- বিশেষ আয়োজন
- 'হু কিল্ড মুজিব?'
'হু কিল্ড মুজিব?'

১৯৭৫ সালের মধ্য আগস্টে বাংলার বুকে যে গভীর ট্র্যাজেডি নেমে আসে, নিষ্ঠুরভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, সেই নির্মম ঘটনার হদিস পেতে আমাদের আরও অনেক কাঠ এবং খড় পোড়াতে হবে। স্থিতধী ও গভীরতাসম্পন্ন গবেষণা, তথ্য আহরণ ও বিশ্নেষণ এবং পেছনের বহু কুশীলবের বহু ধরনের ভূমিকা যুক্ত করে আঁকতে হবে বড় ছবি।
অন্যদিকে, এই বিশালতা নিয়ে ঘটনাক্রম দেখবার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব চরিত্রের ব্যক্তিগত উষ্ফ্মা, অহিষ্ণুতা, আত্মম্ভরিতা ও স্বার্থবাদিতার মিশেলে যে রসায়ন ঘটে, সেসবও বিবেচনা করবার রয়েছে। যে ঘাতকেরা প্রবেশ করেছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের প্রায় অরক্ষিত আবাসে, তারা তো চিহ্নিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে মিলে আর যারা আক্রমণের পরিকল্পনা অনুযায়ী অবস্থান নেয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়, তাদের সেদিনের কর্মকাণ্ড, যোগাযোগ ও যোগসাজশও উদ্ঘাটিত হয়েছে বিভিন্নভাবে।
তবে এমন হত্যাকাণ্ড তো নিছক খুনের মামলা নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহুমাত্রিক ঘটনাধারা। অর্থনীতির পরিভাষায় ম্যাক্রো আর মাইক্রো মিলেই বাস্তবায়িত হয় এমন মহাপরিকল্পনা। আমরা প্রচলিত আইনে ফৌজদারি আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছি, সেই বিচার অনুষ্ঠানেও তো ছিল অবিশ্বাস্য সব বাধা, ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তির অধ্যাদেশের মতো অমানবিক পদক্ষেপকেও গণতন্ত্রের বাতাবরণে সংসদে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল।
মধ্য-আগস্ট ট্র্যাজেডি নিয়ে অনেক বলবার রয়েছে, বুঝবার আছে। যারা হত্যাকাণ্ডের সামনের কাতারের সদস্য, তারা সবাই ছিল ভাড়াটে; তাদের কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান ছিল না; তাদের নিয়োজিত করা হয়েছিল এই জঘন্য কাজ সম্পাদন করার জন্য। তারা ব্যবহূত হয়েছিল আর কারও দ্বারা, পেছনের কুশীলবেরা এখানে পালন করেছে মুখ্য ভূমিকা। এই কুশীলব দল হত্যাকাণ্ডের পূর্বে বা পরে নিজেদের বিশেষভাবে সামনে হাজির করেনি, তারা রয়ে গেছে পর্দার আড়ালে। ফলে একের পর এক পর্দা উন্মোচন করে আমাদের পৌঁছতে হবে, অথবা পৌঁছবার চেষ্টা করতে হবে মুজিব হত্যার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ এবং সেই দায় পালনের মধ্য দিয়ে বিশ শতকের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে মধ্যযুগীয় নারী ও শিশুহত্যার মতো নিকৃষ্টতম ঘটনার সত্য উন্মোচনে।
প্রচলিত আইনে হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু অপ্রচলিত ও বর্বরতম এই হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের চিন্তা, পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের পদচ্ছাপগুলো অনুসরণ করে তার বিচার-বিশ্নেষণ-উন্মোচন বিশেষ করা হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বড় পরিসরে ঘটনাধারা বিচারে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছিলেন বাঙালি-অন্তঃপ্রাণ সিংহলী, ঢাকার সাংবাদিকতার বৃত্তের প্রবীণ পুরুষ এ. এল. খতিব। বঙ্গবন্ধু-হত্যার পর তিনি তাঁর ভালোবাসার দেশ, বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান এবং ভারত থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর গ্রন্থ 'হু কিল্ড মুজিব'।
এরপর আমরা পাই দুই দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা আরও দুই তাৎপর্যপূর্ণ গ্রন্থ, অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাসের 'দি লেগাসি অব ব্লাড' এবং লরেন্স লিফৎশুলজের 'দি আনফিনিশড রেভলিউশন'। প্রথম বইটির পেছনে তৎকালীন সামরিক শাসকের নিজস্ব এজেন্ডা খুব অপ্রকাশ্য ছিল না, তবে ঘটনার বিশদ রূপ উদ্ঘাটনে লেখক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। অন্যদিকে লরেন্স লিফৎশুলজ জাসদের তথাকথিত বিপ্লব-প্রয়াসের প্রতি পক্ষপাত প্রদর্শন করলেও গবেষণা ও নতুন তথ্য উন্মোচনে সাফল্যের পরিচয় দেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যায় তৎকালীন মার্কিন প্রশাসনের তৎপরতা ও যোগসাজশের অনেক ইঙ্গিত এখান থেকে মেলে। বিভিন্নভাবে যে বার্তাগুলো উদ্ঘাটন করেছিলেন লিফৎশুলজ, তা আরও বড় পরিসরে এবং সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরেন ক্রিস্টোফার হিচেন্স তাঁর বিভিন্ন রচনায় এবং পরে যা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় 'দি ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার' নামে। মার্কিন নীতিনির্ধারণী বৃত্তে হেনরি কিসিঞ্জারের উত্থান ও অবস্থান বিস্ময়কর ও তুলনারহিত।
প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের হাত ধরে তাঁর হোয়াইট হাউসে প্রবেশ, রাষ্ট্রপ্রধানের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিক্সনের জন্য প্রতিদিনের ব্রিফিং তৈরি এবং তাঁর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা বলার সুযোগে তিনি ক্ষমতা-কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন, এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চাইতেও শক্তিশালী। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির জন্য নিন্দিত হয়ে প্রেসিডেন্ট নিক্সন বিদায় নিলেও নন্দিত কিসিঞ্জার থেকে যান বহাল তবিয়তে এবং পদোন্নতি পেয়ে পরে তিনি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মার্কিনি প্রশাসন এবং নীতিনির্ধারক মহলে, একাডেমিক পরিমণ্ডলে তিনি সাক্ষাৎ দেবদূতের মতো অধিষ্ঠিত, ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান নির্বিশেষে প্রাজ্ঞ মহাপুরুষ হিসেবে স্বীকৃত। মার্কিন প্রশাসনের গোপন দলিলপত্র যত বেশি উন্মোচিত হচ্ছে, ততই হেনরি কিসিঞ্জারের আরেক চেহারা পরিস্কার হয়ে ফুটে উঠছে। তার পরও তাঁকে নিয়ে আমেরিকার সমাজপতিদের মুগ্ধতার অন্ত নেই। সেই হেনরি কিসিঞ্জারের মুখোশ খুলে দিতে কাজ করেছেন ক্রিস্টোফার হিচেন্স, ষাটের ও সত্তরের দশকের অনেক বর্বরতা, রাষ্ট্রপতি নিধন, অস্ত্রশক্তির প্রয়োগের পেছনে তাঁর কালো হাত তিনি দেখতে পেয়েছেন।
এসবের সবিস্তার আলোচনা মেলে তাঁর গ্রন্থে, আমরা অবশ্য তা পরিহার করে বাংলাদেশের নিরিখে হিচেন্সের বক্তব্য বিবেচনা করে দেখতে পারি। হেনরি কিসিঞ্জারের ভূমিকা বড় পরিসরে বিচারকালে আমাদের স্মরণ করতে হয় ১৯৭১ সালের ভূ-রাজনীতিক পটভূমি, যখন বিশ্ব ছিল পশ্চিমা গণতন্ত্রী ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক শিবিরে বিভক্ত, পারস্পরিক প্রভাব বলয় রক্ষা ও বিস্তারে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত। ফলে দেশে দেশে সামরিক শক্তি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে মূলত পশ্চিমা পরাশক্তির সমর্থনে, ক্ষেত্রবিশেষে সমাজতন্ত্রের পতাকা তুলে।
১৯৭১ সালের গোড়ায় এই বিশ্ববিন্যাসে চীন-সোভিয়েত ফাটল ব্যবহারে কূটবুদ্ধিজাত সম্ভাবনা শনাক্ত করেছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন গোপন বার্তা চালাচালি। পর্দার অন্তরালে কূটনীতির এই পালাবদল একান্ত গোপন রাখতে বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন কিসিঞ্জার। ১৯৭১-এর জুলাই মাসে ভারত সফর শেষে তিনি এসেছিলেন পাকিস্তানে। ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনা শেষে জানানো হলো, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং ইসলামাদের অদূরে শৈলনিবাস নাথিয়াগলিতে দু'দিন বিশ্রাম নেবেন। প্রকৃতপক্ষে কিসিঞ্জার তখন সাংবাদিক-কূটনীতিক সবাইকে ফাঁকি দিয়ে গোপনে গিয়েছিলেন বেইজিং। বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের সঙ্গে।
এ-প্রসঙ্গে এক মজাদার ঘটনা জানতে পারি সাংবাদিক এএফপির রিপোর্টার আর্নল্ড জেইটলিনের কাছ থেকে। কিসিঞ্জারের বিদায়ের আগে ইসলামাবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আর্নল্ড। যখন সভা বাতিল করে জানানো হলো কিসিঞ্জার অসুস্থ, দেশে ফেরা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে, তখন তিনি সেখানে উপস্থিত মার্কিন দূতাবাসের প্রথম সচিবের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, হেনরি কিসিঞ্জার এখন কোথায়? কাঁধে ঝাঁকুনি দিয়ে কূটনীতিক জানিয়েছিলেন, 'কে জানে কোথায়? হয়তো বেইজিংয়ে।' আর্নল্ড জেইটলিন বলেছেন যে, তাঁর জীবনে পাওয়া সবচেয়ে বড় স্কুপ নিউজ করার সুযোগ এভাবে তিনি হারিয়েছিলেন একে রসিকতা হিসেবে গণ্য করে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে কিসিঞ্জার চীন-মার্কিন আঁতাতের পৌরহিত্য করেন এবং তাঁর জীবনে এ ছিল পরম গৌরবময় সাফল্য। তিনি একে সেভাবেই দেখেছেন, তবে একই সময়ে পাকিস্তানি বর্বরতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল তাঁর সাফল্যের প্রতি চপেটাঘাত। একাত্তরজুড়ে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিরুদ্ধে তিনি একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছিলেন। তাঁর ভূমিকার ফলে চীন অর্জন করে জাতিসংঘে আসন গ্রহণের অধিকার এবং বিতাড়িত হয় তাইওয়ান। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্বে জাতিসংঘে চীন অবস্থান নেয় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জাতিসংঘে স্থান পাওয়ার বিরুদ্ধে ভেটো দিয়ে চলে চীন।
একাত্তরের ডিসেম্বরে যুদ্ধের শেষ পর্বেও পাকিস্তানের অবধারিত পরাজয় ঠেকাতে কিসিঞ্জার-নিক্সন চক্র সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরে প্রেরণ করেছিল। ঠিক একই সময়ে নিউইয়র্কে এসে কিসিঞ্জার গোপন বৈঠক করেন জাতিসংঘে নবনিযুক্ত চীনা দূত হোয়াং হোর সঙ্গে। চীনকে ভারত আক্রমণে তিনি প্ররোচিত করেন, নিদেনপক্ষে চীন যেন ভারত সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে সে জন্য অনেক কাকুতি-মিনতি করেন। আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভ উদ্ঘাটিত গোপন দলিল থেকে এসব জানা যায়। তবে সব ষড়যন্ত্রজাল ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিজয়ী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়, যা কিসিঞ্জার তাঁর ব্যক্তিগত পরাজয় ও অপমান হিসেবে গণ্য করেন এবং কখনও ভুলতে পারেননি।
১৯৭১ সালে কিসিঞ্জার-নীতির এই পরাজয়ের সঙ্গে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু-হত্যা ও সরকারের পালাবদল বা রেজিম চেঞ্জে মার্কিন প্রশাসন বিশেষভাবে হোয়াইট হাউসের ভূমিকা তথা ঘাতকদের সঙ্গে যোগসাজশ মিলিয়ে দেখার রয়েছে। এই মিলিয়ে দেখার কাজটি করেছেন ক্রিস্টোফার হিচেন্স এবং বিভিন্ন দেশে অনেক দুস্কর্মের সঙ্গে মুজিব-হত্যার জন্যও তিনি হেনরি কিসিঞ্জারকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন, 'আমি আমার বিবেচনা সীমিত রেখেছি শনাক্তযোগ্য সেসব অপরাধের মধ্যে যা ঘিরে যথাযথ অভিযোগনামা তৈরি করা যায় এবং করাটা সংগত। এর মধ্যে রয়েছে :১. ইন্দোচীনে সাধারণ মানুষদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা; ২. বাংলাদেশে গণনিধনে ও পরবর্তী হত্যাকাণ্ডে উদ্দেশ্যমূলক যোগসাজশ; ৩. গণতান্ত্রিক চিলির ঊর্ধ্বতন সাংবিধানিক কর্মকর্তাদের হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ব্যক্তিগত সম্পৃক্তি; ৪. গণতান্ত্রিক সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপ্রধান হত্যার পরিকল্পনায় ব্যক্তিগত যুক্ততা; ৫. পূর্ব তিমুরে জেনোসাইডে উস্কানিদান ও তা কার্যকরকরণ।'
ওই গ্রন্থে ২৮ পৃষ্ঠাব্যাপী অধ্যায়ে বাংলাদেশে গণহত্যা সংঘটন এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যায় হেনরি কিসিঞ্জারকে অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করার তথ্যপ্রমাণ ব্যাখ্যা করেছেন ক্রিস্টোফার হিচেন্স। এই অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন 'বাংলাদেশ, ওয়ান জেনোসাইড, ওয়ান ক্যু অ্যান্ড ওয়ান অ্যাসাসিনেশন'। বাংলাদেশের আজকের প্রজন্মের তরুণ আইনবিদ, ইতিহাসবিদ এবং অধিকারকর্মীরা ইতিহাসের সঙ্গে বোঝাপড়ার দায়িত্ব পালনে এগিয়ে যাবেন এবং একাত্তরের গণহত্যা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য ইউনিভার্সেল জুরিসডিকশনের আওতায় হেনরি কিসিঞ্জারের বিরুদ্ধে অভিযোগনামা তৈরি করে যথাযথ ও সংগত মামলা করবেন- সেই দিনের অপেক্ষায় আমি রয়েছি।
লেখক, প্রাবন্ধিক
মন্তব্য করুন