বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উদার গণতান্ত্রিক সূচক ও নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়েছে। 

সুইডেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসির (ভি-ডেম) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিবারেল ডেমোক্রেসি ইনডেক্স বা উদার গণতান্ত্রিক সূচকে ১৭৯টি দেশের মধ্যে এক ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪৭তম। স্কোর দশমিক ১১। গতবারের চেয়ে স্কোর কমেছে দশমিক ০২।
ইলেকটোরাল ডেমোক্রেসি ইনডেক্স বা নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের সূচকেও বাংলাদেশের অবনমন হয়েছে। সূচকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৩১তম। স্কোর দশমিক ২৮। স্কোর কমেছে প্রায় দশমিক ০৩।  আগের বছরও বাংলাদেশ ছিল অবনতির ধারায়।

গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। ভি-ডেমের ২০২৩ সালের প্রতিবেদনের শিরোনাম ডিফাইয়্যান্স ইন দ্য ফেস অব অটোক্রাটাইজেশন বা স্বৈরতান্ত্রিকীকরণের অদম্য। সাত বছর ধরে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি-ডেম ইনস্টিটিউট।

এ ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাসনতান্ত্রিক দিক থেকে বাংলাদেশ আছে ‘নির্বাচনভিত্তিক স্বেচ্ছাতন্ত্র’ (ইলেকটোরাল অটোক্রেসি) বিভাগে। এর অর্থ হলো এ দেশে গণতন্ত্র অপসৃয়মাণ। আর সে জায়গায় ধীরে ধীরে স্থান করে নিচ্ছে স্বেচ্ছাচারী শাসন। বাংলাদেশের অবস্থান আগের প্রতিবেদনে এমনই ছিল।

লিবারেল (উদার) কম্পোনেন্ট ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫৫তম। ইগলিট্যারিয়ান (সমতা) কম্পোনেন্ট ইনডেক্সে ১৬৫তম। অংশগ্রহণমূলক কম্পোনেন্ট ইনডেক্সে ১৪২তম। ডেলিবারেটিভ (সিদ্ধান্তমূলক) কম্পোনেন্ট ইনডেক্সে বাংলাদেশ ১৪৫তম স্থানে আছে। প্রতিবেদনে উদার গণতান্ত্রিক সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে কংগো, লিবিয়া, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, মিসর, ফিলিস্তিনের মতো দেশগুলো।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতও আছে নির্বাচনভিত্তিক স্বেচ্ছাতন্ত্র বিভাগে। ভারতের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। উদার গণতান্ত্রিক সূচকে ভারতের অবস্থান ৯৭তম। নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের সূচকে ১০৮তম। উভয় ক্ষেত্রে ভারতের অবনমন ঘটেছে।

এ সূচকে তানজানিয়া, বলিভিয়া, মেক্সিকো, সিঙ্গাপুর এবং এমনকি নাইজেরিয়ার মতো দেশের নিচে রয়েছে ভারত। এক্ষেত্রে ভারত তার সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের চেয়ে মাত্র দুই ধাপ এগিয়ে রয়েছে।


ভি-ডেমের প্রতিবেদনে উদার গণতান্ত্রিক সূচকে শীর্ষস্থানে আছে ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও নিউজিল্যান্ড।  আর তলানিতে আছে উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া, আফগানিস্তান, চাদ, সিরিয়া, চীন ও বেলারুশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৫৭০ কোটি বা মোট জনসংখ্যার ৭২ শতাংশ স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে ছিল। ১০ বছর আগে তা ছিল ৪৮ শতাংশ। আর বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ উদার গণতন্ত্রে বাস করে। উদার গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩২টি। গত ৩৫ বছরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যে উন্নতি হয়েছিল, তা উবে গেছে। বিশ্বের ২২০ কোটি মানুষ বা মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ রুদ্ধ স্বৈরতন্ত্রে বাস করছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৩৫টি দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবনতি ঘটেছে। গণমাধ্যমের ওপর সরকারি সেন্সরশিপ বেড়েছে ৪৭টি দেশে। সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর ওপর সরকারি দমনপীড়ন বেড়েছে ৩৭টি দেশে।


বিষয় : ভি-ডেমের প্রতিবেদন

মন্তব্য করুন