দিনটি ছিল ১৯৫৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চার বছর পর রংপুরে নির্মাণ করা হয় প্রথম শহীদ মিনার। ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের স্মরণে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের যৌথ উদ্যোগে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে রাতের আঁধারে নির্মিত হয় স্মৃতির এ মিনার। অসীম সাহস আর মনোবল নিয়ে ছাত্র নেতারা নিজেরাই ইট-বালু, কাদামাটি ও সিমেন্ট সংগ্রহ করেন। রাতেই তাঁদের প্রচেষ্টায় ছোট আকারে মাথা তুলে দাঁড়ায় স্মৃতির মিনার।

৬৬ বছর আগে দুঃসাহসিক ওই রাতের স্মৃতি এখনও ভোলেননি প্রবীণ রাজনীতিক ও ভাষাসংগ্রামী মোহাম্মদ আফজাল। জীবনভর রাজনীতি করা মানুষটি ওই কাজের উদ্যোক্তা হওয়াকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে গর্বের বিষয় বলে জানান। তিনি বলেন, শহীদ মিনার নির্মাণ নিয়ে আলোচনার জন্য ১৯৫৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ভাষাসংগ্রামী তবিবর রহমানের বাড়িতে যান আমিনুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম, নজমুল আলম হেবিন, ছোট ভাই জেবিন, গোলাম রব্বানী বুলবুল, মকসুদার রহমান, সুফী মোতাহার হোসেন, মীর আনিছুল হক পেয়ারাসহ অনেকে। ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের যৌথ কমিটি রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে শহীদ মিনারটি তৈরি করে।

তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনারা শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলে। দেশ স্বাধীনের পর দ্বিতীয় দফায় ওই স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এর পর ১৯৮১ সালে তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তৃতীয় দফায় বড় করে এখনকার শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়।

মোহাম্মদ আফজালের জন্ম ১৯৩৭ সালে রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় সল্ফ্ভ্রান্ত এক পরিবারে। ১৯৫২ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করেন তিনি। ওই সময়ই ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। ছাত্র অবস্থাতেই রাজনীতিতে জড়ানো মানুষটি মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকও। ছাত্র ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করে যুবলীগসহ মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। গণতন্ত্রী পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ দীর্ঘদিন দলটির সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে প্রেসিডিয়াম সদস্যের দায়িত্বে রয়েছেন।

আপসহীন নেতা হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আফজালের বয়স এখন ৮৬। শরীরে বার্ধক্য ভর করলেও দেশ নিয়ে এখনও ভাবেন তিনি। বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির বাস্তবায়ন না থাকায় দুর্নীতি ও সহিংসতা বেড়েই চলেছে। ক্ষমতার হাত বদল হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। এ কারণে স্বাধীনতার চেতনা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।