খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার জমে উঠেছে। তিন মেয়র প্রার্থী ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তাঁদের দলীয় কর্মীরাও প্রচারে রাতদিন খাটছেন। গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোর ফলাফলের প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রচারে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে দেশব্যাপী সরকারের করা উন্নয়ন এবং গত পাঁচ বছরে খুলনায় হওয়া উন্নয়নের বিষয়টি। তাদের প্রধান ভরসা ‘উন্নয়ন ইস্যু’। অন্য প্রার্থীরা প্রচারে গুরুত্ব দিচ্ছেন ‘জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপট’ ও ‘সুষ্ঠু ভোটে’।

খুলনায় মেয়র পদে লড়ছেন চারজন। তাঁরা হলেন– আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক, ইসলামী আন্দোলনের আব্দুল আউয়াল, জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু ও জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন।

তবে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক আপিল করে রোববার উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তিনি এখনও প্রতীক বরাদ্দ পাননি এবং প্রচারে নামেননি। জাকের পার্টির প্রার্থীও এখনও প্রচারে নামেননি। তবে অন্য তিন প্রার্থী চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনের মাঠ।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার খালেক ২০০৮ ও ২০১৮ সালে দু’বার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের মেয়াদে বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের কাছ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন। আর শেষ মেয়াদে বরাদ্দ পেয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার কাজ চলমান। তালুকদার খালেক বলেন, সিটি করপোরেশন সৃষ্টির পর থেকে গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। উন্নয়ন কাজ চলমান। এসব কাজ শেষ হলে নগরীর চেহারা বদলে যাবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী প্রচারে আমি উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরছি। চলমান কাজগুলো ভালোভাবে সম্পন্ন করা এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ভোটারদের আবারও আমাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানাচ্ছি।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা বলেন, আমরা ভোটারদের বাড়ি, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গণসংযোগ, লিফলেট বিলি, মাইকিং, পোস্টার লাগানোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার চালাচ্ছি। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের প্রার্থী জয়লাভ করলে নগরীর উন্নয়ন হবে না, এটা খুলনার মানুষ বিশ্বাস করে।

এদিকে ইসলামী আন্দোলনের আব্দুল আউয়াল ও জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলামও প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শফিকুল ইসলাম বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। এই সরকার খুলনার পাটকলগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। গত পাঁচ বছরে খুলনা নগরীতে দৃশ্যমান বড় কোনো উন্নয়ন হয়নি। জলাবদ্ধতা, ভাঙাচোরা সড়কসহ নাগরিক দুর্ভোগগুলো আগের মতোই রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে আমি ভোটারদের কাছে এসব বিষয় তুলে ধরছি। তাঁদের বলছি, এ অবস্থার পরিবর্তনে প্রয়োজন নতুন নেতৃত্ব।

আব্দুল আউয়াল বলেন, দুর্নীতি-দুঃশাসন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। খুলনা নগরী এখন চলাচল ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। সবচেয়ে আগে প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আমরা ভোটারদের কাছে এই কথাগুলো তুলে ধরছি।

ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান শেখ মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের দলের কর্মীরা ভোটারদের কাছে সরকারের দুর্নীতি, ব্যর্থতা, লুটপাট ও অপশাসনের কথা তুলে ধরছেন। তিনি কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে ভোটাররা শঙ্কায় রয়েছেন। যিনি নির্বাচিত হোন না কেন, তিনি নগরীর উন্নয়ন করবেন, কিন্তু তার আগে মানুষ যেন ভোট দিতে পারে।