- বিশেষ আয়োজন
- সর্বজনীন চক্ষুসেবা নিশ্চিতে দরকার সম্মিলিত উদ্যোগ
সর্বজনীন চক্ষুসেবা নিশ্চিতে দরকার সম্মিলিত উদ্যোগ

দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চক্ষুসেবা কেন্দ্র বাড়লেও সেবার সক্ষমতা বাড়েনি। চোখের জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসায় নানামুখী সংকটে পড়ছেন রোগীরা। এদিকে বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসায় উচ্চ ব্যয়ের কারণে রোগীদের বড় একটি অংশই চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চক্ষুসেবার সক্ষমতা বাড়াতে প্রাথমিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সমকালের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য
সুরক্ষা: সবার জন্য চক্ষু স্বাস্থ্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। সমকাল ও সাইটসেভার্স এ বৈঠকের আয়োজন করে।
অমৃতা রেজিনা রোজারিও
চক্ষু স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে নীতি-কাঠামো তৈরির পাশাপাশি চক্ষুসেবা সম্প্রসারণে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে সাইটসেভার্স। একই সঙ্গে জাতীয় চক্ষু স্বাস্থ্য পরিকল্পনা (২০০৫-২০১৩ ও ২০১৪-২০২০) তৈরিতেও সরকারকে সহযোগিতা করেছে সাইটসেভার্স। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার মূল বিষয় হলো সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। চাহিদা অনুযায়ী জনসম্পদ না থাকলে আমরা সর্বজনীন চক্ষুস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পারব না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট অন ভিশন-২০১৯’ বলছে, সারাবিশ্বে প্রায় ২২০ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন। যার মধ্যে ১০০ কোটি মানুষের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা নিরসনযোগ্য। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধে চক্ষু স্বাস্থ্য পরিষেবা বাড়ানো জরুরি। বাংলাদেশে চক্ষু চিকিৎসায় জনবল সংকট রয়েছে। যে সংখ্যক জনবল রয়েছে, সেখানেও শহর ও গ্রামভিত্তিক সমতা নেই। দেশের জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্যান্য সেবার সঙ্গে চক্ষুসেবা নিশ্চিত করা গেলে সর্বজনীন চক্ষুসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। জেলা পর্যায়ে এখনও উন্নত চক্ষুসেবা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এ অপ্রতুলতা দূর করতে সম্মিলিত পদক্ষেপ জরুরি। দেশের চিকিৎসাসেবার পেছনে খরচ জোগাতে গিয়ে প্রতিবছর দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরও দরিদ্র হয়ে পড়ছে। অনেকেই আবার খরচের ভয়ে ঠিকমতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। সরকার এ ক্ষেত্রে নানা পদক্ষেপ নিলেও তা আরও গতিশীল করা দরকার।
মোজাম্মেল হোসেন
মানুষের দেহঘড়ি সচল রাখতে সব অঙ্গের পরিচর্যা দরকার। জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু বা ব্যক্তিকে আমরা বলি ‘নয়নের মণি’। দৃষ্টিহীনের ন্যূনতম প্রয়োজন লাঠিকে আমরা বলে থাকি ‘অন্ধের যষ্টি’। এ থেকে বোঝা যায়, চোখের যত্ন বা চিকিৎসা কতটা জরুরি। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার কথা যখন আমরা বলি, তখন আয় সংগতি নির্বিশেষে সব মানুষ এ সেবার আওতায় কীভাবে আসবে– এ বিষয়ে ভাবতে হবে।
মো. রফিকুল ইসলাম
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি টাকা ছাড়া চক্ষুসেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রতিবন্ধীদের সেবা নেওয়ার উপযোগী করে তুলতে হবে। মানসিকতায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইকেয়ার সেবা জোরদার করতে হবে। সেবার মান উন্নয়নে তদারকি ব্যবস্থাতে জোর দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, চক্ষুসেবাকে এগিয়ে নিতে ২০৩০ সালের মধ্যে চক্ষু চিকিৎসায় চশমার ব্যবহার আরও ৪০ শতাংশ বাড়াতে হবে। এখন যে সার্জারি হয়, সেটি আরও ৩০ শতাংশ বাড়াতে হবে। আশা করছি, অচিরেই আমরা বেজলাইন পেয়ে যাব। এটি ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দিন দিন ডায়াবেটিস রোগী বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকলে চোখে সমস্যা তৈরি হয়। এ ধরনের রোগীর সেবার কথা ভাবতে হবে। সর্বজনীন চক্ষুসেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ন্যাশনাল আইকেয়ার, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, প্রথামিক স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এসব বিভাগে যদি সমন্বয় না থাকে তবে সব মানুষের চক্ষুসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সবার কাছে চক্ষুসেবা পৌঁছে দিতে দেশে ১ হাজার ৬০০ চোখের ভিশন সেন্টার প্রয়োজন। এখন আছে মাত্র ২৫৫টি। এ জন্য চোখের সেবার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। এসব ক্লিনিকে সেবার মান আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি ও উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চক্ষুসেবা নিশ্চিতে একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে একটি কর্মশালার মাধ্যমে এটি উন্মুক্ত করা হবে।
অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বলতে বোঝায়, যখন যেভাবে মানুষ অসুস্থ হোক, টাকা ছাড়া সে সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সব কেন্দ্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য জনবল নিশ্চিত করতে হবে। আমরা জেলা পর্যায়ে দক্ষ জনবল তৈরিতে কাজ করছি। অনলাইনের মাধ্যমে উন্নত চক্ষুসেবা চিকিৎসা নিশ্চিত করছি। যাঁরা টাকার অভাবে সেবা নিতে পারছেন না, এর মাধ্যমে তাঁদের সেবা নেওয়ার উৎস তৈরি হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে আমরা এ ধরনের সেবা দিতে পারছি না। এ বিষয়ে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে কাজ চলমান। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকরা থাকতে চান না। এভাবে আমাদের মানসিকতা তৈরি করা হয়েছে। যে কারণে প্রান্তিক পর্যায়ে চক্ষুসেবা নিশ্চিত করা একটু কঠিন। তবুও আমরা আইনগত পদ্ধতির মাধ্যমে রাখার চেষ্টা করছি। এটি নিয়ে আমরা একাধিকবার বসেছি। রোগীর সার্জারিগুলো সরকারি-বেসরকারি দুই জায়গায় হয়। অনেক সময় রোগী নিজেই গোপন করেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও ভালো তথ্য পাওয়া যায় না। আমরা একটি জরিপের উদ্যোগ নিচ্ছি। এটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে কোন জায়গায় আমাদের গ্যাপ রয়েছে, তা বের করতে পারব। কোন চক্ষু রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, এটি আমরা দেখাতে পারব। এর পর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে পারব– কীভাবে এই সেবাকে আরও উন্নত করা যায়। চক্ষুসেবায় সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। জেলা পর্যায়ে ১৩৫টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টার করা হয়েছে, যা চলতি বছর ২০০-তে উন্নীত করা হবে। এখন সেবার কথায় আসি। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে আমরা প্রায় ১২ লাখ মানুষের সেবা দিতে পারছি। কাছের বস্তু দেখার জন্য প্রায় ২ লাখ মানুষকে চশমা দিতে পেরেছি এবং পরবর্তী পর্যায়ে বিনামূল্যে চশমা দেওয়া হবে। এমনকি বিনামূল্যে ওষুধ সেবা দেওয়া হচ্ছে। যেসব রোগী অর্থের অভাবে সেবা নিতে পারছেন না, তাঁদের যাতায়াত সুবিধা দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার।
ডা. মুনির আহমেদ
স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত যেসব খাতে উন্নতি সাধিত হয়েছে, তা সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিতভাবে কাজ করার কারণে। চক্ষুসেবাকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। এ সেবাকে এখনও বিভাগীয় পর্যায়ে বা জেলা পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে নিতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগ প্রয়োজন। এখানে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে। আই হেলথ সেক্টরের মাইন্ডসেটের একটি ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। জাতীয় পর্যায়ে একটি তদারকি কমিটি করা প্রয়োজন। রোগী শনাক্তের ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। যেসব কেন্দ্র রয়েছে এগুলো উন্নত সেবার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকে চক্ষুসেবা চালু করতে হবে। চিকিৎসাসেবা বাড়াতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। এ জন্য বৃহত্তর পরিসরে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। ন্যাশনাল আইকেয়ারের বিরাট কর্মসূচি রয়েছে। এটি সামনে এগিয়ে নিতে কী কী করণীয় এখনই সে বিষয়ে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।
অয়ন দেবনাথ
বাংলাদেশে চক্ষু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। বছরে দুইবার চোখ পরীক্ষা করা যে কতটা জরুরি, এ বিষয়ে মানুষ তেমন সচেতন নয়। এসব বিষয়ে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের দরিদ্র মানুষের বিনামূল্যে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম বা ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ বাস্তবায়ন জরুরি। তবে এ ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তা উত্তরণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বিত কর্মকৌশল ঠিক করার পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আরও বেশি ভূমিকা অপরিহার্য।
ডা. খালেদা ইসলাম
সর্বজনীন চক্ষুসেবা নিশ্চিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কাঠামোতে চোখের চিকিৎসা সঠিকভাবে সংযুক্ত করা প্রয়োজন। সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হলেও চক্ষুসেবার বিষয়ে সেখানে কিছু বলা নেই। অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবায় প্রাইমারি চক্ষুসেবাকে যুক্ত করতে হবে। সরকারের অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় চক্ষু চিকিৎসার ওষুধগুলো সংযুক্ত করতে হবে। চোখের চিকিৎসায় বিনামূল্যে চশমা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। আমাদের দেশের চক্ষুসেবায় বিশেষজ্ঞ সংকট রয়েছে। এটি বাড়াতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। চোখের চিকিৎসায় তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণে অনেক পিছিয়ে রয়েছি আমরা। এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে সরকারের। তথ্য যদি সঠিকভাবে সংগ্রহ করতে না পারি এবং সে তথ্যের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী পরিকল্পনা তৈরি করতে পারব না। আইকেয়ারের জন্য পর্যান্ত বাজেট নেই। সব শেষে তদারিকতে জোর দিতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের নিয়মিত তদারিক প্রয়োজন। মানুষের মধ্যে যদি সচেতনতা তৈরি করতে না পারি তাহলে সর্বজনীন চক্ষুসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে সবাইকে নিজের চোখের যত্ন নিতে হবে। পাশাপাশি সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
ডা. নোমান মুশফিকুর
সর্বজনীন চক্ষুসেবা নিশ্চিতে সারাদেশে ন্যাশনাল আইকেয়ার কাজ করে যাচ্ছে। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সেবা অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা পর্যায়েও সরকার এখন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে চশমা দিচ্ছে। রাতারাতি অবস্থার পরিবর্তন হবে না। ন্যাশনাল আইকেয়ারের মাধ্যমে সারাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নত সেবা দেওয়া হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে। এ জন্য দু’জন নার্সকে ঢাকায় এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেশের বাইরে ভারত থেকেও তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ন্যাশনাল আইকেয়ারের মাধ্যমে ঢাকায় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। পরবর্তী অর্থবছর থেকে আমরা ফ্রি চশমা দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। চক্ষুসেবা নিশ্চিতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। আইকেয়ারে অপারেশন প্রয়োজন এমন অনেক রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তবে অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। কীভাবে বিনামূল্যে করা যায়, এ বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। গণমাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে যেসব প্রতিনিধি রয়েছেন, তাঁরা যেন এ বিষয়গুলো আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ কে এম আখতারুজ্জামান
আমাদের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পেছনে একটি দর্শন রয়েছে। সবার সেবার মনোভাব রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা বড় বড় কাঠামো গড়ে তুলেছে, তবে তাদের সেবা দেওয়ার মনোভাব নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রচারে বিশ্বাসী নয়। ঢাকাসহ সব জেলাতে চক্ষুসেবার সংকট রয়েছে। আমাদের হাসপাতালের জন্য নিজেরা দক্ষ জনশক্তি তৈরির চেষ্টা করছি। তবে সেটা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। সরকার থেকেও এ উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বিভাগীয় শহরেও দক্ষ চিকিৎসক সংকট রয়েছে। রাতারাতি আমরা দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারব না। শুধু সংখ্যার দিক দিয়ে সেবা নিশ্চিত করলে হবে না, উন্নত ও মানসম্মত সেবার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্ধত্ব দূর করতে অনেক রোগীর কর্নিয়া প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। তা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এ জায়গাতে কাজ করতে হবে। সরকারি ও ধর্মীয় এবং সামাজিকভাবে এ বিষয়ে সতর্ক করে তুলতে হবে মানুষকে। এ সংকট উত্তরণে জনগণের সচেতনতা জরুরি।
হাসিনা আখতার
চোখের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে দেশে যে সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে এ সংকট আরও প্রকট। এটি বাড়াতে চট্টগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে সার্বিক আলোচনা করা দরকার। অনেকের ঘরের কাছে চোখের চিকিৎসা থাকলেও সচেতনতার অভাবে সেবা নেন না। এ ছাড়া সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে আছেন। এ ক্ষেত্রে অর্থ বড় বিষয় হিসেবে কাজ করে। অর্থ সংকটে অনেক মানুষ সেবা নিতে আসে না। এটি উন্নয়নে সরকারি ও উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জরুরি। অন্ধত্ব রুখতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধও খুব জরুরি। একসময় বলা হতো, শুধু বয়স্কদের ডায়াবেটিস হয়। এখন তো সবারই ডায়াবেটিস হচ্ছে। এটি প্রতিরোধে জোর দিতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে এটি আরও এগিয়ে নিতে হবে। কোনো সহযোগিতা চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার। এ জন্য বড় পরিকল্পনা প্রয়োজন। একই সঙ্গে মিডিয়া বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
এ এইচ এম নোমান খান
দেশের মানুষের আয়ু বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর হার কমছে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবার হার বেড়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সরকারের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছানো যাচ্ছে না। এখন আইকেয়ারের সুবিধা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। দেশে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে অন্ধত্বের হার সবচেয়ে বেশি। দেশের ৩০ লাখ প্রতিবন্ধী চোখের সমস্যায় ভুগছেন। এই সংখ্যা যত বেশি হবে; পরিবারের বোঝা তত বাড়বে। রাষ্ট্রীয় বোঝাও তত বাড়বে। প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁদের চিকিৎসার আওতায় আনা গেলে অনেকে চোখের আলো ফিরে পেতেন। দেশে চক্ষুসেবা কেন্দ্র বাড়লেও সেবার মান বাড়েনি। চোখের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে মহাপরিকল্পনা নিতে হবে। আগে গ্রাম এলাকায় চক্ষুসেবা বাড়ত, এখন বাড়ে না। কয়েকটা বিষয়ের ওপর আমাদের এখন নজর দিতে হবে। অন্ধত্ব বন্ধে চক্ষুসেবার মান বাড়াতে হবে। অনেক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এ ক্ষেত্রে কাজ করে। এখন দরকার সরকারি হাত কীভাবে শক্তিশালী করা যায়। এখনও গ্রাম পর্যায়ে স্ক্রিনিং বাড়ানো সম্ভব হয়নি। আগে চোখে সার্জারি করাতে হবে শুনলে মানুষ পালিয়ে যেত। এখন এ মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে দেশে ২৫৫টি ভিশন সেন্টার চালু হয়েছে। এগুলোতে অনেক সংকট রয়েছে। অনেকে এখান থেকে সেবা পাচ্ছেন না। স্ক্রিনিংটা যদি আমরা কমিউনিটি পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এটি আরও ভালো পরিসরে করা যাবে। একই সঙ্গে রেফারেল পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয় করতে হবে।
বশির আল-হোসাইন
জেলা-উপজেলায় প্রতিবন্ধীদের সেবার উপযোগী চক্ষু কিনিক গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে। চক্ষুসেবা একটি ব্যয়বহুল সেবা। নিজ উদ্যোগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এটি নিতে পারেন না। অনেক প্রতিবন্ধী আছেন, যাঁরা নিজেদের চোখের সমস্যার কথা চিকিৎসকদের কাছে বলতে পারেন না। এসব দিক বিবেচনা করে যদি সরকার এ বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে প্রতিবন্ধীদেরও চক্ষুসেবায় নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
নাসিমা আক্তার
চোখের যত্ন ও চিকিৎসার বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এখনও চোখের প্রেশার রয়েছে। মোবাইল ও প্রযুক্তির নানা ডিভাইস আসক্তিতে দেশে অন্ধত্বের হার বাড়ছে। বয়স্কদের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তবে তাঁদের অনেকেই সেবা কোথায় নিতে হয়, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। গ্রামে যে ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে আমার মতো কোনো প্রতিবন্ধী গিয়ে সেবা নিতে পারবেন না। সেবা দেওয়ার জন্য আলাদা কোনো সুবিধা দিয়ে সেসব ক্লিনিক তৈরি করা হয়নি। প্রতিবন্ধী অনেকেই অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে চোখের সেবা নিতে পারেন না। জেলা-উপজেলায় প্রতিবন্ধীদের সেবার উপযোগী চোখের ক্লিনিক তৈরি করতে হবে।
সভাপতি
মোজাম্মেল হোসেন
সম্পাদক, সমকাল
শুভেচ্ছা বক্তব্য
অমৃতা রেজিনা রোজারিও
কান্ট্রি ডিরেক্টর, সাইটসেভার্স বাংলাদেশ
কো-চেয়ার, আই-আইএনজিও ফোরাম
মূল প্রবন্ধ
মো. রফিকুল ইসলাম
প্রজেক্ট ম্যানেজার–আই হেলথ
সাইটসেভার্স বাংলাদেশ
সঞ্চালনা
অয়ন দেবনাথ
অ্যাডভোকেসি, কমিউনিকেশন
কো-অর্ডিনেটর ও ক্যাম্পেইন লিড
সাইটসেভার্স বাংলাদেশ
আলোচক
অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ
প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ন্যাশনাল আইকেয়ার
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
ডা. মুনির আহমেদ
কান্ট্রি ডিরেক্টর, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল
চেয়ার, আই-আইএনজিও ফোরাম
ডা. খালেদা ইসলাম
সাবেক পরিচালক, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
ডা. নোমান মুশফিকুর
ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ন্যাশনাল আইকেয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ কে এম আখতারুজ্জামান
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
হাসিনা আখতার
কান্ট্রি ডিরেক্টর
হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
এ এইচ এম নোমান খান
নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি)
বশির আল-হোসাইন
প্রোগ্রাম ম্যানেজার, জাতীয় তৃণমূল প্রতিবন্ধী সংস্থা
নাসিমা আক্তার
প্রেসিডেন্ট
ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ডিজঅ্যাবল্ড উইমেন
অনুলিখন
তবিবুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক, সমকাল
সমন্বয়
হাসান জাকির
হেড অব ইভেন্টস, সমকাল
মন্তব্য করুন