসব স্থানে উল্লেখযোগ্য বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাব চত্বর, রাজশাহীর আলুপট্টি মোড়, খুলনার শিববাড়ি মোড়, বরিশালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বগুড়ার সাতমাথা, যশোরের চিত্রা মোড়, কুমিল্লার কান্দিরপাড়, কুষ্টিয়ার থানা মোড় ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত সরকার জনতার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় এবং আইন সংশোধনের মাধ্যমে আপিল করার ব্যবস্থা রাখে। যার ফলে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়।
গণজাগরণের এই পর্বে আমরা তরুণদের নেতৃত্বে যে নতুন যুদ্ধটি দেখতে পেয়েছি, তা হচ্ছে সাইবার যুদ্ধ। বিভিন্ন ব্লগের মাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপশক্তির অপপ্রচার রুখতে সাইবার যুদ্ধে নামতে হয়েছিল দেশপ্রেমী তরুণদের। দিতে হয়েছে অপব্যাখ্যার জবাব। শাহবাগে তারুণ্যের নেতৃত্বে উদ্ভূত এই গণজাগরণের ওপরে একের পর এক আঘাত এসেছে। দেশে বিদ্যমান একাত্তরের পাকিস্তানি দোসরদের তৈরি করা অপশক্তি ও তাদের পরম্পরা হত্যা, আক্রমণসহ নানাভাবে এই জাগরণকে দমিয়ে দিতে চেয়েছে- কিন্তু সেসব আঘাতে মঞ্চ দুর্বল হলেও, আন্দোলন থেমে যায়নি। বাংলাদেশের তারুণ্য আবারও প্রমাণ করেছে মানবতার পক্ষে, দেশের পক্ষে তাদের হৃদয়ের শক্তি।
বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মনের একেবারে গভীরতম প্রদেশ থেকে উত্থিত যুদ্ধপরাধীদের প্রত্যাশিত ফাঁসির দাবিতে আত্মপ্রকাশ করা শাহবাগের গণজাগরণ ছিল একাত্তর-পরবর্তী তরুণ প্রজন্মের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম প্রতিবাদী অধ্যায়। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে ট্রাইব্যুনালের যে রায় তার বিরুদ্ধে সর্বশ্রেণির মানুষের যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছিল ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে- সারাদেশের মানুষ অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে সে দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে রাজপথে নেমে এসেছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় ছিল মূলত সকলেরই চাওয়া। শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ গণমানুষের সেই চেতনার প্রত্যাশাকে ধারণ করেই এগিয়ে গেছে এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী এবং পাকিস্তানি দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। বাংলাদেশের তরুণরাই ছিল যার নেতৃত্বে।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি আবদুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণা করে। কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা, আলুব্দি গ্রামে ৩৪৪ জন মানুষ হত্যাসহ মোট ৬টি অপরাধের ৫টি প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। কিন্তু এতোগুলো হত্যা, ধর্ষণ, সর্বোপরি গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মেনে নিতে পারেনি। রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সেদিন বিকেল থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকার শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে এবং এর অনুসরণে এক সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে ও ২৬ মার্চ ভোররাতজুড়ে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালায়, তার পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। প্রায় ৩০ লাখ মানুষের রক্ত এবং অগণিত নারীর ওপর অমানবিক নির্যাতনের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ যুদ্ধে জয়লাভ করে। তবে বাংলাদেশেরই কিছু মানুষ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদান করেছিল, যার মধ্যে ছিল গণহত্যা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি। যুদ্ধকালীন সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে একটি আইন তৈরি করা হয়, ২০০৯ সালে যা কিছুটা সংশোধন আনা হয়। এ আইনের আওতায় ২০১০ সালের ২৫ মার্চ এ সকল অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদ [বাচ্চু রাজাকার]-কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ওই বছরই ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে কাদের মোল্লাকে ৩টি অপরাধের জন্য ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ২টির জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলে, এ রায়কে সাধারণ জনগণ মেনে নিতে পারেনি। তারা শাহবাগে অহিংস বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করে। একসময় তা দেশব্যাপী বিক্ষোভে রূপ নেয়। দেশের অন্য যেসব স্থানে উল্লেখযোগ্য বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাব চত্বর, রাজশাহীর আলুপট্টি মোড়, খুলনার শিববাড়ি মোড়, বরিশালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বগুড়ার সাতমাথা, যশোরের চিত্রা মোড়, কুমিল্লার কান্দিরপাড়, কুষ্টিয়ার থানা মোড় ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত সরকার জনতার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় এবং আইন সংশোধনের মাধ্যমে আপিল করার ব্যবস্থা রাখে। যার ফলে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়।
গণজাগরণের এই পর্বে আমরা তরুণদের নেতৃত্বে যে নতুন যুদ্ধটি দেখতে পেয়েছি, তা হচ্ছে সাইবার যুদ্ধ। বিভিন্ন ব্লগের মাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপশক্তির অপপ্রচার রুখতে সাইবার যুদ্ধে নামতে হয়েছিল দেশপ্রেমী তরুণদের। দিতে হয়েছে অপব্যাখ্যার জবাব। শাহবাগে তারুণ্যের নেতৃত্বে উদ্ভূত এই গণজাগরণের ওপরে একের পর এক আঘাত এসেছে। দেশে বিদ্যমান একাত্তরের পাকিস্তানি দোসরদের তৈরি করা অপশক্তি ও তাদের পরম্পরা হত্যা, আক্রমণসহ নানাভাবে এই জাগরণকে দমিয়ে দিতে চেয়েছে- কিন্তু সেসব আঘাতে মঞ্চ দুর্বল হলেও, আন্দোলন থেমে যায়নি। বাংলাদেশের তারুণ্য আবারও প্রমাণ করেছে মানবতার পক্ষে, দেশের পক্ষে তাদের হৃদয়ের শক্তি।
মন্তব্য করুন