
কোনো ভূখণ্ডে সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীর আচার-অনুষ্ঠান, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, বিশ্বাসসহ আচার, কৃত্য ইত্যাদি নিয়ে বহু যুগে একেকটি জাতিগত সংস্কৃতি আকার পায়। যার অস্তিত্ব আছে, তার সংকটও থাকে। প্রথাগত বিবিধ দ্বন্দ্বে সংঘাতে কখনো জাতির সংস্কৃতি শক্তিক্ষয় করে, কখনও নতুনত্ব অর্জন করে; তবে ক্রমাগত পরিশীলনে জাতির সংস্কৃতি বিকশিত হয়।
পৃথিবীর বৃহত্তর জাতিগুলোর একটি— বাঙালি। এ জাতির শিকড় গভীরে প্রোথিত, ডালপালা বহুধা বিস্তৃত।
প্রায় প্রতিটি সাংস্কৃতিক সামর্থ্যসম্পন্ন জাতির মতো বাঙালিরও রয়েছে নিজস্ব জীবনাচার, যাপন পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস, জ্যোতির্বিদ্যা, একাধিক সাল গণনা পদ্ধতি, সাহিত্যবোধ ও তা থেকে উদ্ভূত পুরাণ, যা বাঙালির প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবহমান।
বাঙালির গৌরবের অন্যতম অনুষঙ্গ বঙ্গাব্দ। এর গৌরব ও সুষমা পহেলা বৈশাখের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালায় প্রকাশিত হয়।
একেক জাতিতে নানান সম্প্রদায়ের সন্নিবেশ ঘটে। তাতে সে জাতিগত সাধারণ পরিচয় থেকে বিচ্যুত হয় না। বরং বহুত্ববাদের শর্তে একেকটি সম্প্রদায় জাতির ভাষায়, সুরে, শাস্ত্রে নতুন মাত্রা যোগ করে। জাতির প্রত্যেকে এই মাত্রার সঙ্গে গ্রন্থিত থাকেন, চেতনে কি অবচেতনে।
বাঙালি জাতিতে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টানসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নৃগোষ্ঠীর গোষ্ঠীজাত সম্প্রদায়ের আদর্শ ও ভাবধারার সন্নিবেশ ঘটেছে। বাঙালির হাজার বছরে মৈত্রীর ধারা সমস্ত সম্প্রদায়কে চিরকাল ছন্দোবদ্ধ, ঐক্যবদ্ধ রেখে এসেছে। তবে কখনও ছন্দপতন ঘটেনি তা নয়, ঐক্যের ওপরও হুমকি এসেছে। কিন্তু শেষ অবধি বাঙালি তার নিজস্ব শক্তিতে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে, বহুজাতিক রাষ্ট্র নির্মাণ করেছে। আবহমান বাংলার সংস্কৃতির উৎসে রয়েছে বিভিন্ন মেলা, সংগীত, নৃত্য নাটক, শিল্পকলাসহ নানা অনুষঙ্গ। অসাম্প্রদায়িকতা ও বহু বর্ণিল আনন্দ ও জীবন উদযাপনের উৎসব পহেলা বৈশাখ। হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতায় এই উৎসব বাংলা ও বাঙালির নিজস্ব। বাঙালির সাংস্কৃতিক নিজস্বতার বহু বর্ণিল সম্ভারের নানামাত্রিক বিশ্লেষণ নিয়ে সমকাল নববর্ষ আয়োজনের উপস্থাপনা
স্বাগত, বঙ্গাব্দ ১৪৩০।
শুভ নববর্ষ।
বিষয় : আমাদের নিবেদন নববর্ষ ১৪৩০
মন্তব্য করুন