ফুটবলে টিনএজ শব্দটার একটা সমার্থক বোধ হয় সাহস আর আত্মবিশ্বাস। যে বয়সে ফুটবলটা সবাই উপভোগ করে, নায়ক হতে চায়- তা সেই উনিশের এমবাপ্পে বিশ্বকাপ জিতেছেন রাশিয়ায়, এবার তেইশের এমবাপ্পের সামনে কাতার। টিনএজারের আত্মবিশ্বাসটাই তো তাঁকে এবার স্পর্ধা হয়ে ভর করেছে ফরাসি এই ফরোয়ার্ডের পায়ে। তিনি কি পারবেন পেলের মতো কম বয়সে টানা দুটি বিশ্বকাপ জিতে রাজকুমার থেকে রাজা হতে। একুশের পেলে ১৯৬২ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। বিশ্বকাপের আগে এমবাপ্পেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন পেলে। তবে গতকাল পর্যন্ত তাঁর ইনস্টাগ্রাম থেকে এমবাপ্পেকে হ্যাশট্যাগ করে কিছু আসেনি। আসলে শরীরটা ভালো না থাকায় হয়তো করতে পারেননি।

তবে পেলের উত্তরসূরি হিসেবে নিজের জায়গাটি পাকা করতে আজকের ম্যাচে এমবাপ্পের এই তেইশের ভয়ডরহীন মনোভাবটাই চাইছে ফ্রান্স। বিদ্যুৎগতির সময়েও বলটা আঠার মতো পায়ে লেগে থাকে তাঁর। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ৫ গোল করে গোল্ডেন বুট পুরস্কারের দাবিদার তিনি মেসির সঙ্গে। সেই সঙ্গে টুর্নামেন্ট-সেরা খেলোয়াড় হিসেবে 'গোল্ডেন বল'ও হাতে পেতে পারেন। আর এসব পেয়ে গেলে তাঁর ব্যালন ডি'অর পুরস্কারও কেউ ঠেকাতে পারবে না। একসঙ্গে এত কিছু অর্জনের জন্য তাঁকে যে আজ সতীর্থর সঙ্গে লড়াইয়েই মাঠে নামতে হবে। প্যারিসে যে মেসির সঙ্গে একই জার্সিতে অনুশীলন করেন, আজ সেই তাঁকেই হারাতে হবে। লোকে বলছে, ম্যাচটি হবে বছর পঁয়ত্রিশের অভিজ্ঞ জাদুকর মেসির সঙ্গে তেইশের টগবগে গতির সঙ্গে। পিএসজির সাবেক কোচ একবার প্যারিসের এক কাগজে এমবাপ্পেকে দেখিয়ে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'এই বয়সে যে কোনো কিছু জয় করা সম্ভব। যদি তুমি তাকে বল বাড়িয়ে দাও, তখন সে মনে করবে যে কোনোভাবেই গোল করা যায়। এই এমবাপ্পে অনেক কিছুই করে দেখাতে পারবে।' ফরাসি কোচ দেশম জানেন, তাঁর দলের এই 'ইয়াং গান'কে নিয়ে আর্জেন্টাইনরা অনেক পর্যবেক্ষণ-বিশ্নেষণ করছেন। কিন্তু তার পরও এই এমবাপ্পেকে আটকে রাখাই হবে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ। বড় লক্ষ্যের আগে নিজেকে যে শান্ত রাখেন আপন ভুবনের মধ্যে থেকে। বিশ্বকাপ শুরুর পর ফিফার নিয়ম থাকলেও মিডিয়ার সামনে আসেননি এমবাপ্পে। গতকাল দেশম অনুরোধ করেছেন এই ব্যাপারটি কেউ খারাপভাবে না নিতে। 'সে মিডিয়ার সামনে মাঝেমধ্যে আসে। আসলে সে বড় একটি লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। এ সময়ে সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে রেখে ঠান্ডা মাথায় মাঠে নামতে চাইছে সে। আমিও চাই না, কোনো কিছুর কারণে তাঁর মনঃসংযোগ ব্যাহত হোক।'

এমনিতেই ছয় মাস আগে ব্রাজিলের এক টেলিভিশনে লাতিন ফুটবল নিয়ে বলা একটি মন্তব্য নিয়ে আর্জেন্টাইন মিডিয়া ফাইনালের আগে বেশ জল ঘোলা করছে। যেখানে এমবাপ্পে বলেছিলেন, 'লাতিনের চেয়ে ইউরোপের ফুটবল অনেক এগিয়ে। গত কয়েকটি বিশ্বকাপ কারা জিতেছে দেখুন, তাতেই প্রমাণ মিলবে।' এই কথা নিয়ে গতকালও আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের সামনে তুলেছিলেন কেউ কেউ। মার্টিনেজ অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছোড়ার মতোই বক্তাকে অপেক্ষায় থাকতে বলেছেন।