অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে ২০০৯ সালে অগ্রাধিকারভিত্তিক আটটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। দ্রুততম সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পকে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করা হয়। নির্বিঘ্ন ও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প মনিটরিং কমিটিও গঠন করা হয়। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গুরুত্ব দেওয়া এ প্রকল্পগুলোর তালিকায় এক নম্বরে ছিল পদ্মা সেতু। করোনাকালসহ কোনো পরিস্থিতিতেই প্রকল্পটির বরাদ্দে কোনো রকম কাটছাঁট করা হয়নি। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন সচিব প্রদীপ রঞ্জন কর্মকার সমকালকে বলেন, পদ্মাসহ ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অর্থায়নে অগ্রাধিকারের নির্দেশনা রয়েছে সরকারের।

পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ মে পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৯১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দুই দফায় ব্যয় বৃদ্ধির পর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পদ্মা সেতুর বরাদ্দ ছিল সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়ে আসায় আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে পদ্মা সেতুর বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে মূল অর্থায়ন করার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। ১৯০ কোটি ডলারের প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয় আন্তর্জাতিক ঋণদাতা এ সংস্থাটি। মূল অর্থায়নকারী বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৬১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ দেওয়ার চুক্তি করে। প্রকল্পে জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ৪০ কোটি ডলার এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলার ঋণ দিতে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। তবে একপর্যায়ে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দিতে ১০ শতাংশ কমিশন দাবি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। একপর্যায়ে ২০১০ সালের ২৫ নভেম্বর মূল অর্থায়নকারী এ সংস্থাটি প্রকল্পে ঋণদান থেকে সরে যায়। এরপর এডিবি, জাইকা এবং আইডিবি প্রকল্পের অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে অবশ্য কানাডার আদালত এ অভিযোগ ভিত্তিহীন হিসেবে খারিজ করে দেন।

সেতু নির্মাণে বিকল্প অর্থায়নের চিন্তা থেকে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সরকারের একটি সমঝোতা হয়। শেষ পর্যন্ত সে পথও বেশিদূর এগোয়নি। সবশেষে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এক বিবৃতিতে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা জানান সে সময়ের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, পদ্মা সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। ১ শতাংশ সুদহারে ৩৫ বছরের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মূল সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।