কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউ অটোরিকশা চালক, কেউ দোকানের কর্মচারী, আবার কেউ অফিসের পিয়ন। তবে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা থেকে চাঁদ উদ্যান এলাকা পর্যন্ত লোকজন তাদের চেনে কিশোর গ্যাং সদস্য হিসেবে। তাদের গ্রুপের নাম ‘ভাইব্বা ল কিং’। এই চক্রের ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য দিনে অলিগলিতে মহড়া দেয়, রাতে নামে ছিনতাইয়ে।

গত সোমবার এক দম্পতি এই চক্রের হাতে ছিনতাইয়ের শিকার হন। পরে অভিযোগ পেয়ে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-২ এর সদস্যরা ওই গ্রুপের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই বেরিয়ে আসে এদের অপকর্মের তথ্য।

গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের বয়স ১৮ বছরের নিচে। অপর ছয়জন হলেন, গ্যাং লিডার শরীফ ওরফে মোহন (১৮), মো. রুমান (১৮), মো. উদয় (১৯), মো. শাকিল (১৯), মো. নয়ন (১৮) ও মো. জাহিদ (১৮)। তাদের কাছ থেকে ছয়টি ছুরি, কুড়াল, ৫০ পুরিয়া গাঁজা, হোল্ডিং চাকু, খেলনা পিস্তল, ৬৫ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম এবং তিনটি মোবাইল জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার ওই নয়জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সোমবার রাত ৯টায় ঢাকা উদ্যানের সামন থেকে র‌্যাব-২ এর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন করে ছিনতাইয়ের খপ্পরে পড়ার তথ্য জানিয়ে সহযোগিতা চান এক দম্পতি। এরপর দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় র‌্যাবের দল। ঘটনাস্থল ও আশপাশ থেকে ছিনতাইয়ে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। ওই রাতেই চাঁদ উদ্যান সংলগ্ন সাত মসজিদ হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং চক্রটির লিডার মোহনসহ আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তাররা ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের সদস্য। মোহনের নেতৃত্বে দুই থেকে তিন বছর আগে গ্যাংটি গঠন করা হয়। এরা মোহন সিন্ডিকেট নামেও পরিচিত। এ গ্রুপের সদস্যরা আগে ‘লেবেল হাই গ্যাং’-এ অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা পরে পাঁচ থেকে ছয়টি গ্রুপে বিভক্ত হয়। এরা ফেসবুক ও টিকটকেও সক্রিয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চক্রটি ফেসবুকে আপত্তিকর কথা ও অস্থিরতা ছড়াত। দুই থেকে তিন বছর ধরে চক্রটি মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চুরি-ডাকাতি ও আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল। তারা ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে হুমকি ও মারপিটে অংশ নিত। এছাড়া ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, এই চক্রটির পেছনে কোনো পৃষ্ঠপোষক রয়েছে কি-না, তা তদন্ত করা হচ্ছে। থাকলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।