- অন্যান্য
- টাকার অভাবে সফর বাতিল, মন খারাপ নারী ফুটবলারদের
অলিম্পিক বাছাই
টাকার অভাবে সফর বাতিল, মন খারাপ নারী ফুটবলারদের

দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি ছাপিয়ে স্বপ্ন যখন বিশ্বমঞ্চে, তখনই জোর একটা ধাক্কা খেলেন সাফজয়ী নারী ফুটবলাররা। টাকার অভাবে প্যারিস অলিম্পিক ফুটবল বাছাই পর্বে খেলা হচ্ছে না সাবিনা-কৃষ্ণাদের। ৫ এপ্রিল থেকে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ে এশিয়ান পর্বে ‘বি’ গ্রুপে স্বাগতিক মিয়ানমার, ইরান ও মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের। এই সফরের জন্য গেল কয়েক মাস ক্যাম্পে থেকে দু’বেলা অনুশীলনও করেছেন তাঁরা। কিন্তু দুদিন আগে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মিয়ানমার যাওয়া হবে না তাঁদের। ‘ভীষণ খারাপ লাগছে। কিছুতেই মন বসছে না। স্বপ্ন ছিল অলিম্পিকের এই বাছাই পর্ব খেলে পরের রাউন্ডে যাব। শুনেছি, টাকার অভাবে খেলতে পারছি না আমরা। জানি না, সামনে কী হবে।’ নাম না ছাপার অনুরোধ করেও মন খারাপের ছাপ লুকাতে পারেননি সাফজয়ী এক নারী ফুটবলার।
বিমান টিকিট ২০ লাখ, আর সফরের আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মোট ৫০ লাখ টাকা হলেই মেয়েদের অলিম্পিক যাত্রার প্রথম পর্বটা সম্পন্ন হতে পারত। যেখানে ছেলেদের দলকে সৌদি আরবে ১০ দিনের জন্য ট্রেনিংয়ে পাঠিয়ে কোটি টাকার ওপর খরচ করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), সেখানে মেয়েদের এই সফরের জন্য কি ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকা খরচ করতে পারত না বাফুফে? ফিফা থেকেও তো নারী ফুটবলারদের উন্নয়নের জন্য অর্থ আসে, সেখান থেকেও কি সফরের টাকা জোগাড় সম্ভব ছিল না? তুলনা নয়, তবে এমন একটি আফসোস রয়েছে নারী ফুটবলারদের মধ্যে। ছেলেরা যেখানে সিশেলসের মতো ১৯৯ র্যাঙ্কিংয়ের কাছে হারছে ঘরের মাঠে, সেখানে নারী ফুটবলাররা সাফল্য এনে দিচ্ছেন প্রতিটি আসরে? তাহলে কি নারী দল নিয়ে অবহেলা রয়েছে বাফুফের? ‘একেবারেই তা না’– উত্তর বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের। তিনি বরং দুঃখ করলেন ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক সহায়তা না পাওয়ার। ‘বিভিন্নভাবে টাকা জোগাড় করার জন্য আমরা ফুটবল ফেডারেশন থেকে চেষ্টা করেছি; কিন্তু টাকা ম্যানেজ করতে পারিনি। তার পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেও আমার চিঠি দিয়েছি, এই টুর্নামেন্টে যাওয়ার জন্য আমাদের টাকা দরকার। সেখান থেকেও আসলে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি। যেহেতু এটা টাকার ব্যাপার, অন্যকিছু দিয়ে হবে না, সেহেতু সম্ভব হয়নি।’
তবে বাফুফে কর্তাদের দেওয়া বক্তব্যে সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, ‘এক সপ্তাহও হয়নি তারা অর্থ চেয়েছে। সবকিছুর জন্য সময় দরকার। সরকারি নিয়মনীতি মেনেই অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। আপনাকে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে, সময় না দিলে তো সেটা সম্ভব নয়।’ মন্ত্রীর এমন মন্ত্যবের উল্টো সুর কিরণের, ‘তিনি (যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী) যদি আশ্বাসও দিতেন, তখনও তো কিছু একটা হতো। তিনি যদি বলতেন, আপনারা শুরু করেন আমরা ব্যবস্থা করছি, সেটাতোও হতো, সেটাও হয়নি।’ এখন তো স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট মেয়েদের। সবারই মন খারাপ। এটা উপলব্ধি করলেও মাহফুজা আক্তার কিরণ যেন দায়টা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেই দিচ্ছেন, ‘মন খারাপের ব্যাপারটা আমরাও অনুভব করছি। এখন আমার কাছে যদি টাকা না থাকে, তাহলে আমি কী করব। শুনেন ফুটবল করতে হলে সরকারিভাবে সহযোগিতা লাগবে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় যদি সহযোগিতা না করে,সেটা তো হবে না। এটা নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
মূলত কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে সেটার খরচ বহন করে স্ব স্ব সংস্থা। কিন্তু অলিম্পিক বাছাইটি এএফসির সাধারণ সূচির বাইরে। তাই মিয়ানমারে খেলতে গেলে খরচটা বাফুফেকেই ব্যবস্থা করতে হতো। সম্প্রতি বাফুফের প্রস্তাবিত ৪৫০ কোটি টাকার বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নাকচ হওয়ার পরই বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কোষাগারে টান পরবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। খরচ কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আর সেই খরচ কাটছাঁটের প্রথম কোপই কিনা পড়ল নারী ফুটবলারদের মিয়ানমার সফর বাতিল করে। নারী জাতীয় দলকে মিয়ানমার পাঠানোর জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের কাছেও সহযোগিতা চাইতে পারত। কারণ, মেয়েদের লিগের পৃষ্ঠপোষক এবং ক্যাম্পের কিছু খরচও বহন করছে বসুন্ধরা। ফুটবল আঙ্গিনায় গুঞ্জন আছে, স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে বসুন্ধরাকে পৃষ্ঠপোষক হওয়ার প্রস্তাব দেয়নি বাফুফে।
মন্তব্য করুন