সাত দিনের কথা বলে ৭ বছর

মাদারীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ২১:১৪ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ০৩:৫০
পল্লী শ্রী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজটি মাদারীপুর জেলার একমাত্র স্বতন্ত্র বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ। কলেজটির বয়স ১৮ বছর। মাত্র সাত দিনের কথা বলে ২০১৬ সালে ক্যাম্প স্থাপন করে পুলিশ। অধ্যক্ষের কক্ষও দখল হয়ে গেছে। সাত বছর ধরে চলছে এ অবস্থা। দিন দিন কমে বর্তমানে কলেজটিতে শিক্ষার্থী দাঁড়িয়েছে ১৫ জনে।
প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও স্থানীয়দের দাবি, পুলিশ থাকার কারণে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না কলেজে। তবে পুলিশের ভাষ্য, শিক্ষার্থী না থাকার কারণে ক্যাম্প রাখা হয়েছে।
জানা যায়, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দিতে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় কলেজটি। শুরুতে বেশ সাড়া ফেলে কলেজটি। একসময় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। ছিল হোস্টেলও। সুনামের সঙ্গে কারিগরি শিক্ষায় অবদান রাখতে শুরু করে কলেজটি।
২০১৬ সালের শেষের দিকে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের দ্বন্দ্বের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সংঘাত ঠেকাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ থাকার ব্যবস্থা করতে তৎক্ষণাৎ কলেজটি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, কলেজে ক্যাম্প হওয়ার পরে বিদ্যুৎ বিল কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সেই বিল গুনতে হয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে বছরের পর বছর ধরে। পুলিশ সদস্য থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্যাম্পটি।
শিক্ষার্থী টুম্পা জানায়, কলেজে ক্লাস করার মতো কোনো পরিবেশ নেই। পুলিশ সদস্যরা ঘোরাফেরা ও মাতামাতি (হইচই) করে। মেয়েদের নানা কথা শুনতে হয়। কলেজে শিক্ষার পরিবেশ করে দিতে সরকারের কাছে দাবি তার।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রবীণ মণ্ডল বলেন, ‘এক সপ্তাহের কথা বলে কলেজে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সাত বছর হয়ে গেলেও ক্যাম্প সরানোর উদ্যোগ নেই। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েও সমাধান হয়নি। অনুকূল পরিবেশ না থাকার কারণে শিক্ষার্থী কমে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। কলেজটি এখন ধ্বংসের পথে। সরকারের কাছে দাবি জানাই, প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কলেজটি যেন এমপিওভুক্ত বা জাতীয়করণ করা হয়। ক্যাম্পটি অন্যত্র স্থাপন করা হোক।’
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। তাদের (পুলিশ) জন্য অন্য কোনো জায়গার ব্যবস্থা করা যেত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যেন ধ্বংস হয়ে না যায় তার জন্য প্রশাসনের সচেতন হওয়া উচিত এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিবচর ও রাজৈর সার্কেল) রাব্বি হোসেন বলেন, তিনি ক্যাম্পটি পরিদর্শন করেছেন। কলেজটিতে শিক্ষার্থী না থাকায় ক্যাম্প এতদিন রাখা হয়েছে। ক্যাম্প সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান দেওয়া হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, লিখিত অভিযোগ পাননি তিনি। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের আপত্তি আছে, অবশ্যই এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার মানুষ বা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হোক তা তারা চান না।
জেলা প্রশাসক মারুফুর রশীদ খান বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। তিনি যোগদানের পরে কেউ বিষয়টি নিয়ে তাঁর কাছে আসেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন।