আমি ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামালের বন্ধু ছিলাম। ১৯৬৭ সালে এসএসসি পাসের পর আমি ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। ঢাকা কলেজের ক্যান্টিনের পাশে ক্লাস রুমটিতে আমাদের একাদশ শ্রেণির ক্লাস হতো। কলেজের ক্লাসে টিফিনের সময় আমরা সবাই শহীদ বন্ধু শেখ কামালের ছাত্র রাজনীতি তথা ছাত্রলীগের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগে যোগদান করি এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। আমাদের বাণিজ্য বিভাগের ক্লাস কক্ষটি ছিল কলেজের ক্যান্টিনের পাশে। আর তাই টিফিনের সময় আমরা বন্ধুবর শেখ কামালের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগের সব কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে থাকি। ছাত্রলীগের রাজনীতি ছাড়াও দু'জনের নামের মিল থাকায় শেখ কামালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এমনকি শেখ কামালের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে আসা-যাওয়া এবং বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়।

ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আমি অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করেছি। দেশের সব লড়াই-সংগ্রামের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় আসে একাত্তর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনি।
১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ বিজয় লাভের পর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সেদিনটি এখনও আমার চোখে জ্বলজ্বল করে। সেদিন তাকে নিয়ে জনতার উচ্ছ্বাস আমি দেখেছি। ওইদিন বঙ্গবন্ধুকে বহনের খোলা জিপে আমিও ছিলাম।

১৯৭৩ সালে এক দিন জেনারেল ওসমানী আমাকে আমাদের এলাকা ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান করেন। কেননা, যুদ্ধকালে জেনারেল ওসমানী কুমিল্লা হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। এ ব্যাপারে তিনি স্থানীয় জনগণের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা পান।

জেনারেল ওসমানীর ইচ্ছায় এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এপিএস শেখ আলাউল হক আমাকে পরামর্শ দেন তৎকালীন বৃহত্তর কুমিল্লার দুই মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মিজান চৌধুরীও যেন জেনারেল ওসমানীর সফরসঙ্গী হন। পরামর্শমতো আমি উল্লিখিত দুই মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানালে তারা তাদের অপারগতার কথা জানান। বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন- 'তুই একাই জেনারেলকে নিয়ে যা।' ঠিক ওই সময় পূর্তমন্ত্রী মতিউর রহমান বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে উপস্থিত হলে আমি তাকে সফরসঙ্গী হওয়ার অনুরোধ করলে তিনি রাজি হয়ে যান। তিনিও আমাদের সঙ্গে হেলিকপ্টারে করে সভায় যোগ দেন। এখানে উল্লেখ না করলেই নয় যে, বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও দুই মন্ত্রীর ব্রাহ্মণপাড়া গমনে অস্বীকৃতি ছিল এক ধরনের অশনিসংকেত।

অধ্যাপক মোস্তফা কামাল: বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়