
একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামর্থ্য বোঝার জন্য মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হিসাব করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে জিডিপি দিন দিন বেড়ে চলছে। এই বেড়ে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন বাড়ছে, যা একটি দেশের জন্য অনেক মঙ্গলময়। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল আড়াই শতাংশ। তখন অবশ্য জিডিপির আকার ছিল ৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক গড় মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৮০ টাকা, যা তখনকার ৯৪ মার্কিন ডলারের সমান। পুরো সত্তরের দশকে গড়ে ৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়। আশির দশকেও এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। নব্বইয়ের দশকে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধির চাকাও ঘুরতে শুরু করে। তবে ওই দশকে প্রবৃদ্ধি ৪-৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। মূলত ২০০০ সালের পর থেকেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ পেরিয়ে ৬ শতাংশের পথে হাটে। ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যায় (৬.৪৬%)। ঠিক পাঁচ বছর পর তা ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। তিন বছরের মাথায় তা ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির জন্য অন্যতম তিনটি খাত হলো কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত।
কৃষি খাত :কৃষি খাতের ২০২১-২২ অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে শতকরা ২ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর মধ্যে শস্য উপখাতে শতকরা ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, পশুপালন উপখাতে শতকরা ৩ দশমিক ১০ ভাগ, বন উপখাতে ৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং মৎস্য খাতে ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে।
শিল্প খাত :২০২১-২২ অর্থবছরে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রবৃদ্ধি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। এছাড়া এ বছর সাময়িক হিসাবে বিদ্যুৎ খাতে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং নির্মাণ খাতে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে শিল্প খাতে গত বছরের (২০২০-২১) তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে।
সেবা খাত :২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা খাতে ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ, যানবাহন খাতে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, ব্যাংক ও বীমা খাতে ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ ও স্বাস্থ্য খাতে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে সেবা খাতে গত বছরের (২০২০-২১) তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে পোশাক খাত। তবে শুরু থেকেই পোশাক খাত এতটা সমৃদ্ধিশালী ছিল না। স্বাধীনতার পরপর বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় দুটি পণ্য ছিল পাট ও চা। শুধু পাট ও চা রপ্তানি করেই ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩৪৮ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছিল।
বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, উৎপাদিত শিল্পজাতপণ্য রপ্তানি করেই বাংলাদেশ ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, চামড়া, নিটওয়্যার, সার ও রাসায়নিক দ্রব্য, পেট্রোলিয়াম উপজাত, হস্তশিল্পজাত পণ্য, সিরামিক, টেক্সটাইল, সফটওয়্যার ও আইসিটি পণ্য, জাহাজ ও ভেসেল, ওষুধসামগ্রী, বইপত্র ও সাময়িকী অন্যতম।
প্রবৃদ্ধি হার বাড়াতে নতুন অনেক খাত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে গরু ও হাঁস-মুরগি পালন ও মাংস উৎপাদন এবং নার্সারি ব্যবসায়ের বিকাশ ঘটায় এগুলো জিডিপিতে নতুন খাত হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। কৃষি খাতেও এখন লটকান, ড্রাগন ও স্ট্রবেরি ফল এবং ক্যাপসিকাম, মাশরুম ইত্যাদি নতুন নতুন সবজির বাণিজ্যিক আবাদ বেড়ে যাওয়ায় জিডিপিতে নতুন যুক্ত করা হয়েছে। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল নতুন সম্ভাবনা জিডিপি বৃদ্ধিতে।
বিষয় : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০২২ ১৮ বছরে সমকাল
মন্তব্য করুন