- বিশেষ সমকাল
- জীবনযাপনে ক্রেডিট কার্ড এখন নিত্যসঙ্গী
সাক্ষাৎকার
জীবনযাপনে ক্রেডিট কার্ড এখন নিত্যসঙ্গী

মো. শরিফ আল কাশেম , ইভিপি ও হেড অব কার্ডস , এসবিএসি ব্যাংক
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আর্থিক খাত অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। আমাদের লেনদেন ব্যবস্থায় যা আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে নির্দিষ্ট ব্যাংকিং কর্মঘণ্টার জন্য এখন আর কাউকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। তৈরি হয়েছে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা সেবা গ্রহণের সুযোগ। গ্রাহকদের আর্থিক প্রয়োজনে বিপদের বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ড হয়ে উঠেছে নিত্যসঙ্গী। এতে ব্যাংক ও গ্রাহক দুই পক্ষেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি সমকালের সঙ্গে আলাপচারিতায় সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কার্ড ডিভিশনের প্রধান মো. শরিফ আল কাশেম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক এখনও ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে রয়েছে। তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সময়সাধ্য। বাংলাদেশ ব্যাংক এই জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আনার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনে জোর দিয়ে আসছে, যা তুলনামূলক ব্যয় সাশ্রয়ী এবং স্বল্প সময়ে করা সম্ভব। চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এসবিএসি ব্যাংক ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যাংকটি এটিএম, সিডিএম, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা ‘বাংলাপে’-এর মাধ্যমে গ্রাহকদের ডিজিটাল সেবা প্রদান করে আসছে। ব্যাংকগুলোতে ক্রেডিট কার্ডে যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলো এসবিএসি ব্যাংকেরও আছে। প্রকৃতপক্ষে সব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের ফিচার প্রায় কাছাকাছি। পার্থক্যটা মূলত সেবা, পরিধি ও আন্তরিকতায়। এসবিএসি ব্যাংকের কার্ডের যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে– নির্দিষ্ট শপ থেকে ইনস্টলমেন্টে কেনাকাটা, বিশেষ ডিসকাউন্ট, ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য কিস্তিতে পরিশোধ ইত্যাদি। এগুলো লয়্যালটি প্রোগ্রামের আওতায়। তাছাড়াও দেশের বাইরে গিয়ে শপিং করা, হোটেল বুকিং, এয়ারলাইন টিকিট পারচেজ, ই-কমার্স ট্রানজেকশন– সবই করা যায় এই কার্ডে।
মো. শরিফ আল কাশেম বলেন, তাঁদের কার্ডের বিশেষ একটা ফিচার আছে, যেটা অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা, যেটা গ্রাহকদের কমফোর্ট দেওয়ার জন্য মূলত করা হয়েছে। সেটি হলো আপনার কার্ডে যে ব্যালান্স আছে সেটি ফান্ড ট্রান্সফার করে কার্ড চেকের মাধ্যমে অথবা ই-মেইল রিকোয়েস্টের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে উপভোগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের জন্য সুদমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে। এ সুবিধায় একটা প্রসেসিং ফি আছে। সাধারণত অধিকাংশ ব্যাংক এ সুবিধা প্রদানে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ চার্জ নিলেও এসবিএসি ব্যাংক একেবারে সর্বনিম্ন ভ্যাটসহ ১ শতাংশ হারে নিয়ে থাকে। এই বাড়তি সুবিধার জন্য অনেকেই এই ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করেন। এটিকে ইউনিক বলতে পারেন।
তিনি বলেন, প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সে বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে তাঁরা সর্বাধিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে ইএমভি প্রযুক্তির ‘চিপ’ কার্ড গ্রাহকদের দিচ্ছেন। কার্ড মাল্টিফ্যাক্টর অথেনটিকেশনসহ ই-কমার্স ট্রানজেকশনে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) ব্যবহার করা হচ্ছে। উপরন্তু প্রতিটি লেনদেনে গ্রাহকদের এসএমএস ও ই- এলার্ট বা ই-মেইল নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। যাতে করে গ্রাহকরা লেনদেনে যথার্থতা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি জাল-জালিয়াতি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন।এখন ধরুন, কেউ ট্রানজেকশন করেননি, কিন্তু তিনি একটি ট্রানজেকশন এসএমএস পেলেন, তাহলে বুঝতে হবে এটি একটি ফ্রড ট্রানজেকশন। সেক্ষেত্রে তিনি সতর্ক থাকবেন এবং ব্যাংককে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করবেন। ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাছাড়া বিশেষ বিশেষ সময়ে যেমন ঈদের ছুটি বা যে কোনো উৎসবে আগেই গ্রাহকদের জানিয়ে দেওয়া হয় যে, আপনি যদি ট্রানজেকশন এসএমএস পান অথচ ট্রানজেকশন করেননি তাহলে সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন। তাছাড়াও গ্রাহকসেবার বিশেষ ইউনিট লেনদেন পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
ক্রেডিট কার্ডের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে মো. শরিফ আল কাশেম বলেন, আমরা তো এখন ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে যাচ্ছি। সেখানে কার্ড তো অনেক আগে থেকেই একটি জায়গা করে নিয়েছে। ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন যেটি এখন চলছে সেটিতে ব্যাংকগুলো কিন্তু কার্ডের মাধ্যমেই ডিজিটালে এসেছে। কার্ড আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে হ্যাঁ, এখন যেমন প্লাস্টিকের কার্ড সামনে হয়তো সেটি থাকবে না। পরিবর্তন হবে। তবে কার্ডের যে কনসেপ্ট সেটি থেকে যাবে। এখন বিকাশ, নগদ বা রকেট আছে। সেটি ডেবিটবেইজড। মানে আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা থাকতে হবে। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড ক্রেডিটবেইজড। মানুষ কিন্তু নগদ টাকা খরচ করতে চায় কম। আপনি যদি তাকে একটি ক্রেডিট লাইন দেন, তাহলে তিনি খরচ করবেন। এখন এই ক্রেডিট কার্ড ফিচারটাকে যদি ফুল ডিজিটালে নিয়ে যেতে পারেন, মানে প্লাস্টিকের কার্ডের বদলে ফুল ওয়ালেটে চলে যাবে তখন কিন্তু ফিচারটা আরও বাড়বে। মানুষের ব্যবহারও বাড়বে।
তিনি বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে গ্রাহকের সচেতনতা জরুরি। আপনি সীমার মধ্যে খরচ করলে, কেনাকাটা করলে মাস শেষে বেতন পেয়ে দিয়ে দিতে পারছেন। এখন হয়তো বলবেন ইন্টারেস্ট নিয়ে। হ্যাঁ, সাধারণত আমরা ব্যাংক থেকে যে লোন নিয়ে থাকি সেটির চেয়ে এটির সুদ একটু বেশি। কিন্তু ইন্টারেস্ট হাই কেন? সেটির কারণ আপনাকে যে ৪৫ দিনের সুদ ছাড়া সুবিধাটা দিলাম এটির জন্য তো ফান্ডের একটি কস্ট আছে। আপনি সেটি ৪৫ দিন ওভার করলে নিশ্চয় সেই কষ্টটা বহন করতে হবে! অনেক গ্রাহক আছেন, যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে দেয়। ব্যাংক তো তাদের কাছ থেকে কোনো আয় করতে পারে না। ব্যাংকারদের জায়গা থেকে দেখলে ক্রেডিট কার্ড একটি অনিরাপদ প্রোডাক্ট। এখানে টাকা রিকভারি না হওয়ার একটা ঝুঁকি থাকে। যেহেতু কোনো জামানত নেওয়া হয় না। সেহেতু অনেক সময় টাকাগুলো অনাদায় থেকে যায়। এতে ব্যাংক লস করে।
তিনি জানান, ক্রেডিট কার্ডকে ফুল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করবেন তারা। এখন নতুন করে কন্ট্রাক্টলেস কার্ড এসেছে। সেটি নিয়েও পরিকল্পনা আছে। তাছাড়া ভার্সেটাইলভাবে সাধারণ মানুষের কাছে কীভাবে পৌঁছানো যায় সে বিষয়েও কাজ করবেন। শুধু ঢাকা-চট্টগ্রামকেন্দ্রিক নয়, অন্য শহরগুলোতেও তারা কার্ড হোল্ডার বাড়াবেন। কিছুদিন আগে ডিজিটাল অ্যাপ করা হয়েছে। ডিজিটাল ওয়ালেট যেটি সেখানে সব ধরনের কার্ড যুক্ত করা যাবে।
মন্তব্য করুন