ক'দিন ধরেই আধফোটা চাঁদ আলোয় ভিজিয়ে রেখেছে মরুকে। এক মায়াবী ভালোবাসায় ডুবে আছে দোহার রাত্রিগুলো। সায়াহ্নের শেষে এসে কি গায়ে দাগ নিয়ে এই আধফোটা চাঁদ হয়েই থাকবেন মেসি, নাকি সূর্যের মতো দীপ্ত হয়ে থাকবেন ফুটবলের হৃদয়ে! বিশ্বকাপে আজই তাঁর শেষ ম্যাচ। অন্তিম এই ৯০ মিনিটের প্রতিমুহূর্ত তাঁর জন্য মহার্ঘ্য। তাঁর এই অমরত্ব পাওয়ার প্রার্থনায় বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত আজ তাকিয়ে থাকবে লুসাইলে। তিনি কি পারবেন ম্যারাডোনার মতো বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে অমন একটি সোনালি ফ্রেমের ছবি তোলার সুযোগ করে নিতে?

রোজারিওতে তাঁর স্কুলের শিক্ষিকা মনিকা ডমিনা হাতে লেখা চিঠিতে ছাত্রকে এই যুদ্ধে সাহস দিয়েছেন। লিখেছেন, মৃত্যুর আগে একবার অন্তত তাঁর ছাত্রকে বুকে জড়িয়ে ধরতে চান। আর্জেন্টিনার ন্যাশনাল নিউজ চ্যানেলের এক নারী সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে বলেছেন, আপনার জার্সি গায়ে জড়িয়ে আপনার খেলা দেখে ক্ষুধা পেটেও যে বাচ্চারা রাতে ঘুমাতে যায়, বিশ্ব্বকাপ না জিতলেও আপনি তাদের কাছে সর্বকালের সেরা। কাতারে আসা আর্জেন্টাইন সাংবাদিকদের কাছ থেকে শোনা, ফাইনালের আগে এই দুটি খবরই নাকি মেসিকে খুব স্পর্শ করেছে। আর মেসি নিজেও জানেন, এই ভালোবাসার জায়গা তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন ভক্তরা তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ হতে দেখবেন। এই যে সাতবারের ব্যালন ডি'অর, চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়, বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল পুরস্কার, কোপা আমেরিকা জয়; সব শুনেও লোকে বলবে- বিশ্বকাপটি কোথায়? তাই আজকের এই রাতে সোনালি ট্রফিটাই তাঁর আরাধ্য। ১৯৮৬-এর ম্যারাডোনার মতো একটা জাদু এবং তাঁর সঙ্গে ভাগ্যও যেন মেসির মধ্যে এবার দেখা যাচ্ছে। '৮৬-তে ম্যারাডোনা নকআউট পর্ব থেকেই নিজেকে মেলে ধরেছিলেন বেশি। ১৯৯০ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ হেরেও ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। এবারও অনেকটা সেই পথেই এগিয়েছেন মেসিরা।

সারা বিশ্বের সমর্থককুল যে মেসির হাতেই আজ বিশ্বকাপ দেখতে চায়, সেটা জানা আছে ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশমেরও। 'জানি, সারা বিশ্বের অনেক সমর্থক চাইছে আজ মেসির হাতেই বিশ্বকাপ উঠুক। এমনকি ফ্রান্সেরও অনেকে সেটা চাইছেন। তবে আমরা জয়ের জন্য সব চেষ্টা চালিয়ে যাব।' তবে তাঁর পাল্টা আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকও এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। 'লোকে তো আগে ব্রাজিলকেও এই বিশ্বকাপের ফেভারিট বলেছিল। এখন ফাইনালে ফ্রান্সকে বলছে, তাদের বলতে দিন। মনে রাখবেন, আমাদের হাতে ফুটবলের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় মেসি রয়েছেন। তাঁর মধ্যে আমি সেই উচ্ছ্বাসটা দেখছি, যা কোপাতে দেখেছিলাম।' ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে যেদিন মেসি কেঁদেছিলেন, সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে বার্বিকিউ করে খেলা দেখতে বসা মার্টিনেজও চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। গতকাল সে গল্প বলতে বলতেই শোনালেন রাশিয়া বিশ্বকাপে টিকিট কেটে গ্যালারিতে খেলা দেখেছিলেন, আর এবার মেসির পাশে থেকেই তাঁর স্বপ্ন পূরণ করবেন।