- বিশেষ আয়োজন
- ধরাছোঁয়ার বাইরে ১৫ আসামি
ধরাছোঁয়ার বাইরে ১৫ আসামি

দেড় যুগ আগে ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায়ে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ১৫ আসামি এখনও পলাতক। তাঁদের একজন ছাড়া বাকিরা কে কোথায় অবস্থান করছেন- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকারের কাছে নেই। পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে সরকার।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে সেই গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছিলেন আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন কয়েকশ। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মর্মান্তিক সেই ঘটনার বিচার নিম্ন আদালতে শেষ হয়েছে। উচ্চ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায়।
এ মামলায় ঢাকার আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদ দেন। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্য ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি রয়েছে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ। সাজাপ্রাপ্ত ৪৯ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম গত বছর করোনায় মারা গেছেন। অপর আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব আবদুল হারিছ চৌধুরী একই বছর মারা গেছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
বিচারের শুরুতে ১৮ আসামি পলাতক থাকলেও পরে দু'জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। গত বছর রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে এক আসামি মো. ইকবালকে আটক করে র্যাব। সে এখন কারাগারে।
পলাতক আসামিদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পুলিশের খাতায় সবাইকে পলাতক দেখানো হলেও তারেক রহমান লন্ডনে রয়েছেন। তবে অন্য পলাতক আসামিদের খুঁজে বের করতে দীর্ঘদিন ধরে তৎপরতা চালালেও সুনির্দিষ্ট অবস্থান পায়নি সরকার।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত তৎপর। এই মামলার সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামিদের ধরতে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আদালত ও পুলিশ প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, তারেক রহমানের অবস্থানের তথ্য জানা থাকলেও আইনের চোখে তিনি পলাতক। অন্য পলাতক আসামিরা হচ্ছেন- কুমিল্লার মুরাদনগরের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দিন মিয়া, রাতুল আহমেদ বাবু, মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের ও মুফতি শফিকুর রহমান।
পলাতক আসামিদের মধ্যে তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। মৃত্যুদ প্রাপ্ত আসামি মাওলানা তাজউদ্দিন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরপরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ভুয়া পাসপোর্টে তাঁকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন বলে পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ধারণা করা হচ্ছে। মো. হানিফের সম্ভাব্য অবস্থান মালয়েশিয়ায়। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদ মধ্যপ্রাচ্যে, রাতুল আহমেদ বাবু ইতালি, হরকাতুল জিহাদের অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি দুই ভাই মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন ও আনিসুল মুরসালিন ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন। অন্য পলাতক আসামিদের মধ্যে মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার পাকিস্তানে অবস্থান করছেন বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
মন্তব্য করুন