সাক্ষাৎকার
নীতি-সহায়তা অব্যাহত রাখা জরুরি

মো. তানভীর রহমান চিফ বিজনেস অফিসার ওয়ালটন এয়ারকন্ডিশনার
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪ | ২৩:৫৫
সমকাল: গরমের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে কি এসির চাহিদা বেড়েছে?
তানভীর রহমান: অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর গরমের তীব্রতা বেশি। মাঝেমধ্যেই প্রচণ্ড গরমে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। প্রচণ্ড গরম থেকে স্বস্তি পেতে এ বছর অনেকেই এসি কিনছেন। অন্যান্য বছরে দেশের এসি বাজারে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ
হারে প্রবৃদ্ধি হলেও এ বছর তীব্র তাপদাহে প্রবৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশের বেশি হবে।
সমকাল: আপনাদের ব্র্যান্ডের এসির বিশেষত্ব কী?
তানভীর রহমান: ওয়ালটন এসির
বিশেষত্ব হচ্ছে ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইনভার্টার প্রযুক্তিসহ বিশ্বের সর্বাধুনিক ফিচারের ব্যবহার, আন্তর্জাতিক মানের, পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও দামে সাশ্রয়ী হওয়া, মডেলের ভিন্নতা এবং দেশব্যাপী বিস্তৃত সর্বোচ্চ সংখ্যক সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে দ্রুত বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা ইত্যাদি। বাংলাদেশে একমাত্র ওয়ালটনই ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব এসি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। পরিবেশ সুরক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইউএনডিপির সমন্বয়ে বেশ কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ওয়ালটন এসিতে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্বস্বীকৃত সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব আর-৩২ গ্যাস, যা পরিবেশ সুরক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখে চলছে। ইতোমধ্যে ওয়ালটন এসিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সিএফসি ও এইচসিএফসি গ্যাসের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে ওয়ালটন। ফলে পরিবেশবান্ধব শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র উৎপাদনে ভারত ও চীনের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ওয়ালটনের উৎপাদিত ৯০ শতাংশ এসিই বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে ওয়ালটন যেমন পরিবেশ সুরক্ষায় অবদান রাখছে, তেমনি দেশের উৎপাদিত বিদ্যুতের সুষম ব্যবহারও নিশ্চিত করছে।
সমকাল: ক্রেতাদের অনেকে বলছেন, এসির দাম অনেক বেড়েছে। এর কারণ কী?
তানভীর রহমান: এসির বেসিক কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। সাম্প্রতিককালে বিশ্ববাজারে বেসিক কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে ডলারের দাম। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে যে হারে খরচ বেড়েছে, সেই অনুপাতে আমরা কিন্তু এসির দাম বাড়াইনি। বিশেষ কয়েকটি কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে আমরা পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা প্রফিট কমানোর পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে বিকল্প ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহারের মাধ্যমে এসির দাম ক্রেতা সাধারণের হাতের নাগালে রাখার চেষ্টা করেছি।
সমকাল: আপনারা এসি বিক্রিতে ক্রেতাকে কী কী সুবিধা দেন?
তানভীর রহমান: গ্রাহকদের সেরা দামে সেরা মানের এসি দেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তা দিচ্ছে ওয়ালটন। সর্বোচ্চ গুণগত মানের নিশ্চয়তাসহ ওয়ালটন এসিতে গ্রাহকরা পাচ্ছেন এক বছরের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি, কম্প্রেসরে ১০ বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি, তিন বছরের স্পেয়ার পার্টস ওয়ারেন্টি এবং ফ্রি ক্লিনিং সার্ভিস। এ ছাড়া বাংলাদেশে আইএসও সার্টিফায়েড সর্ববৃহৎ সার্ভিস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ৮০টিরও বেশি সার্ভিস পয়েন্টের আওতায় তিন হাজার পাঁচশরও বেশি সার্ভিস পার্টনারের মাধ্যমে গ্রাহকদের দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ওয়ালটন।
অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি দেশব্যাপী ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন-২০-এর আওতায় ওয়ালটন এসি কিনে ‘ননস্টপ মিলিয়নেয়ার’ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ক্রেতারা। রয়েছে কোটি কোটি টাকার নিশ্চিত উপহার। ইতোমধ্যে ওয়ালটন ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে এসি কিনে মিলিয়নেয়ার হয়েছেন বেশ কয়েকজন ক্রেতা।
সমকাল: এসির রপ্তানি সম্ভাবনা কেমন? আপনাদের এ বিষয়ে কী পরিকল্পনা রয়েছে?
তানভীর রহমান: ওয়ালটনের তৈরি আন্তর্জাতিক মানের এসি এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। স্থানীয় বাজারের মতো আন্তর্জাতিক বাজারেও ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত এসির শক্তিশালী অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বের বাজারে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছি আমরা। সে জন্য গঠন করেছি সুদক্ষ ও চৌকস গ্লোবাল বিজনেস টিম। পাশাপাশি কয়েকটি দেশে সাবসিডিয়ারি ও শাখা অফিস স্থাপন করেছি। এ ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ায় স্থাপন করেছি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার। সেখানে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের উদ্ভাবনী পণ্যের পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড, আবহাওয়া, ক্রেতাদের চাহিদা ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সমকাল: সরকার নতুন বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বাজেটে আপনারা কী চান?
তানভীর রহমান: দেশীয় এসি উৎপাদন শিল্পের দ্রুত বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সরকারের নীতি সহায়তা। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া নীতি সহায়তাকে আমরা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশে এ শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটিয়েছি। ওয়ালটনসহ যেসব কোম্পানি এগিয়ে এসেছে, তাদের প্রচেষ্টার ফলে এ খাত এখন ভালো অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। এসি আগে পুরোটাই আমদানিনির্ভর ছিল। আমদানিনির্ভর এ খাত এখন স্থানীয় উৎপাদন নির্ভরতায় চলে এসেছে। পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। সুতরাং এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের বিদ্যমান পলিসি সাপোর্ট অব্যাহত রাখা জরুরি। একই সঙ্গে পলিসিগত কিছু পরিবর্তনও দরকার। যেমন– এনার্জি এফিসিয়েন্সি পণ্য উৎপাদনে আরও বেশি প্রণোদনা দেওয়া উচিত। ওয়ালটনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে ভিআরএফ ও চিলার কমার্শিয়াল এসি উৎপাদনকারী নবম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু বিদ্যমান পলিসিতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। এখনও ভিআরএফের মতো উচ্চ প্রযুক্তির এসি উৎপাদনের কিছু কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক দিতে হচ্ছে। ফলে উচ্চ প্রযুক্তির ভিআরএফ এসি আমদানির তুলনায় দেশে উৎপাদনে খরচ বেশি পড়ছে। এ দিকটিতে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। আমদানিকারকদের চেয়ে যেন স্থানীয় শিল্প বেশি সুবিধা পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে কমার্শিয়াল এসিতে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানিমুখী হতে পারে বাংলাদেশ।
- বিষয় :
- সাক্ষাৎকার