- বিশেষ আয়োজন
- বিচিত্র উপকরণ ব্যবহার এসেছে নানা দেশ থেকে
বিচিত্র উপকরণ ব্যবহার এসেছে নানা দেশ থেকে

পদ্মা সেতুর নিচের অংশ (সাব-স্ট্রাকচার) রড, পাথর ও সিমেন্টে তৈরি। উপরিভাগ (সুপার-স্ট্রাকচার) স্টিলের। পদ্মা সেতুর ইট, বালু, সিমেন্ট, জিওব্যাগ দেশেই তৈরি হয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান এগুলো সরবরাহ করেছে। স্টিল, পাথর ও অন্যান্য অংশ এসেছে বিদেশ থেকে। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে আরও বিচিত্র বহু উপকরণ।
পদ্মা সেতুতে সিমেন্ট লেগেছে ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮১৯ টন। এর মধ্যে মূল সেতুতে ২ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৬ এবং নদীশাসনে ২ লাখ ৭০ হাজার ২৩ টন। এর পুরোটাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সবরাহ করা। পদ্মা সেতুর পাইলের নিচের কাদামাটি শক্ত করার কাজে ব্যবহার করা মিহি মাইক্রোফাইন সিমেন্ট আনা হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে। ২ হাজার ১১৪ টন মিহি সিমেন্ট ব্যবহূত হয়েছে পদ্মায়।
পদ্মা সেতুর প্রতিটি ট্রাস (স্প্যান নামেই যা বেশি পরিচিত) ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৩ হাজার ২০০ টন ওজনের। এগুলো এসেছে চীন থেকে। চীনে ছোট ছোট অংশ তৈরির পর জাহাজে বাংলাদেশের মাওয়া এনে জোড়া দেওয়া হয়েছে। সেতুতে মোট ২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮২ টন স্টিল ব্যবহূত হয়েছে।
রড নামে পরিচিত ডিফরমড বার লেগেছে ১ লাখ ৮ হাজার ২৮৬ টন। মূল সেতুর জন্য লেগেছে ৯২ হাজার ২৮৬ টন। বাকিটা ব্যবহূত হয়েছে সংযোগ সড়কে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা রডে তৈরি হয়েছে গর্বের পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতুতে পাথর ব্যবহূত হয়েছে ১৫ লাখ ৫০ হাজার ২৬০ ঘনমিটার। ভারত ও আরব আমিরাত থেকে আনা হয়েছে এসব পাথর। মূল সেতুর তুলনায় সংযোগ সড়ক ও নদীশাসনের কাজে পাথর লেগেছে বেশি। তবে ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ৮৭০ ঘনমিটার শিলা পাথরের পুরোটাই লেগেছে নদীশাসনের কাজে। এই পাথর আনা হয়েছে ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে।
পদ্মা সেতুর নদীশাসনে ১২৫ এবং ৮০০ কেজির জিওব্যাগ লেগেছে ১ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার ৫২১টি। ৮০০ কেজির জিও ব্যাগ ও কঠিন শিলা নদীতে ফেলে সেতুর পাইল এলাকায় ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে। ১২৫ কেজির বস্তা ফেলা হয় নদীর তীরের ভাঙন রোধ করে নদীশাসনের কাজ করতে।
প্রকল্পে ৬৪ লাখ ৫৮ হাজার ১১৫ ঘনমিটার বালু ব্যবহূত হয়েছে। নদীশাসনেই লেগেছে ৫২ লাখ ৯৭ হাজার ৭৩৬ ঘনমিটার। মোটা বালু আনা হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ থেকে। সংযোগ সড়কের কাজে ইট ব্যবহূত হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ ৯৭ হাজার ৯১৪টি। মূল সেতুতে কোনো ইটের ব্যবহার করা হয়নি। সিমেন্ট ও পাথরের ঢালাইয়ে সেতু তৈরি করা হয়েছে। নদীশাসনে লেগেছে ৮০ লাখ কংক্রিট ব্লক।
এ ছাড়া সেতুতে ব্যবহূত হয়েছে গ্যাসপাইপ, বৈদ্যুতিক তার, খুঁটি, বিটুমিনসহ আরও ২০ ধরনের উপকরণ। সেতুর নিচতলায় ট্রেন চলাচলে ইউরোপের লুক্সেমবার্গ থেকে রেলের স্ট্রিঞ্জার আনা হয়েছে ৯ হাজার টন। সেতুতে ব্যবহূত অ্যালুমিনিয়ামের রেলিং আনা হয়েছে যুক্তরাজ্য থেকে।
পদ্মা সেতুতে ১০ হাজার টন ক্ষমতার পেন্ডুলাম ফ্রিকশন বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে। মানে ১০ টন ভরের সমপরিমাণ ধাক্কা বিয়ারিং শোষণ করতে পারবে। ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও সেতুকে রক্ষা করবে এই বিয়ারিং। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ২৫ টনের একটি বিয়ারিং যুক্তরাষ্ট্রের সান মারিনোতে কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে নিতে হয়েছে। এতে শুধু বিমান ভাড়া লেগেছে তিন কোটি টাকা।
মন্তব্য করুন