কৃষিতে আমাদের দেশ এগিয়ে চলছে। চাষ করা জমি দিন দিন কমতে শুরু করলেও উচ্চ ফলনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাধীনতার ঠিক পরে ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য ওই খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল না। জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, চলতি অর্থবছরে দেশে ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮২ হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে।

যা এক দশক আগে (২০১১-১২ অর্থবছরে) ছিল ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮ হাজার টন। আর গত অর্থবছরে দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৫২ লাখ ৯৫ হাজার টন। ভূমি জরিপ বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৭১ সালে আমাদের আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর, যা বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টরে। বর্তমানে জনসংখ্যা ১৮ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে ফলনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে বড় পরিসরে।

বর্তমানে ব্যবহার বাড়ছে মাড়াই যন্ত্রের। সমন্বিত মাড়াই যন্ত্র বা কম্বাইন হারভেস্টার জাপানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হচ্ছে। এতে কৃষকরা সুফল পাচ্ছে। খুব সহজেই ফসল কেটে মাড়াই করে দিচ্ছে। সরকার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে কৃষিযন্ত্র কিনতে। ২০২৫ সালের মধ্যে ১২ ক্যাটাগরিতে ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষিযন্ত্র বিতরণ করা হবে। এ জন্য ব্যয় হবে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা। ২০২০ সাল থেকে এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের নাম 'সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ'।

সবচেয়ে আশার আলো, দেশে এখন অনেক উচ্চশিক্ষিত তরুণ কৃষিতে যোগ দিচ্ছে। কেউ কেউ বিদেশে কৃষিতে গবেষণা করে এসে বা ট্রেনিং শেষে বিভিন্ন খামার গড়ে তুলেছে। কেউ কেউ বিভিন্ন ফলের চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। তাদের এই সফলতা দেখে অনেক তরুণ উৎসাহ পাচ্ছে। তারাও যুক্ত হচ্ছে কৃষিতে। গবাদি পশু পালনে দিন দিন বাংলাদেশ আশার আলো দেখছে। মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে গরু-ছাগল, ভেড়া ও মহিষের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৩২ লাখ ১১ হাজার।

ওই সময় দুধ ও মাংস উৎপাদন ছিল প্রায় ৮৭ লাখ টন। সেখান থেকে সর্বশেষ গত অর্থবছরে (২০২১-২২) দেশে গবাদি পশুর সংখ্যা কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ৩৪ হাজারে। অন্যদিকে দুধ ও মাংস উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ২৩ লাখ টনের বেশি। সে হিসাবে গত এক দশকে দেশে গবাদি পশু ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ বাড়লেও দুধ ও মাংস উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি ১৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এভাবে বাড়তে থাকলে আগামীতে নতুন পথ দেখাবে বাংলাদেশ। অনেক কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে। কৃষিতথ্য সার্ভিস জানায়, এরই মধ্যে লবণাক্ততা ও খরাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও নতুন জাত উদ্ভাবন করতে ব্যস্ত কৃষি গবেষকরা। তাঁরা ব্যস্ত খরা, লবণাক্ততা ও বন্যা প্রতিরোধী ফসলের জাত উদ্ভাবনে।

প্রযুক্তিকে খুব সহজে পৌঁছে দিতে কৃষি তথ্য সার্ভিস দারুণ উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষি সম্পর্কে অনেক কিছু জানার আগ্রহ থাকে। কিন্তু সঠিক তথ্য কীভাবে পাবে, তার জন্য থাকে অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তিগুলোর তথ্যসমৃদ্ধ 'কৃষিপ্রযুক্তি ভান্ডার' নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে। মূলত এটি কৃষিপ্রযুক্তিভিত্তিক একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন।

এ অ্যাপটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের মোবাইল হ্যান্ডসেটে ব্রাউজ করে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের বিস্তারিত প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারবেন। অধিকতর তথ্যের জন্য উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রশ্ন জানাতে পারবেন। এ ছাড়া কৃষি পরামর্শের জন্য দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে পরামর্শ নিতে পারবেন। কৃষি কল সেন্টারে যে কোনো অপারেটর থেকে ১৬১২৩ নম্বরে প্রতি মিনিট ০.২৫ টাকা (ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক্ক ছাড়া) ব্যয়ে ফোন করে কৃষি/মৎস্য/প্রাণিসম্পদ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক সমাধান নিতে পারবেন। শুক্রবার ও সরকারি বন্ধের দিন ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ সেবা দেওয়া হচ্ছে।