- বিশেষ আয়োজন
- শিশুর সুরক্ষায় চাই যুগোপযোগী আইন
শারীরিক ও মানসিক শাস্তি থেকে সুরক্ষা: শিশু আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী
শিশুর সুরক্ষায় চাই যুগোপযোগী আইন
২০১৩ সালে শিশু আইন করা হলেও এখন পর্যন্ত শিশুদের প্রতি সব ধরনের নিষ্ঠুরতার অবসান হয়নি। কারণ, আইনের ৭০ ধারায় শিশুকে আঘাত বা অবহেলাসহ মানসিক বিকৃতির শিকারের কথা বলা হলেও শারীরিক ও মানসিক শাস্তির বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় এবং শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি সংঘটিত হয় এমন উপাদান আইনে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এ-সংক্রান্ত ঘটনা প্রতিরোধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিনিয়ত নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই আইনে সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে সংশোধন করে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে প্রস্তাবিত সংশোধনী সংশ্নিষ্ট নীতিনির্ধারকদের নজরে আনাসহ প্রস্তাবিত সংশোধনী সম্পর্কে জনসচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে। গত ২৩ অক্টোবর 'শারীরিক ও মানসিক শাস্তি থেকে সুরক্ষা :শিশু আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী' শীর্ষক ভার্চুয়াল গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সমকাল, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও সেভ দ্য চিলড্রেন।
মো. নিজামুল হক
এ বৈঠকের আলোচনার বিষয়টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। জন্ম থেকে দেখে এসেছি, শিশুদের প্রতি কীভাবে নির্যাতন করা হয়! শিশুকে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া হয়। ভয়ভীতি দেখানো হয়। বিভিন্নভাবে তাদের মানসিক নির্যাতনও করা হয়। এ শিশুরাই ভবিষ্যতে ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই সুস্থ ও সুন্দর সমাজ নির্মাণে শিশুর বিকাশ জরুরি। বাংলাদেশের মানুষের জ্ঞান অনেক কম। তাই শুধু আলোচনাই নয়; শিশুর প্রতি সব ধরনের শাস্তি নিরসনে শক্তভাবে 'ক্যাম্পেইন' করতে হবে। বিশেষ করে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। শিশুদের প্রতি মারধরের যে 'পদ্ধতি' প্রচলিত, এর যে কী ক্ষতি, তা বোঝাতে হবে। এবং শাস্তি বন্ধ করার নিমিত্তে সবাইকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কথা বলতে হবে। 'শিশু আইন ২০১৩' বাস্তবায়নে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে আছি। তবে আমি আশাবাদী, ভবিষ্যতে এ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করার মধ্য দিয়ে জনগণকে বোঝানো সম্ভব হবে। তবেই এক দিন শিশুর প্রতি সব রকম নির্যাতন বন্ধ হবে। শিক্ষকের মারধরের ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী বাসা থেকে বের হয়ে পালিয়ে বেড়ায়। স্কুলে যায় না। বিকেলে আবার ঘরে ফিরে যায়। ফলে শিক্ষার দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ছে ভীতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা। তাই শিশুদের পড়ালেখার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিশুর অভিভাবকদেরও ভূমিকা রয়েছে। তাদের বোঝাতে হবে, শাস্তির কারণে শিশুরা কী ধরনের সমস্যায় ভোগে। এতে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এ জন্য ক্যাম্পেইনের বিকল্প নেই।
এস এম রেজাউল করিম
শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ ও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। যে সমাজে শিশু ভয়ের ভেতরে বড় হয়, সেই শিশু বড় হয়ে কাপুরুষ হয়। এবং সব সময় সে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। এ থেকে মুক্তির জন্যই আজকের এ প্রচেষ্টা। আমাদের দেশে 'শিশু আইন ২০১৩' আছে, তবে এ আইনের ৭০ ধারায় 'শারীরিক ও মানসিক শাস্তি'র বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। এমনকি শিশুর প্রতি নির্যাতনের ঘটনায় কোনো শাস্তির কথা বলা হয়নি। এ আইনে শারীরিক ও মানসিক শাস্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে চাই। কারণটা হলো, শিশুর বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধের লক্ষ্যে বিগত ২০১০, ২০১১ ও ২০১৬ সালে সরকারের বিভিন্ন পরিপত্র জারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে হাইকোর্টের প্রদত্ত নির্দেশনা প্রদর্শন, সব শিক্ষকের নিয়োগপত্রে শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনবিষয়ক তথ্য অন্তর্ভুক্তি, শ্রেষ্ঠ স্কুল নির্বাচনে 'শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসন' একটি মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা বিষয়ক সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও তা বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও শিশুর প্রতি বিভিন্নভাবে নির্যাতনের চিত্র দেখতে পাই। অনেক মাদ্রাসায় ভয়াবহভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা। তাই শিশুর প্রতি সব রকম নির্যাতন বন্ধে আমরা আইন সংশোধনের চেষ্টা করছি। আর এ সভার উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে শিশু আইন-২০১৩ এর প্রস্তাবিত সংশোধনী পর্যালোচনা ও বিশ্নেষণ করা; প্রস্তাবিত সংশোধনী সংশ্নিষ্ট নীতিনির্ধারকদের নজরে আনা; শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসন ও প্রস্তাবিত সংশোধনী সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
তাজুল ইসলাম
বিশ্বে দুই থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ছয়জন গৃহে নিয়মিতভাবে শারীরিক ও মানসিক শাস্তির শিকার হয়। ২০১৪ সালে পরিচালিত ইউনিসেফের এক জরিপে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফ প্রায় সময়ই যৌথভাবে জরিপ পরিচালনা করে থাকে। ২০১৯ সালে যৌথভাবে পরিচালিত 'মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে' অর্থাৎ এমআইসিএস জরিপ চলাকালীন পূর্বের মাসে বাংলাদেশে ১ থেকে ১৪ বছর বয়সের ৮৯ শতাংশ শিশু শারীরিক ও মানসিক শাস্তির শিকার হয়েছিল। ২০১৮ সালে পরিচালিত ব্লাস্টের এক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৭০ শতাংশ পিতামাতা ও অভিভাবক শিশুকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন করেন। এ তিনটি জরিপের তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে শিশুর প্রতি নির্যাতনের প্রখরতা বা ব্যপ্তি কতটুকু! বিশ্বব্যাপী পরিচালিত সব গবেষণাতেই শিশুকে শৃঙ্খলিত করার নামে যে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া হয়, তাতে শিশুর বিকাশ ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমরা ব্লাস্ট থেকে শিশুদের আইনগত সুরক্ষা বিষয়ে কাজ করি। ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মোট ১৪টি ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশ হয়। ওইসব ঘটনা বিশ্নেষণে দেখা যায়, কোনো তদন্ত বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওই বছরের জুলাই মাসেই ব্লাস্ট ও আসক হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা করে। মামলার রুল হওয়ার পরপরই ৯ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ২২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধে পরিপত্র জারি করে। এসব ঘটনার জের ধরেই ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুর প্রতি সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের যৌথভাবে করা জনস্বার্থবিষয়ক মামলায় (রিট মামলা নং ৫৬৮৪/২০১০) হাইকোর্ট বিভাগ রায় দেন- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থীদের কোনো রকম শারীরিক শাস্তি এবং নিষ্ঠুর, অমানবিক, অপমানকর আচরণ শিশু শিক্ষার্থীদের জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে, যা বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২, ৩৫(৫) অনুচ্ছেদগুলোতে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। এ ছাড়া শিশু আইন ২০১৩, দণ্ডবিধি ১৮৬০ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) অনুযায়ী শিশুদের প্রতি শারীরিক ও মানসিক নিষ্ঠুর আচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রায়ের পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার নামে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয় এবং তা মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। হাইকোর্টের রায় প্রকাশিত হওয়ার পরপরই যেসব আইন শারীরিক ও মানসিক শাস্তি সমর্থন করে, তা বাতিলের জন্য ব্লাস্ট কর্তৃক মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
২০১২ সাল থেকে সংশ্নিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে মতবিনিময়, কর্মশালা, প্রশিক্ষণের আয়োজন করে ব্লাস্ট। পাশাপাশি মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ এবং তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আবেদন করে সারাদেশে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন, মনিটরিংসহ আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের সঙ্গে এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য কোয়ালিশন গঠন করা হয়। সেভ দ্য চিলড্রেন ব্লাস্টের এ উদ্যোগকে আরও বেগবান করে যৌথভাবে সংশ্নিষ্ট সব রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আইন বিশ্নেষণ ও গবেষণা কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৭ সাল থেকে আইনগত সুরক্ষার উপায় খুঁজতে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সংসদ সদস্য, শিশু অধিকারবিষয়ক সংসদীয় ককাস, বিচারক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইনজীবী, শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্নিষ্ট সবার সঙ্গে দীর্ঘ মতবিনিময় করে একটি খসড়া প্রস্তাবনার রূপরেখা তৈরি করে। ২০১৯ সাল থেকে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে সংশ্নিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে খসড়া প্রস্তাবনা পরিবর্ধন ও পরিমার্জন শেষে জাতীয় পর্যায়ের আইন বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে খসড়া প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়।
বর্তমান শিশু আইন, ২০১৩-তে 'আইনের সংঘাতে আসা শিশু'কেন্দ্রিক বিধিবিধান অধিক এবং 'আইনের সংস্পর্শে আশা শিশু'কেন্দ্রিক বিধিবিধান অনেক কম (শুধু নবম অধ্যায়)। যখন কোনো অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিশুর তত্ত্বাবধানকারী বা চাকরিদাতা কোনো শিশুকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার নামে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেয়, তখন ওই শিশু 'আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু' এবং তাদের জন্য বর্তমান আইনের নবম অধ্যায় বিশেষ করে ৭০ ধারা আকৃষ্ট করে। কিন্তু ওই ধারায় শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তির সব উপাদান অনুপস্থিত এবং তা প্রতিকার দিতেও পর্যাপ্ত নয়। সমাজে প্রচলিত ক্ষতিকর ধারণার ফলেও এ ধরনের শারীরিক ও মানসিক শাস্তির শিকার শিশুরা প্রতিকার পায় না। ফলে তাদের প্রতিকার আইনগতভাবে সুরক্ষিত হওয়া প্রয়োজন; শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া আইনগতভাবে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি প্রতিকারের বিষয়টিও সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। যা বিশ্বের ৬৩টি রাষ্ট্র শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আইন প্রণয়ন করেছে এবং ২৩টি রাষ্ট্র অঙ্গীকার করেছে- তারা শিশুর প্রতি সব রকম শাস্তি নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করবে।
তাই বর্তমান শিশু আইনের একটি খসড়া সংশোধনী প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ খসড়া সংশোধনী প্রস্তাবনায় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়ার সংজ্ঞা এবং এ অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে লঘু ও গুরু শাস্তির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে, শাস্তি হিসেবে সমাজকল্যাণমূলক সেবাদানের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন :আইনের নবম অধ্যায়ের ৭০ ধারায় শিশুকে শারীরিক এবং নিষ্ঠুর, অমানুষিক ও লাঞ্ছনাকর শাস্তি দেওয়া নিষিদ্ধ এবং এ আইনের অধীন তা দণ্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করা; ৭০ ধারায় শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তির বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করে শাস্তির বিধান রাখা যেমন- যদি কোনো ব্যক্তি, তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ, স্বাভাবিক বা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা শিক্ষক কর্তৃক কোনো শিশুকে নিয়মানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কোনো শিশুকে হাত বা কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করা; চক, ডাস্টার বা এ জাতীয় যে কোনো বস্তু ছুড়ে মারা, চিমটি কাটা বা শরীরের কোনো স্থানে কামড় দেওয়া বা চুল ধরে টান মারা; হাতের আঙুলের ফাঁকে পেন্সিল চাপা দিয়ে মোচড় দেওয়া; কান ধরে ওঠবস করানো ইত্যাদির জন্য সহনশীল সাজার বিধান (বাধ্যতামূলক সমাজকল্যাণমূলক কাজে সেবা দেওয়া এবং ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ); আর যদি কোনো ব্যক্তি, তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ, স্বাভাবিক বা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা শিক্ষক কোনো শিশুকে নিয়মানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কোনো শিশুকে পা দিয়ে আঘাত করেন, ভোঁতা বা ধারালো কিছু ছুড়ে মারেন, বেত্রাঘাত করেন বা আছাড় দেন, শিশুকে অবৈধভাবে কোনো স্থানে আটকে রাখেন ইত্যাদির জন্য কিছুটা কঠোর সাজার বিধান (বাধ্যতামূলক সমাজকল্যাণমূলক কাজে সেবা দেওয়া এবং অনূর্ধ্ব তিন মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক দণ্ড এবং ক্ষতিপূরণ)।
শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতার দণ্ড হিসেবে দায়ী ব্যক্তিকে শিশুদের প্রতি শারীরিক এবং নিষ্ঠুর, অমানুষিক ও লাঞ্ছনাকর শাস্তি প্রয়োগের কুফল, শিশুদের আত্মমর্যাদা এবং মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ, সন্তান লালন-পালনে সুশৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখকদের বই পড়া, চলচ্চিত্র দেখা, সংশ্নিষ্ট বিষয়ে কোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনগত দলিল বা চুক্তি অধ্যয়ন এবং এ বিষয়ে জনসমক্ষে বক্তৃতা বা উপস্থাপনা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার বা অন্যান্য জনসমাগমস্থলে প্রচারমূলক প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও লিফলেট বিতরণ করতে হবে। এ ছাড়া আদালতের বিবেচনায় উপযুক্ত অন্য যে কোনো সামাজিক দণ্ডসহ নিষ্ঠুরতার শিকার শিশুর প্রতি আর্থিক সহায়তা বা ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারবেন।
আবদুল্লা আল মামুন
আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞান যেভাবে এগিয়েছে, সে হিসেবে শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দিয়ে সুদূরপ্রসারী মঙ্গল হয় না। হয়তো তাৎক্ষণিক কোনো কথা মানিয়ে নেওয়া যাবে। শাস্তি থেকে সুরক্ষা পাওয়া শিশুর মৌলিক অধিকার। বর্তমানে ৬৩টি দেশ শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে আইন করেছে। বাংলাদেশ এ তালিকায় নেই। অথচ ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পা দেবে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সংজ্ঞায় শুধু মাথাপিছু রোজগার নয়, সামাজিক সূচকের বিষয়ও রয়েছে। তাই সামাজিক সূচকেও পরিবর্তন আনতে হবে বাংলাদেশকে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদেও বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্যও এ ধরনের শাস্তি বন্ধ করতে হবে। তা ছাড়া ১৯৯০ সালে শিশু অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ সনদে (সিআরসি) অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শিশু অধিকার সুরক্ষায় অনেক উন্নতি করেছে। তবে বাংলাদেশ শুধু অঙ্গীকারের জায়গা থেকে নয়; শিশুর অধিকার রক্ষায় রোল মডেল হিসেবেও কাজ করেছে। কারণ এগিয়ে যাওয়ার দেশ বাংলাদেশ, সমৃদ্ধির দেশ বাংলাদেশ। সেই দেশে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। শিশুর সুরক্ষায় দুটি দিক রয়েছে- সামাজিক ও আইনগত। অভিজ্ঞতায় অর্থাৎ বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রমের ক্ষেত্রে বলতে পারি, আইনি ভিত্তি না থাকলে সামাজিকভাবে প্রচার চালালেও মানুষের মননে পৌঁছানো সম্ভব নয়। শিশু আইনের ৭০ ধারায় শিশুকে আঘাত বা অবহেলাসহ মানসিক বিকৃতির শিকারের কথা বলা হলেও 'শারীরিক ও মানসিক শাস্তি'র বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় এবং শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি সংঘটিত হয়, এমন উপাদানগুলো আইনে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এ-সংক্রান্ত ঘটনা প্রতিরোধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিনিয়ত নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই আইনে সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে সংশোধন করে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।
আরাফাত হোসেন খান
অতিমারির কারণে শিশুরা একটা জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার চিত্র খুবই জটিল। দুঃখজনক হলেও সত্যি, শিশুর প্রতি সহিংসতা যে একটা অপরাধ- এটাই বিশ্বাস করি না। সমাজে প্রচলিত গুরুজনের বকা খেয়ে বড় হওয়া কিংবা শিক্ষকের শাসনকে অভিভাবকরা সমর্থন করেন। আমি বাবাকেই আমার শিক্ষককে বলতে শুনেছি- 'ছেলেকে দিয়ে গেলাম। তার গায়ে চামড়া আর মাংস আপনার। আর হাড্ডি আমাকে দিলেই হবে।' আমাদের যুদ্ধটা পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে। শিশু সুরক্ষায় আইন থাকলেও অনেক বিষয় সুস্পষ্ট নয়। তাই আইনের সংশোধন ও সংযোজন প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রচার বাড়াতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো। বোঝাতে হবে শিশুর প্রতি সহিংসতা তার মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তরায়। যে শিশু আগামী দিনের বাংলাদেশ পরিচালনা করবে, সে শিশুই যদি এভাবে নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বড় হয়, তাহলে সে দেশ চালাবে কী করে! প্রচারের পাশাপাশি আমাদের সামাজিকভাবেও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ডা. মেখলা সরকার
দেশের ১৬ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছে। ২০০৯ সালে শিশুদের নিয়ে আমাদের একটা জরিপে দেখা গেছে, ১৮ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় আছে। শিশু যদি আঘাতপ্রাপ্ত না হয় এবং অন্য কাউকে আঘাত করতে না দেখে, তাহলে সাধারণত বিশেষ পরিস্থিতির শিকার না হলে ওই শিশু বড় হয়ে কখনও কাউকে আঘাত করবে না। অথচ যে সামাজিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে শিশুরা বড় হচ্ছে, সেই পরিবেশে শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্য শাস্তি দেওয়া হলে তার সুস্থভাবে বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এটা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। তাই শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে পরামর্শ অনুষ্ঠান করা প্রয়োজন। আইনের পাশাপাশি অনেক বেশি জোর দেওয়া উচিত সচেতনতার ওপর।
মুহাম্মদ আমিরুল হক
আমার বিবেচনায় এখন পর্যন্ত বড় অর্জন ২০১১ সালে। ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুর প্রতি সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে ব্লাস্ট ও আসক কর্তৃক যৌথভাবে করা জনস্বার্থ বিষয়ক মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ রায় দেন। এটিই আমাদের আন্দোলনের বড় অর্জন। কারণ এ মামলায় সরকার বিরোধিতা করেনি। সবার প্রচেষ্টাতেই এ রায়। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, শিশু আইন-২০১৩ এর ৭০ ধারায় ১৯৭৪ সালের আইনের ৩৫ ধারাটি হুবহু বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো সংশোধন করা হয়নি। আমি সব সময় 'শাস্তি' শব্দ নিয়ে আপত্তি করে এসেছি। আমি এটাকে কোনোভাবেই শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করতে চাই না। রাষ্ট্রীয় বিধিব্যবস্থার বাইরে কেউ কখনও শাস্তি প্রয়োগ করতে পারে না। তাই এটাকে শাস্তি না বলে নির্যাতন বলা উচিত। এ ক্ষেত্রে আমার প্রস্তাবনা, বর্তমান আইনের ৭০ ধারায় শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক 'শাস্তি'র কথা বদলে 'নির্যাতন' শব্দটি ব্যবহার করতে হবে। কারণ শাস্তি শব্দটি ব্যবহূত হওয়ায় 'শারীরিক ও মানসিক' শাস্তির বাইরেও অন্য কোনো শাস্তিকে ইঙ্গিত করে।
অম্বিকা রায়
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন, অর্থাৎ প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশে মোট ৫০৯ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। এতে প্রতীয়মান, শিশুরা শুধু বিদ্যালয়ে কিংবা বাড়িতেই নয়, নানা স্থানে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রত্যেক মানুষের মনের সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক রয়েছে। মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়লে তা শরীরের ওপরেও পড়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষকের কাছে 'প্রাইভেট' না পড়লে ওই শিক্ষক দ্বারা কোনো কোনো শিক্ষার্থী মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। যার প্রভাবে শুধু শিশুর সুস্থ বিকাশই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, সমাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুর সঙ্গে যে আচরণ করা হবে, পরে সে বড় হয়ে অন্যের সঙ্গে একই আচরণ করবে। তাই আইনের প্রতিটি শব্দের বিশ্নেষণ বা সংজ্ঞায়িত করা উচিত।
মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী
ঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত শিশুরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুদের প্রতি শাস্তি নিষিদ্ধ করে ২০১১ সালে উচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন। একই বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিপত্র এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করেছে। ২০১৩ সালে শিশু আইনও করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিশুদের প্রতি এ ধরনের নিষ্ঠুরতার অবসান হয়নি। শিশুর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হলে শুধু আইন প্রয়োগই নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অঙ্গীকারও করতে হবে।
রাশেদ খান মেনন
আইন করে আইনের সুরক্ষা দিয়েও লাভ হয় না। যদি সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিষয়টি গ্রহণ করা না হয়। নিজেদের মধ্যে এ বিষয়ে উপলব্ধি সৃষ্টি করতে হবে। আমরা তো বেড়েই উঠেছি শাসনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। সেটা পরিবার ও স্কুল উভয় ক্ষেত্রে। স্কুলে তো শাস্তির নানা ধরন ছিল। আঙুলের মধ্যে পেনসিল ঢুকিয়ে মোচড় দেওয়া থেকে শুরু করে হাঁটু গেড়ে দাঁড়ানো। এখন তো সময়, সমাজ সবই পাল্টেছে। আমরা যদি সেই সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক জায়গায় না বদলাই, তাহলে আইনের সংশোধন কোনো কাজে লাগবে না। তাই প্রথমেই নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপলব্ধি সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য ব্যাপক ক্যাম্পেইন করতে হবে। কারণ, এ উপলব্ধি না থাকলে আইনের কার্যকারিতা থাকবে না। করোনাকালে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। করোনাকালীন সংকটে সৃষ্ট লকডাউনে ঘরবন্দি ছিল শিশুরা। তারা খেলার মাঠে যেতে পারেনি। একমাত্র কম্পিউটার, মোবাইল ফোনে গেমের মধ্যেই ছিল। এ সময় নতুন উপসর্গ হিসেবে কিশোর গ্যাং তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে সমাজের মধ্যে এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন আনার ব্যাপারে গণমাধ্যম, বিভিন্ন সাংগঠনিক উদ্যোগ খুবই জরুরি। আইন বিষয়ে বলতে গেলে আইনের সঠিক সংজ্ঞায়িত করার পাশাপাশি সুরক্ষার বিষয়গুলোও নিশ্চিত করতে হবে। মূল কথা হলো, শিশুর বিকাশ সুস্থভাবে না হলে সুস্থ জাতি গঠন সম্ভব নয়। তাই শিশুর সুরক্ষায় যেসব বাধা রয়েছে, তা দূর করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার। ব্লাস্টের 'শিশু আইনের প্রস্তাবনা'র বিষয়টি সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করব। প্রয়োজনে সংশ্নিষ্টদের মধ্যে যারা 'এক্সপার্ট' হিসেবে আছেন, তাদের অভিমত জানানোর জন্য রাখা হবে।
অধ্যাপক কাজী ফারুক আহমেদ
ছেলেমেয়েরা স্কুলে হোক, বাড়িতে হোক- কিছু ভুল করতে পারে। প্রচলিত নিয়মের কিছু বরখেলাপ তাদের হতে পারে। এজন্য তাদের নিয়মানুবর্তী করতে আমরা কিছু বিকল্প ভাবতে পারি। মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন বিকল্পের কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে আমাদের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। অভিভাবককেও বদলাতে হবে। তারা যদি মনে করেন, শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে সবকিছু ঠিক করে দেবেন- তাহলে হবে না। শিক্ষকদের সংগঠনেরও কিছু করার আছে। আমি শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত। শিক্ষক নিয়োগপত্রে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া যাবে না- এ কথা উল্লেখ থাকা দরকার। কোনো শিক্ষক অথবা শিক্ষা ব্যবস্থাপক অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিযোগ বাক্স স্থাপনের কথা বলা হলেও সেটা প্রকাশ্য স্থানে অনেক জায়গায় নেই। শুধু আইন থাকলে হবে না; আইনের প্রয়োগ যেন হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত সংশোধনীটি আইনে সংযোজন করা প্রয়োজন।
আবু সাঈদ খান
শিশুর প্রতি নির্যাতন একটি নিত্যদিনের ঘটনা। ঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থানে শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে এবং এটা নিরসনে বাংলাদেশে আইনও রয়েছে। তবে নির্যাতন প্রতিরোধে আইন থাকলেও তার যথেষ্ট প্রয়োগ নেই। আইনও পর্যাপ্ত নয়। আইনে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিষয়টিরও উল্লেখ নেই। তাই শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধের বিধান শিশু আইন ২০১৩-তে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ব্লাস্ট এবং 'শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে কোয়ালিশন' কাজ করছে। সে কাজের ধারাবাহিকতায় এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। কোয়ালিশন তাদের গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা ও সব অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে পরামর্শ করে বিদ্যমান শিশু আইন ২০১৩-এর একটি সংশোধনী বিলের প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। এ বৈঠকের লক্ষ্য- শিশু আইনের ওই সংশোধনী প্রস্তাবনার মৌলিক বিষয়গুলো সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, আইন কমিশনের প্রতিনিধি, সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিনিধি, গবেষক, আইনজীবী, বিচারপতি ও শিশু অধিকারবিষয়ক মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরা। শিশুর জন্য সুশৃঙ্খল জীবন দরকার। তাদের শৃঙ্খলিত করার প্রয়োজন নেই। তাদের স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়াটাই হচ্ছে সময়ের দাবি। তাই সনাতনী ধ্যান-ধারণা ত্যাগ করে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে শিশুকে বেড়ে উঠতে দিতে হবে।
সঞ্চালক
আবু সাঈদ খান
উপদেষ্টা সম্পাদক, সমকাল
স্বাগত বক্তব্য
মো. নিজামুল হক
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল
এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি
আপিল বিভাগ, সুপ্রিম কোর্ট
প্রধান অতিথি
রাশেদ খান মেনন
সংসদ সদস্য ও চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি
সভাপতি
অধ্যাপক কাজী ফারুক আহমেদ
আহ্বায়ক, শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসন কোয়ালিশন
উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট
এস এম রেজাউল করিম
আইন উপদেষ্টা, ব্লাস্ট
খসড়া প্রস্তাবনা
তাজুল ইসলাম
উপদেষ্টা, অ্যাডভোকেসি ও ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, ব্লাস্ট ও আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
প্যানেল আলোচক
আবদুল্লা আল মামুন
সেক্টর ডিরেক্টর, চাইল্ড রাইটস্ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড চাইল্ড প্রটেকশন, সেভ দ্য চিলড্রেন
আরাফাত হোসেন খান
আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
ডা. মেখলা সরকার
সহযোগী অধ্যাপক
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
মুক্ত আলোচক
মুহাম্মদ আমিরুল হক
আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
অম্বিকা রায়
সমন্বয়কারী, চাইল্ড রাইটস্ ইউনিট
আইন ও সালিশ কেন্দ্র
মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী
উপসচিব, সমাজসেবা বিভাগ
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
অনুলিখন
সাজিদা ইসলাম পারুল
স্টাফ রিপোর্টার, সমকাল
মন্তব্য করুন